স্কুল-কলেজ বন্ধ, তাই শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে পাঠাচ্ছে অভিভাবকরা

নগরীর হালিশহর এলাকায় শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে যাওয়া-আসার চিত্র
নগরীর হালিশহর এলাকায় শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে যাওয়া-আসার চিত্র  © টিডিসি ফটো

করোনা সংক্রমণের মধ্যে কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনা মানছেন না অনেকেই। সরকারের নির্দেশ অমান্য করে অনেক কোচিং সেন্টারই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এসব কোচিং সেন্টারে বাইরে তালা ঝুলিয়ে রাখা হলেও ঠিকই ভেতরে ক্লাস নেয়া হচ্ছে।

সরেজমিনে চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরের এইচ ব্লক, আই-ব্লক, কে -ব্লক, এ-ব্লক, বি-ব্লক, এল-ব্লক, জে-ব্লক, ফইল্লাতলী, পানিরকল, নয়াবাজার, বড়পুলসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। এছাড়াও নগরীর বেশ কয়েকটি জায়গায় একই ‍চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।

এর আগে গত ২৫ নভেম্বর কোচিং সেন্টার চালু রাখার দায়ে নগরীর চকবাজারে তিনটি কোচিং সেন্টারকে জরিমানা করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপর থেকে ওখানকার  সব কোচিং সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। 

কোচিং সেন্টার সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনার কারণে দীর্ঘ ৯ মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রয়েছে। এতদিন ঋণ ও জমানো টাকায় চলছে সংসার চললেও এখন আর্থিক অনটনে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। তাই তারা জীবিকার তাগিদে প্রাইভেট-কোচিং শুরু করতে বাধ্য হচ্ছে।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের অভিভাকরা জানান, করোনায় দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ভেতর এক ধরনের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া বাসায় অনলাইনে ক্লাস করার আগ্রহও হারিয়েছে তারা। তাদের মতে, এ অবস্থায় পরবর্তীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হলে শিক্ষার্থীদের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে, বাড়বে ঝরে পড়ার হার। তাই শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে প্রাইভেট ও কোচিংয়ে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছি।

জানা গেছে, করোনা সংক্রমনের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেশের সব কোচিং সেন্টারও বন্ধ ছিল। তবে সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার পর ফের চালু হয়েছে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের কার্যক্রমও। তবে এসব কোচিং সেন্টারের কার্যক্রম চলছে ভিন্ন স্টাইলে। বাইরে কোচিং সেন্টারের কোনো সাইনবোর্ড না থাকলে ভেতরে কিন্তু ঠিকই চলছে কোচিংয়ের কার্যক্রম।

করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ১৭ মার্চ থেকে সরকার সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করে। এখনো এসব বন্ধ রয়েছে। তবে সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করে নগরীর হালিশহর এলাকায় সকাল-দুপুর ও বিকেলে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন এসব কোচিং সেন্টার। তাছাড়া নিয়ম করে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সাপ্তাহিক পরীক্ষাও। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি স্কুল-কলেজের অনেক শিক্ষক নিজ বাসায় অথবা ভাড়া করা কক্ষে প্রশাসনের নজরদারি এড়িয়ে নির্ভয়ে চালিয়ে যাচ্ছে প্রাইভেট–বাণিজ্য।

অন্যদিকে, করোনা সংক্রমণের ভেতর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীরাও আসছে এসব কোচিং সেন্টার ও প্রাইভেটে। এসব কোচিং সেন্টারে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরাও মানছে না স্বাস্থ্যবিধি, অনেকের মুখে নেই মাস্ক, মানা হচ্ছে না শারীরিক দূরত্ব। ফলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

নগরীর হালিশহরস্থ স্কুল পড়ুয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাসায় তেমন পড়ালেখা হচ্ছে না। এছাড়া অনলাইনে ঠিকমতো পড়া বুঝতে পারছি না। তাই কোচিং সেন্টারগুলো পুনরায় চালু করায় কোচিংয়ে ক্লাস করছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, করোনাকালে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ইতিমধ্যে চরম হুমকির মুখে। কারণ দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ভেতর একধ রনের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বাসায় অনলাইনে ক্লাস করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে অনেক শিক্ষার্থী, অনলাইন ক্লাসের নাম করে অনেক শিক্ষার্থী তড়িঘড়ি করে স্মার্টফোন কিনলেও ঠিকমতো করছে না অনলাইন ক্লাস। সারাদিন ফেসবুক, মোবাইলে গেমস আর টিভি নিয়ে ব্যস্ত থাকছে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী। এভাবে চলতে থাকলে পরবর্তীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হলে শিক্ষার্থীদের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে, বাড়বে ঝরে পড়ার হার। তাই শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে প্রাইভেট ও কোচিংয়ে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছি।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি কলেজের একজন শিক্ষক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি আমাদের আয়ের মূল উৎস। কিন্তু দীর্ঘ ৯ মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমরা পুরো বেতন-ভাতা পাচ্ছিনা। ফলে পরিবার নিয়ে শহরে বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তাই জীবিকার তাগিদে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট শুরু করতে বাধ্য হয়েছি।

করোনা সংক্রমণের মধ্যে কোচিং সেন্টার চালু রাখার বিষয়ে জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আ. স. ম জামশেদ খন্দকার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সরকারের নির্দেশনা মতে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব ধরনের কোচিং বন্ধ রয়েছে। তবে এই বিধিনিষেধ অমান্য করে কেউ যদি প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টার খোলা রাখে এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ