সিপিআই ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিলেন কানহাইয়া কুমার
কানহাইয়া কুমার- নাগরিকত্ব আইন তথা এনআরসির বিরুদ্ধে আন্দোলনে ‘আজাদী’ স্লোগান তুলে গোটা ভারতে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে উঠেন। মাত্র ৩৪ বছর বয়সেই জনপ্রিয়তায় অনেক প্রবীণ রাজনৈতিক নেতাকেও ছাড়িয়ে গিয়ে ছিলেন তিনি। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রগতিশীল ও গণতন্ত্রপন্থী তরুণদের কাছে হয়ে উঠেছিলেন আদর্শে এক মূর্ত প্রতীক। তুমুল জনপ্রিয় তরুণ বামপন্থী রাজনৈতিক নেতা কানহাইয়া কুমারই অবশেষে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (সিপিআই) ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিলেন। মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দিল্লিতে রাহুল গান্ধীর উপস্থিতিতে তিনি কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন।
পিপলস রিপোর্টারের খবরে জানা যায়, এদিন সকাল থেকেই দিল্লিতে কানহাইয়া কুমারকে স্বাগত জানিয়ে পোস্টার, ব্যানার লক্ষ্য করা যায়। কংগ্রেসে যোগ দেবার আগে গত দু’সপ্তাহে কমপক্ষে দু’বার রাহুল গান্ধীর সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছিলেন কানহাইয়া কুমার। রাহুল গান্ধী ছাড়াও কংগ্রেসে যোগ দেবার আগে তিনি প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সঙ্গেও বৈঠক করেন।
বামপন্থী আদর্শে বিশ্বাসী কানহাইয়া কুমার ১৯৮৭ সালের জানুয়ারীতে বিহারে জন্ম গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় জেলে গিয়ে তিনি আলোচনায় আসেন ২০১৬ সালে। ওই সময় কানহাইয়া কুমার নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন।
২০১৬ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ছিল কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী নেতা আফজাল গুরুর ফাঁসি কার্যকরের চতুর্থ বার্ষিকীর। ভারতীয় পার্লামেন্টে হামলার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন আফজাল। ওই দিন জেএনইউ ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ সভা আয়োজন করা হয়েছিল। সেই সভা থেকে রাষ্ট্রদ্রোহ স্লোগানের অভিযোগ ওঠে। সেই সভার নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন ছাত্র সংসদের সভাপতি কানহাইয়া কুমার। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ছাত্রনেতা উমর খালিদ ও অনির্বাণ ভট্টাচার্য।
পরে এই ৩ সাবেক ছাত্রনেতাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পুলিশ। আটক করা হয় কানহাইয়া কুমারকে। তিন সপ্তাহ তিহার জেলে থেকে অন্তর্বর্তী জামিন পেয়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। এ ঘটনা ভারতজুড়ে কানহাইয়া কুমারকে তরুণ আইকনে পরিণত করে।
জেল থেকে ফিরে এসে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে উমর খালিদদের পাশে নিয়ে ‘হাম ক্যায় চাহতে, আজাদি, যো তুম না দোগে আজাদি তো হাম ছিনকে লেঙ্গে আজাদি’ স্লোগান তোলা! রাতারাতি দেশের বিজেপি বিরোধীদের কাছে নায়ক হয়ে উঠেছিলেন কানহাইয়া।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিহারের একটি আসন থেকে কানহাইয়া কুমার ভোটে দাঁড়ান। তবে বিজেপির হাই প্রোফাইল প্রার্থী গিরিরাজ সিংয়ের কাছে পরাজিত হন। জয়ী হতে না পারলেও সুবক্তা হিসেবে জাতীয় রাজনীতির মাঠে নিজের অবস্থান আরও পোক্ত করেন কানহাইয়া কুমার। একই সঙ্গে নির্বাচন করতে গিয়ে ৭০ লাখ রুপি গণচাঁদা তুলে আবারও আলোচনার জন্ম দেন তিনি।
সিপিআই বিহার সূত্রে জানা গেছে, কংগ্রেসে যোগ দেবার কয়েকদিন আগেই পাটনার সিপিআই অফিস থেকে নিজের উদ্যোগে লাগানো এসি মেশিনটি খুলে নিয়ে যান কানহাইয়া কুমার। এই বিষয়ে রাজ্য সিপিআই সম্পাদক রাম নরেশ পান্ডে এদিন জানিয়েছেন, কানহাইয়া এসিটি খুলে নিয়ে যাবার অনুমতি চেয়েছিলো। আমি তাঁকে সেই অনুমতি দিয়েছি। কারণ ওই এসি কানহাইয়া নিজের পয়সায় লাগিয়েছিলো।
যদিও এদিন সকালেও রাম নরেশ পান্ডে জানিয়েছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেন না কানহাইয়া কুমার কংগ্রেসে যোগ দেবে। কারণ কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর মতাদর্শগত মিল হওয়া অসম্ভব। তিনি আরও জানান, গত ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর সিপিআই ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠকেও যোগ দিয়েছেন কানহাইয়া এবং তখনও তিনি দল ছাড়ার অথবা কংগ্রেসে যোগ দেবার বিষয়ে কিছু জানাননি।
যদিও সমস্ত জল্পনাকে সত্যি করে আজই সিপিআই-এর সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে অবশেষে কংগ্রেসের পথেই পা বাড়ালেন এক সময়ের বাম ছাত্র আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য নেতা কানহাইয়া কুমার।
কানহাইয়া কুমারকে নিয়ে এই গুঞ্জন এবারই প্রথম নয়। এর আগে এই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি জেডিইউ নেতা তথা বিহারের মন্ত্রী অশোক চৌধুরীর সাথে সাক্ষাত করেন কানহাইয়া কুমার। যে সাক্ষাতের পরই একাধিক সংবাদমাধ্যমে তাঁর দলবদলের সম্ভাবনা নিয়ে খবর করা হয়। সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি করে সিপিআই নেতৃত্বের সঙ্গে কানহাইয়ার সম্পর্ক ক্রমশ তলানিতে ঠেকেছে। এর একাধিক কারণও তুলে ধরে মিডিয়া। প্রথমত, গত ১ ডিসেম্বর হায়দারাবাদ সিপিআইয়ের অফিস সচিব ইন্দু ভূষণ পাটনা সফরে এলে তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন কানহাইয়া। এতে দল তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছে। দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক সঙ্কট, কৃষক আন্দোলন, উমর খালিদ সহ একাধিক সমাজকর্মীর গ্রেফতারি সহ সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া একাধিক ঘটনায় সেরকম কোনো প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি কানহাইয়া কুমারকে। কৃষক আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে একাধিকবার দিল্লিতে তাঁকে ডাকা হলে, সেই ডাকে সাড়া দেননি তিনি বলে দাবি সংবাদমাধ্যমগুলির।
পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও তাঁকে রাজ্য বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে ব্রিগেডসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সভায় যোগদানের আহ্বান জানানো হলেও অধিকাংশ সময়েই তিনি তা এড়িয়ে গেছেন। হাতে গোনা দু’একটি সভা এই রাজ্যে করলেও বরাবর দূরত্ব বজায় রেখেছেন রাজ্যের প্রধান বাম দল সিপিআই(এম)-এর সঙ্গেও। একাধিকবার শেষ মুহূর্তে তিনি নিজেকে বামেদের সভা থেকে সরিয়ে নিয়েছেন সে নজিরও আছে।