খারাপ ব্যবহার নয়, তালেবান নিরাপত্তা দিয়েছে: তমাল ভট্টাচার্য

কাবুল থেকে ফিরে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছেন তমাল ভট্টাচার্য
কাবুল থেকে ফিরে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছেন তমাল ভট্টাচার্য  © সংগৃহীত

আফগানিস্তানের কাবুল থেকে দেশে ফিরে তালেবান সম্পর্কে বিস্ময়কর তথ্য জানালেন ভারতীয় নাগরিক। দেশটির একটি আন্তর্জাতিক স্কুলে শিক্ষকতা করতে গিয়ে সেদেশে আটকে পড়েন বলে জানিয়েছেন তমাল নামে ফেরত আসা একজন।

বিমান সেনাদের বিমানে দিল্লি হয়ে কলকাতায় ফিরেছেন আফগানিস্তানে আটকে থাকা মোট ২ বাঙালি। তারা হলেন- স্থানীয় নিমতার বাসিন্দা তমাল ভট্টাচার্য এবং লেক ভিউয়ের বাসিন্দা স্মরজিৎ মুখোপাধ্যায়।

আফগানিস্তানে একটি আন্তর্জাতিক স্কুলে শিক্ষকতা করতে গিয়ে সেদেশে আটকে পড়েন বলে জানিয়েছেন তমাল ভট্টাচার্য। তবে, কী কারণে আফগানিস্তানে ছিলেন, সে ব্যাপারে মুখ খোলেননি লেক ভিউয়ের বাসিন্দা সরজিৎ মুখোপাধ্যায়।

এদিকে, ঘরের ছেলে ঘরে ফেরায় স্বস্তিতে দুই বাঙালির পরিবার। কলকাতায় ফিরে তমাল জানালেন, তালিবান তাঁদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেছে। ভাল খেতে দিয়েছে। এমনকী, ক্রিকেটও খেলেছে।

তমালের পরিবার জানিয়েছিল, শুক্রবার রাত থেকেই কাবুল বিমানবন্দরে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন তিনি। পরিবারের দাবি, এরপরই শনিবার দুপুরে কাবুল থেকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো মেসেজে তমাল লেখেন, "Picked up by talibans."

যদিও তাঁর পরিবার পরে জানায়, তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তমালের মা জানিয়েছিলেন, কিছু প্রশ্ন করেছে। ভাল খাইয়েছে। তারপর ছেড়ে দিয়েছে।

তমাল বলেন, কাবুলে কোনো যুদ্ধ হয় নি। তালেবান একটি গুলিও ছুঁড়েনি। শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা পরিবর্তন হয়েছে। তবে আমেরিকানরা সেদিন এয়ারপোর্ট নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল তাদের নিজেদের ও সহযোগীদের নিরাপদে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমেরিকানরাই সেদিন গুলিটুলি কিছু করেছে। তালেবানরা কাউকে ডিস্টার্ব করেনি, কাউকে টাচও করেনি।

তালেবান নাগরিকদের নিরাপত্তা দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তালেবানরা আমাদেরকে বলেন, আপনারা ভয় পাবেন না, কোনো চিন্তা করবেন না, আপনারা সবাই নিরাপদ। আমরা আপনাদের খেদমতে আছি। তবে তৃতীয় পক্ষ যেন কোনো অঘটন ঘটিয়ে তালেবানের বদনাম না করতে পারে সেজন্য তারা সজাগ।

তিনি বলেন, তালেবানরা আমাদের ভরসা জুগিয়েছে। রাত্রিবেলা পাহারা দিয়েছে। বিশেষ করে খেয়াল রেখেছে আমাদের সাথে যেসব নারীরা ছিলেন, তাদের যেন কোনোরুপ সমস্যা না হয়। তারা সব রকমের সহযোগিতা করেছেন। আমাদের কোনো রকম সমস্যা হয়নি। বিশেষ করে ভারতীয়দের যে শঙ্কা ছিল, সেরকম কিছু হয়নি। তারা স্বাভাবিক ব্যবহার করেছেন।

নিজেদের চোখে দেখা কাবুলের পরিস্থিতির কথা জানিয়ে তমাল বলেন, আত্মীয়-স্বজনরা টেনশনে ছিলেন। মিডিয়াতে শুনছেন কাবুলে বোম ফুটছে, কিন্তু আমরা যারা ওখানে ছিলাম তারা জানি কাবুলের বাস্তব অবস্থা কী।

‘‘তালেবান আসার পরে কাবুলের দোকানপাট ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পুরো স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। বরং আমরা সেখানে কাবাব খেতাম ১৫০ টাকা দিয়ে নান কাবাব। তা মাংসের পরিমাণ ডাবল হয়ে গেছে তালেবান আসার পরে। কারণ স্ট্রিক্ট শরীয়া আইন যেহেতু ওরা ফলো করে, তাই কাউকে ঠকানো যাবেনা। সব জিনিসের সমান মাপ দিতে হবে।’’

তমাল আরও বলেন, অনেক ধরনের ল অ্যান্ড অর্ডার চেইঞ্জ হয়ে যায় আমি দেখেছি। যেহেতু ওরা একটা ধর্মালালম্বী মানুষ এবং তাদের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, তারা আমাদের সাথে চমৎকার আচরণ করেছে। এমনকি ওরা আমাদের ভারতীয় অ্যাম্বাসীকে নিরাপত্তা দিয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ