এসপি বাবুল নিয়ে সংবাদমাধ্যমের অবস্থানে হতাশা চবি অধ্যাপকের

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের 
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আর রাজী
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আর রাজী  © ফাইল ফটো

 চট্টগ্রামের আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার বাদী ও তাঁর স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারকে নিয়ে দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোর সাম্প্রতিক কাভারেজ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আর রাজী।

নিজের ফেসবুক একাউন্টে এ নিয়ে বিস্তারিত একটি পোস্ট দিয়েছেন চবি শিক্ষক ও গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ আর রাজী। পুরো স্ট্যাটাসটি হুবহু দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো- 

‘‘আত্মঘাত!

বাবুল আক্তারকে নিয়ে গত ক'দিনে যে সব সংবাদ পড়লাম তাতে আমার মতো সম্ভবত আরও অসংখ্য পাঠক-দর্শক-শ্রোতা নিশ্চিত যে বাবুল আক্তারই তার স্ত্রীকে খুন করেছেন।

আমাদের সংবাদ-মাধ্যম এই যে নিশ্চয়তার বোধ তৈরি করেছে তা কিন্তু নিজেদের অনুসন্ধানে নয়, নিজ-দায়িত্বে নয়, তারা যা করেছে তা পুলিশের বরাতে। এই যে নিজে দায়িত্ব না নিয়ে অন্য একটা প্রতিষ্ঠানের হয়ে মানুষের মনে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বা বিপক্ষে নিশ্চয়তা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখা- এটি সংবাদ-মাধ্যমের যে মৌলিক দর্শন রয়েছে, বস্তুনিষ্ঠতা-পক্ষপাতহীনতা-ভারসাম্য -এসবের ব্যত্যয়।

সংবাদ-মাধ্যমের কল্যাণে এখন এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, আমরা মনে মনে জানি বাবুল আক্তার অপরাধী এবং তার শাস্তি নিশ্চিত। যদি বিচারকের এজলাশে বাবুল আক্তারের অপরাধ প্রমাণিত না হয় অর্থৎ বাবুল আক্তার নির্দোষ প্রমাণিত হন তাহলে আমরা বুঝে নেব আমাদের পুলিশ, বিচার বিভাগ কিংবা আরও আরও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান মানুষজন দুর্নীতিগ্রস্ত, অদক্ষ ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমরা সবাই জানি, পুলিশ যা বলে সব সময় তা সত্য হয় না। পুলিশের তদন্ত প্রক্রিয়া, তার যুক্তি পরম্পরা আদালতে অকার্যকর প্রমাণিত হতেই পারে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত না হলেও, পুলিশের তদন্ত কাজ, অপরাধী নির্ণয় প্রক্রিয়া নানান কারণে ত্রুটিপূর্ণ, বিভ্রান্তিকর ও ভুল ফলদায়ক হতে পারে। এটি মেনেই আদালতে যুক্তি তর্ক চলে। আমরা বিচারকের বিবেচনার ওপর নির্ভর করি। এ কারণেই শেষ বিচারের আগে কাউকে দোষী বলতে নাই। কেউ দোষী এমন একটা অনুভব সৃষ্টি করা থেকেও যে কারণে সংবাদ-মাধ্যমকে বিরত থাকতে হয়।

কেবল অপরাধের শিকার যে বা যারা তাদের পরিবারের পরিজনের কথা ভাবলেই সংবাদ-মাধ্যমের চলে না, তাকে ভাবতে হয় যাকে অপরাধী সন্দেহ করা হচ্ছে তার পরিবার-পরিজনের কথাও। বাংলাদেশের সংবাদ-মাধ্যম আজতক এই সাবালকত্ব অর্জন করতে তো পারেইনি বরং দিন দিন যেন আরও নাবালক আর জংলি হয়ে যাচ্ছে। বাবুল আক্তার সংক্রান্ত সংবাদ পরিবেশন তার সর্বশেষ উদাহরণ।

যত্নশীল চেষ্টা, কঠিন পরিশ্রম না করলে এই পরিস্থিতি থেকে সংবাদ-মাধ্যম নিজেকে বের করে আনতে পারবে না। এই না পারার মূল্য চুকাতে হবে আমাদের সমাজকেই। কিন্তু ভয়ঙ্কর ব্যাপারটি হচ্ছে, এ ধরনের পশ্চাৎপদতাকে নানান কুযুক্তি, গালিগালাজ, ধানাইপানাই করে ন্যায্যতা দেওয়ার উগ্র চেষ্টাও চালান অনেক অনেক সংবাদ-কর্মী। একবার ফিরেও জানতে চান না, তারা যে কাজটা করেছেন তা কি ঠিক ছিল? দেখেছেন কখনো, সংবাদ-উপস্থাপনায় ভুলের জন্য আমাদের সংবাদ-মাধ্যমের আত্মসমালোচনা?’’