আমি খুন করব ছোটবোনকে আর ভাই করবে বাবা-মাকে, এরপর আত্মহত্যা

ফারহান তৌহিদ ও তার লেখা পোস্ট
ফারহান তৌহিদ ও তার লেখা পোস্ট  © ছবি : সংগৃহীত

'সবাই কেমন আছেন? আমি নিজেকে এবং আমার পরিবারকে হত্যা করেছি।' এমনি শিরোনামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়ে পরিবারের ৪ জনকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেন দুই ভাই ফারহান ও তানভীর।

ঘটনাটি ঘটে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অ্যালেন শহরে। বাংলাদেশি পরিবারের ছয় সদস্যের মধ্যে ৪ জন নিহত হন ওই পরিবারেই দুই তরুণের হাতে, যারা পরে নিজেরাও আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনার আগে ছোট ভাই ফারহান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আত্মহত্যা ও হত্যার কারণ এবং পরিকল্পনা বর্ণনা দিয়ে লিখে যান একটি দীর্ঘ চিঠি। চিঠি থেকে জানা যায় প্রচণ্ড হতাশাবোধ থেকে তারা এই ভয়াবহ ঘটনা ঘটিয়েছেন। 

সোমবার (৫ এপ্রিল) দুপুরের দিকে অ্যালেন শহরের পাইন ব্লাফ ড্রাইভ এলাকার ১৫০০ নম্বর ব্লকের একটি বাড়ি থেকে একই পরিবারের ছয় সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তারা হলেন তৌহিদুল ইসলাম (৫৪), তার স্ত্রী আইরিন ইসলাম (৫৬), তৌহিদুল ইসলামের মা আলতাফুন নেসা (৭৭), দুই পুত্র তানভীর তৌহিদ (২১) ও ফারহান তৌহিদ (১৯) এবং কন্যা ফারবিন তৌহিদ (১৯)। ফারহান এবং ফারবিন জমজ ভাই-বোন ছিলেন।

চিঠিতে তানভীর ও ফারহান লিখেছেন, তারা উভয়েই ব্যাপকভাবে হতাশায় ভুগছেন। জীবনের কোনো অর্থ খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। এ কারণে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কিন্তু দুইজন একসঙ্গে আত্মহত্যা করলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য তা তীব্র আঘাত ও বেদনাদায়ক একটি ব্যাপার হবে। তাই পরিবারের সদস্যদের সম্ভাব্য ‘বেদনা’ থেকে রক্ষা করতে আত্মহত্যা করার আগে পরিবারের সদস্যদের হত্যার সিদ্ধান্ত নেন তারা।

সেই অনুযায়ী শনিবার মধ্যরাতে বাবা, মা, বোন এবং নানিকে গুলি করে হত্যা করেন তানভীর। তারপর সেই বন্দুকের গুলিতেই আত্মহত্যা করেন তিনি ও তার ভাই ফারহান।

হত্যাকাণ্ডে দু’টি বন্দুক ব্যবহার হয়েছিল, সেগুলো ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার বিকেলে পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি তানভীর বন্দুক কিনেছিলেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানতে পেরেছেন তারা।

ঠিক কোন পরিস্থিতিতে এবং কবে এই ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা চিঠিতে বলেছেন তানভীর এবং ফারহান। 

চিঠিতে ছোট ভাই ফারহান বলেন, ‘যদি আমরা আত্মহত্যা করি, তাহলে তা পরিবারের জন্য খুবই হৃদয় বিদারক একটি ঘটনা হবে। আমরা তাদের এই কষ্ট দিতে চাই না। আমরা আমাদের পরিবারকে ভালোবাসি। সত্যিই ভালোবাসি এবং ঠিক এ কারণেই আমরা তাদের হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

ফারহান চিঠিতে আরও লিখেছে, ‘আমি হত্যা করব ছোটবোন আর নানিকে। আমার ভাই (তানভীর) হত্যা করবে আমার মা-বাবাকে। এরপর উভয়ে আত্মহত্যা করব। এতে কষ্ট পাওয়ার কেউ থাকবে না।’
চিঠিতে বন্দুক কেনার ঘটনা বর্ণনা করে ফারহান লিখেছে, বড়ভাই তানভীরসহ টেক্সাসের একটি দোকান থেকে বন্দুক কিনেছিল তারা। 

ফেসবুক স্ট্যাটাসে এ বিষয়ে ফারহান বলেন, ‘দুই ভাই গেলাম বন্দুক কিনতে। বন্দুক কেনার ব্যাপারটি খুবই সহজ। বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইনের নামে তামাশা চলছে সর্বত্র। বড় ভাই গেল দোকানে। বলল যে, বাড়ির নিরাপত্তার জন্য বন্দুক দরকার। দোকানদার কয়েকটি ফরম ধরিয়ে দিলে সেখানে স্বাক্ষর করল। এরপর হাতে পেলাম কাঙ্খিত সেই বস্তুটি, যা দিয়ে নিজের এবং পরিবারের কষ্ট সহজে লাঘব করা যাবে।’

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হয়, ওই পরিবারের এক বন্ধু তাদের ফোন করে পাচ্ছিলেন না। কোনোভাবে তাদের খোঁজ করতে না পেরে তিনি পুলিশে খবর দেন। পুলিশ ঘরে গিয়ে ছয়জনের লাশ দেখতে পায়। বন্দুকের গুলিতেই ছয়জন মারা গেছেন। বাড়িটি থেকে ওই বন্দুকও উদ্ধার করেছে পুলিশ।

অ্যালেন পুলিশের সার্জেন্ট জন ফেলটি স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, ঘটনাস্থল এবং সেখান থেকে জব্দ করা আলামত পর্যালোচনা করে জানা গেছে, গত শনিবার (৩ এপ্রিল) রাতে ঘটেছে এই হত্যাকাণ্ড। পরিবারের সদস্যদের হত্যার আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি দীর্ঘ চিঠি লেখেন দুই ভাই তানভীর ও ফারহান। এই চিঠির বিষয়টি ঘটনার পরে জানতে পারে পুলিশ।

টেক্সাসের অ্যালেন শহরের পুলিশ কর্মকর্তা সার্জেন্ট জন ফেলটি বলেন, ‘আমি গত ২১ বছর ধরে অ্যালেনে আছি। গত ২১ বছরে আমি এ রকম কোনো ঘটনা দেখিনি। এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না এটা কী পরিমাণ দুঃখজনক। নিহতদের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের আমরা হৃদয়ের গভীর থেকে সান্ত্বনা জানাচ্ছি।’ 

জন ফেলটি জানান, টেক্সাসে এই পরিবারের কোনো আত্মীয়-স্বজন নেই। তাদের কয়েকজন পারিবারিক আত্মীয় ফ্লোরিডায় বসবাস করেন। 

তৌহিদুলের পারিবারিক বন্ধু মিজান রহমান বলেন, বাংলাদেশে রাজধানীর পুরান ঢাকার বাসিন্দা ছিলেন এই পরিবারের প্রধান তৌহিদুল। ২২ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি। ২০ বছর ধরে তিনি টেক্সাসের বাসিন্দা। এর আগে দুই বছর নিউইয়র্ক শহরে বাস করেন। তৌহিদ চাকরি করতেন সিটি ব্যাংকে। এর আগে তিনি তথ্য প্রযুক্তি খাতে চাকরি করতেন বলে জানা গেছে।


সর্বশেষ সংবাদ