যৌনকর্মী থেকে বিশ্বের সেরা ১০০ নারীর তালিকায় বাংলাদেশের রিনা
চলতি বছর বিবিসি সেরা একশ নারী নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে বিষয়টিতে হাইলাইট করেছে তা হলো, যারা পরিবর্তন আনতে নেতৃত্ব দিয়েছন এবং মহামারির এই কঠিন সময়েও তাদের কাজের মাধ্যমে নিজেদের আলাদা করতে সক্ষম হয়েছেন। তালিকায় আছেন ফিনল্যান্ডের কোয়ালিশন সরকার, যার প্রতিটি সদস্য নারী। এর প্রধান স্যান্না ম্যারিন এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা ভাইরাস টিকা গবেষণা দলের প্রধান সারাহ গিলবার্ট।
পাকিস্তানী অভিনেত্রী মাহিরা খান ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দারিদ্র বিমোচন বিষয়ক বিশেষ সহকারী সানিয়া নিশতার, ভারতের নাগরিকত্ব আইনবিরোধী আন্দোলনে অংশ ৮২ বছর বয়সী বিলকিস বানু। এছাড়া আরও অনেকে সুপরিচিত ব্যক্তিত্বের সাথে এ তালিকাতেই ঠাঁই পেয়েছেন বাংলাদেশের রিনা আক্তার ও রিমা সুলতানা রিমু।
রিনা আক্তারের সম্পর্কে বিবিসির বর্ণনায় বলা হয়েছে মাত্র আট বছর বয়সে তার এক আত্মীয় তাকে পতিতালয়ে বিক্রি করে দিয়েছিলো। সেখানেই তিনি বেড়ে ওঠেন ও পরে যৌনকর্মীকে পরিণত হন। কিন্তু এখন তিনি অন্য যৌনকর্মীদের জীবনমানের উন্নয়নে কাজ করছেন। করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে রিনা ও তার টিম ঢাকায় প্রতি সপ্তাহে অন্তত চারশ’ যৌনকর্মীকে খাবার সরবরাহ করেছেন। এসব যৌনকর্মীরা মহামারির কারণে চরম অর্থনৈতিক দুরবস্থায় পড়েছেন।
রিনা আক্তার বলেন, ‘লোকজন আমাদের পেশাকে ছোটো করে দেখে কিন্তু আমরা এটি করি খাবার কেনার জন্য। আমি চেষ্টা করছি যাতে এই পেশার কেউ না খেয়ে থাকে এবং তাদের বাচ্চাদের যেন এ কাজ করতে না হয়।’
অন্যদিকে রিমা সুলতানা রিমু একজন শিক্ষক এবং তিনি কক্সবাজার ভিত্তিক ইয়াং উইমেন লিডার্স ফর পিস এর একজন সদস্য। এ কর্মসূচীটি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অফ উইমেন পিসবিল্ডার্স এর অংশ, যার মূল উদ্দেশ্য সংঘাতসঙ্কুল দেশগুলো থেকে আসা তরুণ নারীদের ক্ষমতায়ন করা যাতে করে তারা নেতৃত্ব দেয়া ও শান্তির এজেন্টে পরিণত হবেন।
রিমা তার মানবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিস্থিতি মোকাবেলায়। রোহিঙ্গা শরণার্থী বিশেষ করে নারী ও শিশুদের যাদের শিক্ষার সুযোগ নেই তাদের জন্য লিঙ্গ সংবেদনশীল ও বয়সভিত্তিক স্বাক্ষরতা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন তিনি। রেডিও ব্রডকাস্ট ও থিয়েটার পারফরম্যান্সের মাধ্যমে তিনি নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ে জাতিসংঘের সিদ্ধান্তগুলো সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতেও কাজ করেছেন তিনি।
রিমা বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে লিঙ্গ সমতা আনতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। অধিকার আদায়ের জন্য নারীর শক্তিতে আমি বিশ্বাস করি।’
এ তালিকায় আরও রয়েছেন পাকিস্তানের অভিনেত্রী মাহিরা খান। তিনি যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার। রং ফর্সাকারী ক্রিম প্রত্যাখ্যান করা মাহিরা বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করাকে সমর্থন করেন। তিনি সামাজিক সমস্যা সংক্রান্ত ইস্যুগুলোকে মোকাবেলা করতে এগুলো সিনেমা ও টিভিতে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে আগ্রহী। তিনি জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনারের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করছেন।
এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং এমন আর কিছু মাধ্যমে লাখ লাখ পাকিস্তানীর জীবনমান উন্নত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ড. সানিয়া নিশতার। তিনি আছেন তালিকায়। আর ৮২ বছর বয়সী ভারতের বিলকিস বানু বেশ আলোচনায় এসেছিলেন নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নিয়ে। ভারতীয় সাংবাদিক ও লেখক রানা আইয়ুব শাহীনবাগের মুসলিমদের ধারাবাহিক কর্মসূচিতে অংশ নেয়া এই নারীকে ‘প্রান্তজনের কণ্ঠস্বর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
এছাড়া একশ নারীর তালিকায় আরও যাদের নাম আছে তাদের মধ্যে আছেন ইথিওপিয়ার ফুটবলার লোজা আবেরা জেইনোর, সিয়েরা লিওনের মেয়র ইয়ভনে আকি সাভিয়্যরে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মন্ত্রী সারাহ আল আমিরি, সিরিয়ার চলচ্চিত্র নির্মাতা ওয়াদ আল কাতিয়াব, যুক্তরাষ্ট্রের অভিনেত্রী জেন ফনডা এবং যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানী সারাহ গিলবার্ট।