১৭ ডিসেম্বর ২০২০, ১২:৩২

দুর্ঘটনায় পঙ্গু কনে, তাকেই বিয়ে করে প্রশংসায় ভাসছেন যুবক

হাসপাতালে আরতি মৌর্যের পাশে অবধেশ  © এবিপি আনন্দ

পণের দাবিতে বিয়ে ভেঙে যাওয়া, বধূ নির্যাতনের খবর তো হরহামেশা পাওয়া যায়। কিন্তু পঙ্গু হয়ে যাওয়া ভাবী স্ত্রীকে সসম্মানে গ্রহণ করার খবর কয়টা আসে? এমনই দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন ভারতের উত্তর প্রদেশের প্রতাপগড়ের এক যুবক। বিয়ের আট ঘণ্টা আগে দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যাওয়া স্ত্রীকে স্ট্রেচারে শুয়ে থাকা অবস্থাতেই বিয়ে করেছেন তিনি।

১৫ বছর আগে মুক্তি পায় বলিউডে শাহিদ কপূর-অমৃতা রাওয়ের বিবাহ ছবিটি। বিয়ের ঠিক আগে অমৃতা বিশ্রীভাবে পুড়ে যান, তাঁকে হাসপাতালে বিয়ে করেন শাহিদ। তেমনি প্রতাপগড়ের কুন্ডা এলাকার বাসিন্দা আরতি মৌর্যের বিয়ে ঠিক হয়েছিল পাশের গ্রামের অবধেশের সঙ্গে। গত ৮ ডিসেম্বর তাঁদের বিয়ের কথা ছিল। সেদিনই একটি শিশুকে বাঁচানোর চেষ্টা করে ছাদ থেকে পড়ে যান আরতি।

এতে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় তাঁর শিরদাঁড়া। কোমর, পাসহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রতঙ্গও ভয়াবহ চোট পায়। সানাইয়ের শব্দ ডুবে যায় কান্নায়, আরতিকে ভর্তি করা হয় প্রয়াগরাজের এক হাসপাতালে।

চিকিৎসকরা জানান, আরতি পঙ্গু হয়ে গেছেন, বেশ কয়েক মাস বিছানা থেকে নড়তে পারবেন না। এমনকী চিকিৎসার পরও তাঁর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা কম। এই পরিস্থিতিতে বিয়ে ভেঙে যায় সাধারণত। সে কথা ভেবে আরতির বাড়ির লোকেরা আরতির বোনকে বিয়ে করার জন্য অবধেশের কাছে প্রস্তাব দেন। কিন্তু অবধেশ অন্য ধাতুতে গড়া। সাধারণ পরিবারের অতি সাধারণ চেহারার এই যুবক চলে যান হাসপাতালে, ভাবী স্ত্রীর পরিচর্যায় হাত লাগান তিনি।

অবধেশ জানিয়ে দেন, তিনি আরতিকেই বিয়ে করবেন। বিয়ের যে লগ্ন ঠিক ছিল, সে সময়েই হবে অনুষ্ঠান। যদি হাসপাতালে গিয়ে অক্সিজেনের সাহায্যে শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া আরতিকেই বিয়ে করতে হয়, তাহলেও পিছপা হবেন না তিনি। তাঁর জেদে চিকিৎসকরা ঘণ্টাদুয়েক পর অ্যাম্বুলেন্সে আরতিকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন।

এবিপি আনন্দ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আরতি তখন স্ট্রেচারে শুয়ে, অক্সিজেন, স্যালাইন চলছে। সে অবস্থাতেই তাঁকে সিঁদুর পরান অবধেশ। হয় যাবতীয় অনুষ্ঠান। শুধু শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার বদলে আরতিকে আবার নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। পরের দিন তাঁর অপারেশন হওয়ার কথা ছিল, ফর্মে সই করেন স্বয়ং অবধেশ।

বিয়ের পর এক সপ্তাহের বেশি কেটে গেছে। হাসপাতালে স্ত্রীর পাশ থেকে সরেননি অবধেশ। স্ত্রীর সেবা করে চলেছেন তিনি, দ্রুত সেরে ওঠার আশ্বাস দিচ্ছেন। চিকিৎসকরা বলেছেন, এখনও অন্তত ২সপ্তাহ আরতিকে হাসপাতালে থাকতে হবে, আগামী বেশ কয়েক মাস বিছানা ছেড়ে উঠতে পারবেন না। কিন্তু কোনও কষ্টই গায়ে লাগছে না আরতির। স্বামীর হাত শক্ত করে ধরে জীবনের এই তিক্ত-মধুর সময় হাসিমুখে কাটিয়ে দিচ্ছেন তিনি।