ক্যাপিটলে হামলার সময় গোপন সুড়ঙ্গ দিয়ে পালিয়ে বাঁচেন সিনেটররা

হামলার সময় গ্যাস মাস্ক পরে আছেন ক্যাপিটলের কর্মীরা
হামলার সময় গ্যাস মাস্ক পরে আছেন ক্যাপিটলের কর্মীরা  © বিবিসি

বাইরে তখন তাণ্ডব চালাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা। আর ভিতরে ক্যাপিটলের সব প্রবেশদ্বার বন্ধ। দরজার দিকে তাক করে বন্দুক উঁচিয়ে রেখেছেন নিরাপত্তারক্ষীরা। যে কোনও সময় দরজা ভেঙে ঢুকে পড়তে পারে উগ্র সমর্থকরা। শেষমেশ গোপন সুড়ঙ্গ দিয়ে নিরাপদ ঘরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হল সিনেটরদের। স্থানীয় সময় বুধবার এমনই নজিরবিহীন রুদ্ধশ্বাস নাটকীয় পরিস্থিতি দেখল যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, আইনসভার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা তখন বিতর্ক করছিলেন। ছিলেন সাংবাদিকরাও। এ আলোচনার শেষেই ইলেক্টরাল কলেজের ভোটের হিসেবে জো বাইডেন নির্বাচিত হবেন। ট্রাম্পের রিপাবলিকান সিনেটররা তখনও কার্যত পরাজয় মেনে নিতে নারাজ। আলোচনা, বিতর্ক, প্রশ্নোত্তরের মধ্যেই চলছে কটাক্ষ, টিকা-টিপ্পনি। তার মধ্যেই বাইরে শুরু হয় হট্টগোল। তাঁদের গন্তব্য ক্যাপিটল ভবন।

ক্যাপিটলের নিরাপত্তারক্ষীরাও তাঁদের আটকাতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন। এই গণ্ডগোলের খবর তখন পৌঁছে যায় ভিতরেও। সিনেটররাও বাইরের দিকে উঁকিঝুঁকি মারছেন ঠিক কী হয়েছে বোঝার জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন ঘটনা কোনওদিন ঘটেনি। ফলে তাঁরাও ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না, কী হয়েছে। তখনও ততটা ‘সিরিয়াসলি’ নেননি সেনেটররা। কিন্তু বিষয়টা যে ট্রাম্প সমর্থকদের ‘হামলা’ সেটা স্পষ্ট হয় যখন একের পর এক দরজা সজোরে বন্ধ করে দিচ্ছিলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। পর পর ভেঙে পড়ছে দরজা-জানালার কাচ।

রিপাবলিকান সিনেটরদের দিকে কটাক্ষ ছুড়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ—‘ডাকুন আপনার নেতাকে! তার জন্যই তো এ সব হচ্ছে।’ কিন্তু বিষয়টা যে ভয়ানক, সেটা সিনেটররা টের পেলেন আরও কিছুটা পরে। ক্যাপিটলের মূল দরজা শুধু বন্ধ করাই নয়, ভিতর থেকে আসবাবপত্র রেখে সাপোর্ট দিয়ে দিয়েছেন নিরাপত্তারক্ষীরা। হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির ফ্লোর ডিরেক্টর কেইথ স্টার্ন বলেন, ‘প্রত্যেকে নিজের নিজের আসনে বসে পড়ুন। শান্ত থাকুন।’

এর মধ্যেই বাইরে কাঁদানে গ্যাসের মতো কিছু একটা ছোড়া হয় হামলাকারীদের আটকানোর জন্য। এ বার ঘোষণা, ‘সিটের নীচে রাখা গ্যাস মাস্ক পরে নিন সবাই’। যে কোনও সময় যে কোনও দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকতে পারে বাইরের আতঙ্ক। গোড়ার দিকে যেটা ছিল কৌতূহলের বিষয়, সেটাই হয়ে দাঁড়াল বিভীষিকা। শেষ পর্যন্ত আর ঝুঁকি নেননি ক্যাপিটলের নিরাপত্তা অফিসাররা। সিনেটরদের বললেন, সুড়ঙ্গ দিয়ে নিরাপদ কক্ষে পৌঁছে যেতে।

সেভাবেই ফাঁকা করা হল ক্যাপিটল। হাউস সার্জেন্টকে কোনও এক নিরাপত্তা অফিসারকে নির্দেশ দিতে শোনা যায়, ‘ক্যাপটলকে আমরা যেন নিরাপদ রাখতে পারি, সেটা নিশ্চিত করুন।’ সবমিলিয়ে, রুদ্ধশ্বাস এক নাটকের সাক্ষী থাকল ক্যাপিটল এবং সিনেটররা।


সর্বশেষ সংবাদ