বিশ্বে সশরীরে পাঠদান চলছে মাত্র ৫৪ শতাংশ স্কুলে
করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে অন্যান্য সেক্টরের মতো শিক্ষাখাতেও লেগেছে বড় ধাক্কা। মহামারীর প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে সরাসরি পাঠদান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বিশ্বের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই। এখন পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় দীর্ঘ ১৯ মাস পর বিশ্বের নানা প্রান্তে ফের শুরু হয়েছে সশরীরে পাঠদান। তবে গ্লোবাল এডুকেশনের সাম্প্রতিক এক জরিপ বলছে, সারা বিশ্বে মাত্র ৫০ শতাংশ দেশে চালু হয়েছে এই সরাসরি পাঠদান প্রক্রিয়া। অন্যদিকে, প্রায় ৩৪ শতাংশ দেশ এখনও মিশ্র পদ্ধতির (দূরশিক্ষণ ও সরাসরি ক্লাস) শিক্ষাকার্যক্রম চালাচ্ছে।
জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বব্যাংক ও ইউনিসেফ যৌথভাবে ওই জরিপটি চালায়। কোভিড–১৯ পরিস্থিতি কাটিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম চালানোর জন্য দুই শতাধিক দেশকে সহযোগিতার লক্ষ্যে এ জরিপ চালানো হয়।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ৮০ শতাংশ স্কুলে নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে ৫৪ শতাংশ স্কুলে শিক্ষার্থীরা সশরীর ক্লাস করছে আর ৩৪ শতাংশ স্কুল চলছে মিশ্র ধারার শিক্ষাপদ্ধতিতে। ১০ শতাংশ স্কুলে চলছে কেবলই দূরবর্তী শিক্ষা কার্যক্রম। আর ২ শতাংশ স্কুলে কোনো ধরনের পাঠদানই চলছে না।
বিশ্বব্যাংকের শিক্ষাবিষয়ক কমিটি সুপারিশ করে বলছে, স্কুলে সশরীর ক্লাস শুরুর আগে দেশের জনগণ ও স্কুলের কর্মীদের পুরোপুরি টিকাদানের কাজ শেষ করতে হবে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে টিকা ছাড়াই নিরাপদে স্কুল খোলার সুযোগ থাকলেও শিক্ষা খাতকে আবারও জাগিয়ে তুলতে যতটা সম্ভব শিক্ষকদের টিকাদানে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কিন্তু গ্লোবাল এডুকেশন বলছে, মাত্র ৫৩ শতাংশ দেশ শিক্ষকদের টিকাদানকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে যেসব স্কুলগুলোতে সশরীর পাঠদান চলছে সেখানে মাস্ক পরা, ভেন্টিলেশন পদ্ধতি, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো সাধারণ ও তুলনামূলক কিছু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ কৌশল ব্যবহার করেছে। তবে বেশির ভাগ দেশই তাদের বিস্তৃত এলাকার স্কুলকে সহসাই টিকা কর্মসূচির আওতায় আনতে পারবে না।
এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাংকের সুপারিশে বলা হয়েছে, সব কর্মীকে টিকার আওতায় না আনা পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে সংক্রমণের ঝুঁকি হয়তো সামান্যই কমবে, তবে শিশুদের জন্য তা হবে বড় ক্ষতির কারণ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্কুল নতুন করে খোলা ও দীর্ঘ মেয়াদে স্কুল বন্ধ রাখার ঝুঁকি মূল্যায়ন করে বিশ্বব্যাংক বলছে, যেসব দেশে স্কুল খোলার আগে প্রতি সপ্তাহে কোভিড আক্রান্ত হয়ে লাখে ৩৬ থেকে ৪৪ জনের কম মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, সেখানে স্কুল খোলার কারণে নতুন করে প্রভাব পড়েনি। এমনকি ছয় সপ্তাহ পরও এ সংখ্যা বাড়তে দেখা যায়নি।
বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২০ সালের শুরুতে বিভিন্ন দেশে কোভিড–১৯ মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর, ভাইরাস সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানতাম। কীভাবে এটি ছড়ায়, কারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হতে পারে ও কীভাবে এর চিকিৎসা করতে হবে - তা নিয়ে কম তথ্যই জানা ছিল। তাই শিশুদের সুরক্ষার জন্য ও রোগের সংক্রমণ কমাতে ১৮৮টির বেশি দেশে স্কুল বন্ধ রাখা হয়।
এক বছর পর ভাইরাস ও রোগ এবং কীভাবে সংক্রমণ কমাতে হবে, সে সম্পর্কে আমরা আরও বেশি করে জানতে পারলাম। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে স্কুল বন্ধ রাখার সুপারিশকে একেবারে শেষ ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহার করতে পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।