যে কারণে ম্যারাডোনার উল্কিতে চে গুয়েভারা, পায়ে ছিল কাস্ত্রোর ছবি
ম্যারাডোনা যে শুধুমাত্র ফুটবল মাঠের জাদুকর ছিলেন, তা নয়। তিনি ফুটবল মাঠেও প্রতিবাদী এক চরিত্র। তিনি ফিফাকেও ভয় পাননি, নিজের দেশের ফেডারেশনকেও ভয় পাননি। যা ন্যায্য মনে করেছেন, তাই করেছেন। সমাজের ক্ষেত্রেও তিনি আসলে তৃতীয় দুনিয়ার প্রতিনিধি। তাঁর বাহুতে চে গুয়েভেরার উল্কি। আর বাঁ পায়ে সযত্নে এঁকে রেখেছেন ফিদেল কাস্ত্রোর ছবি। তিনি দেখিয়েছেন হুগো সাভেজ তাঁর প্রাণের বন্ধু।
জি নিউজের এক প্রতিবেদনে শমীক লাহিড়ি লিখেছেন, ‘কলকাতায় আসার সময়ে আমি তাঁকে জানাই, কলকাতায় ফিদেলের বয়সী এক বাম নেতা আছেন, তাঁর নাম জ্যোতি বসু। তিনিও ফিদেলের মতই এক অননুকরণীয় চরিত্র। শুনেই ম্যারাডোনা বলেছিলেন, আমি ওঁর সঙ্গে দেখা করতে চাই। সময় বরাদ্দ হয়েছিল মাত্র দশ মিনিট। কিন্তু তিনি প্রায় এক ঘণ্টা ছিলেন জ্যোতিবাবুর কাছে। এতটাই আপ্লুত, শিশুর মতো সরল।’
তিনি বলেন, ফিদেল কাস্ত্রো একবার দমদম বিমানবন্দরে এসেছিলেন। সেইসময়ে জ্যোতিবাবু, প্রমোদ দাশগুপ্ত, ভবানী সেন দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেই ছবির একটা আলবাম আমরা ম্যারাডোনাকে দিয়েছিলাম। সেটা পেয়ে অসম্ভব খুশি হয়েছিলেন। যাওয়ার সময় বারবার খোঁজ নিয়েছিলেন, ওই ছবির অ্যালবামটা দেওয়া হয়েছে তো?
ম্যারাডোনা নিজের মনের বিশ্বাসকে কখনও গোপন করার চেষ্টা করেননি। সেইজন্যই অন্ধকারের দুনিয়া থেকে বেরিয়ে এসে ফিরতে পেরেছিলেন ফুটবলের কাছে। জাতীয় দলের কোচ হতে পেরেছিলেন। ম্যারাডোনা হচ্ছেন পৃথিবীর দলিত-শোষিত মানুষের হৃদয়ের জাদুকর।
ফিদেলের মৃত্যুদিবসেই প্রয়াত হলেন ম্যারাডোনা, একেবারেই অপ্রত্যাশিত। এ এক ধরনের সমাপতনও বলা যায়, আবার প্রাণের টান না মনের টান বলব জানি না। তবে তাঁর চেতনায় সমাজবাদ ছেয়ে ছিল এবং পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে যে তাঁর তীব্র ঘৃণা, তার প্রমাণ আমেরিকার বিরুদ্ধে তাঁর কণ্ঠ বরাবর চড়া সুরে বেজেছে।
তিনি বলেন, আমি দুদিন ম্যারাডোনার বাড়িতে আড্ডা দিয়েছি, তারপর কলকাতায় তিনদিন ছায়াসঙ্গীর মত ছিলাম। তাতে কাছ থেকে দেখেছি, কীভাবে ফিদেল কাস্ত্রো ম্যারাডোনাকে প্রভাবিত করেছেন। ম্যারাডোনার এই অপরাজেয় চরিত্রই তাঁকে স্মরণীয় করে রাখবে কালের বুকে।