বুধবার ইউক্রেনে হামলা চালাবে রাশিয়া
বুধবার রাশিয়া আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হিসাবে ইউক্রেনকে বেছে নিতে পারে বলে জার্মান সরকারকে দেওয়া দেশটির গোয়েন্দাদের সতর্কবার্তা দেশটির সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) একটি জার্মান সংবাদমাধ্যম গোয়েন্দাসূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে বুধবারে (১৬ ফেব্রুয়ারি) দেশটিতে হামলা চালাতে পারে রাশিয়া। খবর জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে বাংলা।
তবে জার্মান সরকার এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসও এ খবরের সত্যতা স্বীকার করেনি। তবে যুদ্ধের আশঙ্কা যে বৃদ্ধি পেয়েছে, তা জার্মানি, ন্যাটো, অ্যামেরিকার মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট। রবিবার জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস ফের রাশিয়াকে বড়সড় নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: করোনায় মৃত্যু কমে ১৯, আজও শনাক্ত পাঁচ হাজারের নিচে
সোমবার ইউক্রেনে গিয়ে দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা শলৎসের। বস্তুত, ইউক্রেন জার্মানির কাছে ফের অস্ত্রসাহায্য চেয়েছে। জার্মানি এখনো তাদের তা দিতে অস্বীকার করেছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই এদিন দুই দেশের বৈঠক হওয়ার কথা। সব ঠিক থাকলে মঙ্গলবার মস্কোয় যাওয়ার কথা শলৎসের। সেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে তার বৈঠক হওয়ার কথা।
সফর শুরুর আগে শলৎস জানিয়েছেন, রাশিয়া আগ্রাসন দেখালে বড়সড় নিষেধাজ্ঞার সামনে তাদের পড়তে হবে। সে কথা মাথায় রেখে যেন রাশিয়া যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়। বস্তুত, শলৎস মস্কো গেলেও পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে মনে করছেন না কূটনীতিকরা। জার্মান প্রশাসনের একটি সূত্রও ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে, মস্কোর সঙ্গে বৈঠক নিয়ে জার্মানি খুব আশাবাদী নয়। যদিও এর আগে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ জানিয়েছিলেন পুটিন আলোচনার প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: সাত কলেজের চূড়ান্ত মেধাতালিকা আজ রাতে
রাশিয়া অবশ্য জানিয়েছে, যুদ্ধের কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। তারা নয়, আগ্রাসন দেখাচ্ছে অ্যামেরিকা এবং ন্যাটোর বাহিনী। প্রয়োজনে রাশিয়া তার জবাব দেবে। অর্থাৎ, যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলেও বল ন্যাটো এবং অ্যামেরিকার কোর্টে রাখতে চাইছে রাশিয়া। বুধবার আক্রমণের বিষয়টিও সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া। তবে হোয়াইট হাউস রোববার দাবি করেছে, এই সপ্তাহের মধ্যেই যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সে কারণেই ইউক্রেন থেকে মার্কিন নাগরিক এবং কূটনীতিকদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ন্যাটোও একই নির্দেশ জারি করেছে।
জার্মান চ্যান্সেলর ফের নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিলেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা জানাননি। অ্যামেরিকা তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, রাশিয়ার বিশাল ব্যংকিং ব্যবস্থার উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। যার জেরে রাশিয়ার অর্থনীতি সমস্যার মুখে পড়বে। একই সঙ্গে ন্যাটো জানিয়েছে, নর্ড স্ট্রিম ২ এর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হবে। জার্মানিতে গ্যাস পাঠানোর জন্য নর্ড স্ট্রিম ২ পাইপলাইন তৈরি করে ফেলেছে রাশিয়া। জার্মানি সম্মতি দিলেই তারা গ্যাস পাঠাতে শুরু করবে। নর্ড স্ট্রিম ২ এর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হলেও বিপুল অঙ্কের ক্ষতি হবে রাশিয়ার।
ইউক্রেনের পূর্ব সীমান্তে উত্তেজনা এখনও চরমে। রাশিয়া সেখানে এক লাখ সেনা মোতায়েন করেছে রেখেছে। সেনা স্ট্যান্ডবাই অবস্থানে আছে। অর্থাৎ, যে কোনো সময় যুদ্ধের জন্য তারা প্রস্তুত। রাশিয়া যেভাবে সেনা সাজিয়েছে, তা আক্রমণের জন্যই বলে মনে করছেন রণনীতি বিশেষজ্ঞরা। ন্যাটো এবং অ্যামেরিকাও পূর্ব ইউরোপের একাধিক দেশে সেনা মজুত করে রেখেছে।
উল্লেখ্য, এর আগে ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সৈন্য সমাবেশের কারণে ইতোমধ্যে সারা বিশ্বজুড়েই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইউক্রেনে যেকোনো মুহূর্তে হামলা চালাতে পারে রাশিয়া। এমন উত্তেজনার মধ্যেই দেশটির নাগরিকদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেন সরকার। গত শনিবার ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানোর পাশাপাশি হামলার বিষয়ে কোনো ধরনের আতঙ্ক না ছড়ানোর পরামর্শও দেওয়া হয়। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, এই মুহূর্তে শান্ত থাকা খুব জরুরি। প্রয়োজন দেশের ভেতরে একতা তৈরি করা। আর অস্থিতিশীলতা ও আতঙ্ক ছড়ায় এমন কাজ এড়িয়ে চলা।