টিকটকের বিপজ্জনক ট্রেন্ড চ্যালেঞ্জে তিন শিশুর মৃত্যু

টিকটক
টিকটক  © ফাইল ছবি

টিকটক নিয়ে একাধিক অনৈতিক কাণ্ডের ঘটনা তো হরহামেশাই শোনা যায়। কিন্তু টিকটক ট্রেন্ডের নামে এবার শিশু নিহতের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

কয়েক বছর ধরে টিকটক ব্যবহারকারী কিছু তরুণের মধ্যে বিপজ্জনক ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে। চলতি বছর তেমনি ট্রেন্ডে যুক্তরাষ্ট্রে তিন শিশু নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

ভাইরাল হওয়া বিষয়টিকে বলা হচ্ছে ব্ল্যাকআউট চ্যালেঞ্জ। যেখানে অজ্ঞান হওয়ার আগ পর্যন্ত দম বন্ধ করে রাখতে হয় চ্যালেঞ্জগ্রহণকারীদের।

যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমার বেথানিতে সোমবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ১২ বছর বয়সী বালকের নিথর দেহ উদ্ধার করেন। উদ্ধারের সময় সে শ্বাস নিতে এমন কি কোনো ধরনের সাড়াও দিতে পারছিল না। ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক ওই বালককে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশ ধারণা করছে, ওই বালক ব্ল্যাকআউট চ্যালেঞ্জে অংশ নিয়েই মারা গেছে।

ব্ল্যাকআউট চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বেথানি পুলিশের কর্মকর্তা অ্যাঞ্জেলো ওরিফিস বলেন, ‘এটা এমন একটি চ্যালেঞ্জ, যেখানে শিশুরা দম বন্ধ করে রেখে অজ্ঞান হয়ে যেতে থাকে। একটা পর্যায় পর তারা আবার শ্বাস নিতে শুরু করে, এতে যে অনুভূতি হয়, তাতে তারা প্রচণ্ডরকম আনন্দ পায়।’

এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ট্রেন্ডে চ্যালেঞ্জ নিয়ে ওকলাহোমায় ওই এক বালকের মৃত্যুর ঘটনায় এটা প্রথম নয়। গত জুনে মেমফিসের ৯ বছরের এক শিশুও মারা যায়। তার পরিবার জানায়, সেও একই চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল। তারা তাদের শিশুকে ঘরের মধ্যে নিথর অবস্থায় পায়। তার গলায় বেল্ট বাঁধা ছিল।

তার আগে মার্চে কলোরাডো রাজ্যে ১২ বছর বসয়ী যমজ দুই ভাই একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জটি নিতে গিয়ে মারা যায়। তাদের নিথর দেহ পাওয়া যায় ফ্ল্যাটের বাথরুমে। উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে ১৯ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যায় তারা।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইতালিতে চ্যালেঞ্জ নিতে গিয়ে মারা যায় এক মেয়ে। এরপর ১৩ বছরের কম বয়সীদের জন্য দেশটিতে যেন টিকটক ব্যবহার করতে না দেয়া হয় সেই দাবি ওঠে।

বেথনি পুলিশ বলছে, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে দেয়া লকডাউনে শিশুরা বাইরে বের হতে পারছে না। এতে তারা বিরক্ত হচ্ছে। সেই জায়গা দখল করেছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। মাধ্যমগুলো তাদের প্রভাবিত করছে বেশি। বিষয়টি নিয়ে বাবা-মাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত।’

বিষয়টি নিয়ে টিকটকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মাধ্যমটি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

ব্ল্যাকআউট চ্যালেঞ্জ আসলে নতুন কিছু নয়। বিপজ্জনক এই চ্যালেঞ্জটি বিভিন্ন নামে পরিচিতি পেয়ে এসেছে অনেক বছর আগে থেকেই; ‘দমবন্ধ খেলা’, ‘ফ্ল্যাটলাইনার’, ‘ক্যালিফোর্নিয়া হাই’ নামেও পরিচিত এটি।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংস্থা জিএএসপি ২০০৫ সালে একটি সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করার সময় এর অস্বাভাবিক অস্তিত্ব খুঁজে পায়। অবশ্য এটি ১৯৩০ দশক থেকেই চলে আসছে বলে তাদের দাবি।

দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র ২০১০ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, ১৯৯৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত কমপক্ষে ৮২ শিশু ও কিশোর মারা গেছে যাদের বয়স ৬ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে।

গত কয়েক বছর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়া চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি ব্ল্যাকআউট।

২০১৮ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ফায়ার চ্যালেঞ্জ নামে একটি ট্রেন্ড হয়। যেখানে তরল জ্বালানি গায়ে মেখে আগুন ধরিয়ে দিয়ে তা থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করা হয়। এতে অনেক শিশু-কিশোর আহত হয়।

সে বছরই টাইপড চ্যালেঞ্জ নামে আরেকটি চ্যালেঞ্জ ট্রেন্ড হয়। যেখানে লন্ড্রির ডিটারজেন্ট কামড়ে খাওয়া হয়। সে চ্যালেঞ্জে শুধু শিশু বা কিশোর নয়, অনেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিও বিষক্রিয়ার শিকার হন।


সর্বশেষ সংবাদ