চাকরি ফিরে পেলেন বেলি-ড্যান্স করা সেই মিসরীয় স্কুলশিক্ষিকা
বেলি-ডান্সের একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন মিসরের কায়রোর স্কুলশিক্ষিকা আয়া ইউসুফ। নীল নদে একটি প্রমোদতরীতে সহকর্মীদের সঙ্গে বেলি ড্যান্স করার সময় কেউ একজন গোপনে ডিভিও করে অনলাইনে ছেড়ে দেন। আর এরপর পরই ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসে আয়ার ওপর।
আরও পড়ুন: মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে ঢাবি ছাত্র মাসুদ
চলে যায় স্কুলের চাকরিটা। অনুমতি না নিয়ে ড্যান্স করায় স্বামী তাকে তালাক দেন। তবে খবরটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সমালোচনার মুখে চাকরি ফিরিয়ে দেয় মিসরের শিক্ষা বোর্ড।
ইজিপ্ট ইনডিপেনডেন্টের খবরে বলা হয়েছে, কায়রোর পাশের মনসুরা শহরের একটি স্কুলের আরবি শিক্ষক আয়া ইউসুফ। সেদিন স্কুলের একটি প্রোগ্রাম ছিল। সহকর্মীদের সঙ্গে নীল নদে প্রমোদতরীতে উদযাপনের একপর্যায়ে বেলি ড্যান্স শুরু করেন আয়া। আশপাশে তখন পুরুষ সহকর্মীদের দেখা গেছে। স্কার্ফ ও লম্বা হাতার পোশাকে মাতিয়ে তুলেছিলেন মহল।
আরও পড়ুন: ছাত্রলীগের হল কমিটি দিতে জয়-লেখককে আল্টিমেটাম
আয়া ভেবেছিলেন ঘটনাটিতে নিজেদের মধ্যেই থাকবে। কিন্তু এক সহকর্মী গোপনে নাচের ভিডিও করেন। এতেই ক্ষান্ত থাকেননি, অনলাইনে সেটি আপলোডও করে দেন।
আরব নেট মাধ্যমে গত সপ্তাহে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে মিসরীয় রক্ষণশীলদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়। অনেকে বলছেন, এই আচরণ অত্যন্ত লজ্জাজনক; অনেকে আবার বলছেন, মিসরে শিক্ষা নিম্নমানের হয়ে গেছে।
এর পর পরই আয়াকে দাকাহলিয়া গভর্নরেটের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বরখাস্ত করা হয়। সেখানে কয়েক বছর ধরে শিক্ষকতা করেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: ৭৪ শতাংশেরও বেশি আসন ফাঁকা শাবিপ্রবিতে
চাকরি ফিরে পাওয়ার পর আয়া বলেন, এ ঘটনার পর সারা জীবন নাচ না করার প্রতিজ্ঞা করেছি। একবার তো আত্মহত্যার কথা ভেবেছিলাম।
“এই একটি ভিডিও আমার জীবন তছনছ করে দিয়েছিল। সেদিন কেউ একজন আমাকে অপদস্ত করতে ডিভিওটি এমনভাবে দৃশ্যায়ন করেন, যেখানে আমাকে খুব বাজেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, আমি আসলেই ভুল করেছিলাম। সেদিন অনেক উৎফুল্ল, মিশেছিলাম কিছু অসাধু মানুষের সঙ্গে। তারা আমাকে অপমানিত করেছে। চাকরি হারিয়েছিলাম, নিজের বাড়ি ছাড়তে হয়েছে। আমার অসুস্থ মা আছেন, তার চিকিৎসায় চাকরিটা খুব প্রয়োজন ছিল। এ ছাড়া আমার তিন সন্তান আছে।
আয়া আরও বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত আমাকে নতুন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আশা করছি সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
মিসরে নারী অধিকার কর্মীরা বলছেন, কোনো ভুল করেননি আয়া, সমাজের গোঁড়ামির শিকার হয়েছিলেন তিনি।
ফারাওদের যুগে প্রথম বেলি ড্যান্স দেখা যেত। যদিও জনসমক্ষে বেলি ডান্সের সময় নারীদের তাচ্ছিল্যের চোখে দেখার অভ্যাসটা রয়ে গেছে অনেকেরই।