বাইডেনের প্রণোদনায় শিক্ষাঋণ মওকুফ নেই, দুশ্চিন্তায় শিক্ষার্থীরা
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিরাট অঙ্কের প্রণোদনা প্রস্তাবে জায়গা পায়নি শিক্ষাঋণ মওকুফের বিষয়টি। আগামী বুধবার শপথ নেবেন বাইডেন। এমন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার করোনা মহামারিতে ধসে পড়া অর্থনীতির জন্য ১.৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রণোদনার প্রস্তাব দিলেন তিনি।
প্রণোদনা প্রস্তাবে উচ্চশিক্ষা খাতের জন্য বিলিয়ন ডলার বরাদ্দের কথা বলা হলেও কোথাও শিক্ষাঋণ মওকুফের কথা বলা হয়নি। আশা করা হচ্ছে, বাইডেন ক্ষমতা নেওয়ার পর নির্বাহী আদেশে ঋণ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন। ফোবর্সের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এই প্রস্তাব কংগ্রেসে পাস হলে প্রত্যেক মার্কিনির জন্য এক হাজার ৪০০ ডলার প্রণোদনা হিসেবে বরাদ্দ হতে পারে। প্রস্তাবে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে ৪১৫ বিলিয়ন ডলার এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ৪৪০ বিলিয়ন ডলার রাখার কথা বলা আছে।
গত বছরের মে মাসে কংগ্রেসের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে ডেমোক্র্যাটরা শিক্ষাঋণ পরিশোধে সাময়িক ইস্তফা জারি করে প্রণোদনা প্রস্তাব পাস করেছিল। অর্থাৎ এ বছরের সেপ্টেম্বরে যে ঋণ পরিশোধ করার কথা তার সময় বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল। রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ উচ্চকক্ষ সিনেটে গিয়ে তা বানচাল হয়ে যায়। ডেমোক্র্যাটদের প্রস্তাবনায় অর্থনৈতিকভাবে বিপদগ্রস্ত শিক্ষার্থীর ১০ হাজার ডলার ঋণ মওকুফের কথা বলা হয়েছিল।
তবে আসন্ন কংগ্রেসের সিনেট ও হাউস অব রিপ্রেজেন্টিভস উভয় কক্ষে ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় বিপদগ্রস্ত শিক্ষার্থীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। শিক্ষাঋণ নিয়ে কাজ বেশকয়েকটি সংগঠনের একটি জোট বৃহস্পতিবার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা ধরে নিতে চাই, প্রণোদনা প্রস্তাবে ঋণ মওকুফের বিষয়টি না থাকা মানে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পরই শিক্ষাঋণ বাতিলে নির্বাহী আদেশ প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।’
বাইডেন বহুবার শিক্ষাঋণ মওকুফের বিষয়টি সমর্থন করার কথা বলেছেন। গত শুক্রবারও তাঁর ক্ষমতা হস্তান্তর টিম নিশ্চিত করে জানায়, বাইডেনের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম কাজগুলোর একটি হবে শিক্ষা বিভাগকে শিক্ষা ঋণের কিস্তি ও লভ্যাংশ পরিশোধের বর্তমান সময়সীমা বাড়ানোর আদেশ দেওয়া। এবং বাইডেন কংগ্রেসকে ১০ হাজার ডলার করে ঋণ মওকুফের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বানও জানাবেন। তবে এর বেশি কিছু জানানো হয়নি।
বাইডেনের প্রণোদনা প্রস্তাব আনার পরপর অনেকে ভেবেছিলেন পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের বিষয়টি যুক্ত করা হবে। কিন্তু তাঁর নির্বাচনী প্রচারণা দলের অবস্থানের পর জানা গেল নির্বাহী আদেশ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে দেশটির শিক্ষার্থীদেরকে। ২০২০ সালের নির্বাচনি প্রচারণায়ও বাইডেন শিক্ষার্থী ঋণ মওকুফের পক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করেন।
বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাহী আদেশে দুইবার শিক্ষার্থীদের ঋণের অর্থ ও লভ্যাংশ ফেরতের সময়সীমা বাড়িয়েছিলেন। ফোবর্সসহ যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, জো বাইডেন ক্ষমতা নেওয়ার পরই শিক্ষার্থীদের ঋণ ও সুদ ফেরতের সময়সীমা হয়তো বাড়াবেন। কিন্তু ঋণ মওকুফ নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে। গত মাসে বাইডেন বলেছিলেন, আমি মনে করি, বিষয়টি প্রশ্নযোগ্য। আমি নিশ্চিত নই। আমি হয়তো এটা করতে অনিচ্ছুকও হতে পারি।
এদিকে, প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাটরা আরো বড় ধরনের শিক্ষার্থী ঋণ মওকুফের কথা বলছেন। গত মাসে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের আয়ান্না প্রিসলিসহ বেশকয়েকজন সদস্য বাইডেনের প্রতি আগাম প্রস্তাব আনেন। তাতে নির্বাহী আদেশে ফেডারেল ঋণগ্রহীতা শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকের ৫০ হাজার ডলার মওকুফের কথা বলা হয়। উচ্চকক্ষ সিনেটেও বাইডেনের প্রতি আগাম প্রস্তাবনা আনা হয়েছে। সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন ও চাক শুমার পরবর্তী প্রেসিডেন্টকে শিক্ষার্থী ঋণ বাতিলে নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহারের আহ্বান জানানো হয়।