এএসপি স্ত্রী-এসআই স্বামীর ছবি ভাইরাল, প্রশংসায় নেটিজেনরা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সম্প্রতি আখাইড়া রেলওয়ে সার্কেলে সহকারী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে তোলা একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে অফিসার সিটে বসে আছেন উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা এএসপি উর্মী দেব আর তাকে সম্মান জানিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে আছেন এসআই উজ্জ্বল ঘোষ জিতু।
কিন্তু কর্মক্ষেত্রের পরিচয়ই তাদের একমাত্র পরিচয় নয়। তাদের আসল পরিচয় হলো তারা স্বামী-স্ত্রী। সমাজের প্রথাগত রীতি ভেঙে ভালোবাসার এক অনন্য দৃষ্টান্ত তৈরী করায় এই দম্পতির হাসিমাখা ছবি ও একসাথে পথচলার গল্প নেটিজেনদের হৃদয় কেড়েছে। তাদের ছবিতে প্রশংসায় পঞ্চমুখ সবাই। ছবিতে সাধারণ মানুষের মন্তব্য নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাড়িয়ে দিয়েছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) সন্ধ্যায় পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) উজ্জ্বল ঘোষ জিতু ও তার স্ত্রী পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) উর্মী দেবের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন।
ওই পোস্টে এসআই উজ্জ্বল ঘোষ জিতু লেখেন, ‘আমি সাব-ইন্সপেক্টর উজ্জল ঘোষ। ছবিতে আমার সাথে যাকে দেখা যাচ্ছে তিনি জনাব উর্মি দেব, এসিস্ট্যান্ট সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ বাংলাদেশ পুলিশ (এএসপি)। পেশাগত জীবনে তিনি আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আর ব্যাক্তিগত জীবনে তিনি আমার সহধর্মিণী। পুলিশিং পেশার ব্যাপারে যাদের একটু ধারনা আছে তারা বলতে পারবেন অবস্থানগত দিক থেকে আমার সহধর্মিণীর অবস্থান আমার থেকে কতটা উপরে। না, আমাদের বিয়ের পর আমাদের কারও চাকরি হয়নি। আমার আর আমার সহধর্মিণীর অবস্থানের এই আকাশ পাতাল পার্থক্যের তোয়াক্কা না করে এই দেবীতুল্য মানুষটা আমাকে আপন করে নিয়েছিলেন। বেহিসেবী ভালবাসা দিয়ে ভরিয়ে তুলেছেন আমার জীবন। দাম্পত্য জীবনে আমার থেকে সুখী বোধ করি আর কেউই নেই (একান্ত আমার নিজস্ব চিন্তাচেতনা)।
যখন অহরহ পোষ্ট দেখি মেয়েরা লোভী হয়, মেয়েরা বিসিএস স্বামী খুঁজে পেলে সব ছাড়তে পারে, মেয়েরা টাকা আর অবস্থান ছাড়া আর কিছু বোঝে না আমার তখন খুব হাসি পায় মায়ের জাত নিয়ে কি আমাদের চিন্তাধারা এটা ভেবে।
একজন বিসিএস কর্মকর্তা যে কিনা আমার মত একজন সামান্য মানুষকে এতটা আপন করে নিয়েছেন তিনিও তো একজন মেয়ে।
আশির্বাদ প্রার্থী।’
সূত্র মতে জানা যায়, এসআই উজ্জ্বল ঘোষ জিতু ও তার স্ত্রী পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) উর্মী দেব দম্পতির বিয়ে হয়েছে ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর। নিজেদের পছন্দে হলেও তাদের বিয়ে হয়েছে পারিবারিকভাবে।
এসআই উজ্জ্বল ঘোষ জিতু জানান, তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে। বাবা ছিলেন একজন পরিবহন ব্যবসায়ী। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে জিতুই বড়। উপ-পরিদর্শক পদে যোগদান করতে তিনি ট্রেনিং শুরু করেন ২০১৮ সালে ২৭ জানুয়ারি। পুলিশের ট্রেনিং শেষ করেন ২০১৯ সালে। এর আগে থেকেই পরিচয় ছিল এএসপি উর্মী দেবের সাথে। ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি এসআই পদে তার পুলিশের চাকরি নিশ্চিত হয়। এরই মধ্যে দুজনের মাঝে আলাপ আলোচনা হয়। একপর্যায়ে একে অপরকে পছন্দ করেন। বিষয়টি যার যার পরিবারকে জানালে ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয়।
তিনি বলেন, অন্যান্য পোস্টের মতো ফেসবুকে পোস্টটি দিয়েছিলাম। পোস্টটি এভাবে ভাইরাল হবে আমি বুঝতে পারিনি। তবে বিষয়টি মানুষ পজিটিভলি নিয়েছে। আমরা ব্যক্তিগত জীবনে অনেক সুখী। আমার স্ত্রীও খুব ভালো মানুষ। তার সততার কোনো কমতি নেই। আমার মতো একজন মানুষকে বিয়ে করে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি আসলেই কতটা নির্লোভ ও নিরাহংকার।
এ বিষয়ে উপ-পরিদর্শক উজ্জ্বল ঘোষের নববধূ আখাউড়া রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) উর্মি দেব বলেন, আমার বাবার বাড়ি চট্টগ্রামে। আমার বাবা একজন আইনজীবী। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে আমিই বড়। বিসিএসের পর এএসপি পদে চাকরি জীবনের প্রথম পোস্টিং আখাউড়া সার্কেলেই। ছবিটি সে (স্বামী) আমার অফিসে এসে তুলেছিল। ছবির বিষয়ে আমার আত্মীয় স্বজন ও সহকর্মীরা ফোন করে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমার স্বামীর সাথে চাকরিতে যোগদান করার পর পরিচয়। কর্মজীবন আর ব্যক্তিগত জীবন আলাদাভাবে চালাতে হয়। যেন একটির কারণে আরেকটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। একই পেশায় দুইজন থাকলে ভালো হয়, একজন আরেকজনেরটা সহজে বুঝতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে এএসপি উর্মি দেব বলেন, আমরা যখন বিয়ে করি তখন দুজনই চাকরিজীবী। আমরা বুঝে শুনেই বিয়েতে সম্মত হয়েছি। তাই আমাদের কোনো সমস্যা হবে না বলে প্রত্যাশা করছি। তারপরও প্রতিটি দম্পতির ব্যক্তিগত কিছু সমস্যা হতে পারে। তখন আমরা দুইজন আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করার চেষ্টা চালিয়ে যাব।
এএসপি উর্মি দেব আরও বলেন, কোনো সম্পর্ক যখন পরিণতি পায়, সেটা অবশ্যই ভালো লাগার বিষয়। আমাদের জীবন একটি, সবকিছু হিসাব-নিকাশ করে করা যায় না। বৃহৎ স্বার্থের জন্য ক্ষুদ্র বিষয়গুলো পরিহার করতে হয়। শিক্ষিত মানুষ হয়ে দৃষ্টিভঙ্গি যদি না পাল্টাই, তাহলে কে পাল্টাবে? সবার আগে নিজের মন মানসিকতা বদলাতে হবে।