০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:০০

করোনায় স্বামীর মৃত্যু, ৪৬ লাখ টাকা দান করলেন তরুণী

মৌসুমী মোহান্তি  © সংগৃহীত

স্বামীর চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে এক তরুণী সাহায্য চেয়েছিলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সাহায্যও এসেছিলো প্রচুর। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত স্বামীকে বাঁচাতে পারেননি এই নববধূ। বিয়ের মাত্র ছয় মাসেই বিধবা হন তিনি। স্বামীর চিকিৎসার জন্য জমা হওয়া ৪৬ লাখ টাকা তাই তিনি করোনায় আক্রান্তদের জন্য ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের ওড়িশায়। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

ভুক্তভোগী মৌসুমী মোহান্তির স্বামীর নাম অভিষেক। করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় প্রথমে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকরা জানালেন তার ‘এক্সট্রাকর্পোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেনেশন (একমো)’ প্রয়োজন। ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ ছিল না মৌসুমীদের। তাছাড়া ওড়িশায় এই চিকিৎসাও সহজলভ্য ছিল না। কিন্তু একমো-র জন্য এত টাকা পাবেন কোথায়? নেটমধ্যমে সাহায্য চেয়ে আবেদন করেন মৌসুমী। তাতে সাড়াও পেতে শুরু করেন যথেষ্ট। তারপরই অভিষেককে নিয়ে কলকাতায় চলে আসেন চিকিৎসার জন্য। ২০২১ সালের জুন মাস। অভিষেককে বিমানে করে কলকাতায় আনা হয়েছিল। ৮৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই চালানোর পর হেরে যান অভিষেক।

আরও পড়ুন- পূজায় ভারত যাচ্ছে ২০ লাখ কেজির বেশি ইলিশ

মৌসুমী জানান, অভিষেকের চিকিৎসার জন্য ৪০ লাখ রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৬ লাখ টাকা) জমা হয়েছে। এখনও অনেকে সাহায্য করছেন। কিন্তু যার চিকিৎসার জন্য সেই টাকা তিনিই যখন নেই, সেই টাকা অন্য কারও কোভিড চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন মৌসুমী।

তিনি বলেন, ওই সময় যেভাবে মানুষ আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন, আর্থিক সহযোগিতা করেছেন, লকডাউনের কারণে আর্থিক টালামাটাল অবস্থার মধ্যেও যেভাবে তারা এগিয়ে এসেছেন তা সত্যিই অভাবনীয়। আমি কৃতজ্ঞ সেই সকল মানুষের কাছে।

গত ১৭ জানুয়ারি বাবাকে সঙ্গে নিয়ে ভদ্রকের জেলাশাসকের দফতরে যান মৌসুমী। মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ৩০ লাখ রুপি দান করেন। বাকি ১০ লাখ রুপি জেলার রেড ক্রস সোসাইটি-তে দান করে দেন।

বিজ্ঞানে স্নাতক মৌসুমী। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন আমলা হওয়ার। এক স্বপ্ন বিয়ের ছ’মাসের মধ্যেই ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। এখন আমলা হওয়ার স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরেই জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান মৌসুমী। ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন।

মৌসুমীর বাবা চিত্তরঞ্জন মোহান্তি একটি অসরকারি সংস্থার পিওন। তিনি বলেন, “মেয়ে নতুন পথে এগিয়ে যাক। ভদ্রকের জেলাশাসক মৌসুমীকে কাজ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। রাজ্যে এখন পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী আচরণবিধি জারি। তাই নির্বাচন শেষ হলেই মৌসুমীর কাজের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে জানিয়েছেন জেলাপ্রশাসক।