ক্ষমতায় বসেই ট্রাম্পের যেসব নীতি বদলে দিলেন বাইডেন

ক্ষমতা গ্রহণের পর ওভাল অফিসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
ক্ষমতা গ্রহণের পর ওভাল অফিসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন  © বিবিসি

শপথ নেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু নীতি পাল্টে দেয়ার কাজ শুরু করেছেন বর্তমানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। শপথ নেয়ার পর হোয়াইট হাউসে গিয়ে করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় পদক্ষেপ জোরদারসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ১৫টি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। অন্য নির্বাহী আদেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন এবং অভিবাসন বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থানকে ঠিক উল্টে দিয়েছে।

বুধবার (২০ জানুয়ারি) সকালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পর বাইডেন ওভাল অফিসে কাজ শুরু করেন। করোনাভাইরাসের নিষেধাজ্ঞার কারণে শপথ অনুষ্ঠান ছোট পরিসরে করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসের কাছে শপথ নেয়ার পর প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।’

বিবিসি জানিয়েছে, তার তিন জন পূর্বসূরি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন- বারাক ওবামা, যার অধীনে আট বছর ভাইস-প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন বাইডেন। এছাড়া বিল ক্লিনটন এবং জর্জ ডাব্লিউ বুশসহ ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও উপস্থিত ছিলেন। বাইডেনের আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন কমালা হ্যারিস। এ পদে দায়িত্ব নেয়া প্রথম নারী এবং প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ও এশিয়ান-আমেরিকান তিনি।

গত ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের সহিংস সমর্থকরা ক্যাপিটল ভবনের দখল নেয়ার ঘটনার পর অনুষ্ঠানকে ঘিরে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। বাইডেন এবং ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন, কমালা হ্যারিস ও তার স্বামী ডো এমহফের সালে পেনসিলভেনিয়া এভিনিউ দিয়ে হেটে হোয়াইট হাউসে পৌঁছান। সেসময় বন্ধু এবং সমর্থকদের শুভেচ্ছা জানান তারা।

শপথ অনুষ্ঠানে লেডি গাগা জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। সাথে ছিলন জেনিফার লোপেজ এবং গার্থ ব্রুকস। আমেরিকার প্রথম ন্যাশনাল ইয়ুথ পয়েট লরেট অ্যামান্ডা গোরম্যান তার লেখা দ্য হিল উই ক্লাইম্ব নামে কবিতাটি আবৃত্তি করেন। এছাড়া লিংকন মেমোরিয়ালে সন্ধ্যায় আয়োজিত এক কনসার্টে উপস্থাপক হিসেবে ছিলেন টম হ্যাংকস, ব্রুস স্প্রিংস্টিন, জন লিজেন্ড, জন বন জোভি, জাস্টিন টিম্বারলেক এবং ডেমি লোভাটো।

নির্বাহী আদেশের বর্ণনা করে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট বাইডেন শুধু ট্রাম্প প্রশাসনের সবচেয়ে বড় ক্ষতিগুলোই সংশোধন করবেন না বরং তিনি দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। করোনাভাইরাস মহামারি সামাল দিতে ধারাবাহিক কিছু পদক্ষেপ নেয়া হবে। এতে এখনো পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে চার লাখেরও বেশি প্রাণহানি হয়েছে। সব ধরনেরর কেন্দ্রীয় সরকারি দপ্তরে মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক করা হবে।

মহামারির বিষয়ে পদক্ষেপের সমন্বয় করতে একটি আলাদা দপ্তর গড়ে তোলা হবে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বেরিয়ে যেতে ট্রাম্প প্রশাসনের শুরু করা প্রক্রিয়া স্থগিত করা হবে। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে আবারো যুক্ত হওয়ার পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তার মুখপাত্র স্টিফানি দুজারিক জানান, মহাসচিব বলেছেন, সমন্বিত বৈশ্বিক পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে এটি ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’।

বাইডেন আরো জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই হবে তার প্রশাসনের অন্যতম অগ্রাধিকার। ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে আবার যোগ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে নির্বাহী আদেশ সই করেছেন তিনি। গত বছর আনুষ্ঠানিকভাবে এই চুক্তি থেকে বের হয়ে এসেছিলেন ট্রাম্প। বিতর্কিত কিস্টোন এক্সএল পাইপলাইনের প্রেসিডেন্সিয়াল অনুমোদন বাতিল করেছেন বাইডেন। এই পাইপলাইনের বিরুদ্ধে পরিবেশবাদী এবং নেটিভ আমেরিকান গোষ্ঠীগুলো এক দশকের বেশি সময় ধরে লড়াই করে আসছে।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেন, শুক্রবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে প্রথম বিশ্বনেতা হিসেবে ফোন করার পর এ বিষয়ে তার সাথে আলোচনা করবেন বাইডেন। বেসরকারিভাবে অর্থায়নে থাকা পাইপলাইনটির মূল্য প্রায় আট বিলিয়ন ডলার। কোম্পানিটি কানাডার আলবার্টা থেকে নেব্রাস্কায় দৈনিক আট লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত তেল পরিবহন করতো। ২০১৫ সালে এই পাইপলাইন কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠায় আনা একটি বিলে ভেটো দিয়েছিলেন বারাক ওবামা। কিন্তু সেটি উল্টে দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

অভিবাসনের উপর ট্রাম্প প্রশাসনের জারি করা জরুরি প্রস্তাবনা বাতিল করেছেন বাইডেন। এ জরুরি প্রস্তাবনার অধীনে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে অর্থায়ন এবং বেশ কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। অন্য নির্বাহী আদেশগুলো বর্ণ এবং লৈঙ্গিক সমতা বিষয়ক।

বাইডেন প্রেসিডেন্সির আওতায় প্রথম অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি কি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের স্বার্থকে প্রচার করবেন নাকি ‘সাদামাটা সত্য’ উপস্থাপন করবেন। এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘মুক্ত ও স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকার প্রতি গভীর শ্রদ্ধার’ সাথে তিনি ‘সরকারে স্বচ্ছতা এবং সত্য ফিরিয়ে আনতে’ প্রেসিডেন্টের সাথে কাজ করবেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তার প্রেস সেক্রেটারি প্রায় সময়ই মিডিয়ার সাথে একটি বিরুপ সম্পর্ক ছিল।


সর্বশেষ সংবাদ