জো বাইডেনের মন্ত্রীসভায় স্থান পেতে পারেন এই বাঙালি

অরুণ মজুমদার
অরুণ মজুমদার  © আনন্দবাজার

সারাবিশ্বে বাঙালি মন্ত্রী রয়েছে একমাত্র বাংলাদেশে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী-সহ সব মন্ত্রীই নিখাদ বাঙালি। আর কোনো দেশে নেই। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বঙ্গসন্তান অরুণ মজুমদারকে দিয়ে কি সেই খরা কাটতে চলেছে? জো বাইডেনের মন্ত্রীসভায় অরুণের স্থান পাওয়ার জোর জল্পনা সত্যি হলে তাই-ই হবে। ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’, ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ এবং ‘দ্য স্ট্যানফোর্ড ডেলি’ লিখেছে, বাইডেনের মন্ত্রিসভার সদস্য হতে চলেছেন অরুণ।

‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ লিখেছে, ‘হবু প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং হবু ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস যে এজেন্সি রিভিউ টিম্স-এর তালিকা প্রকাশ করেছেন, তাতে অরুণ-সহ কয়েকজন ভারতীয় বংশোদ্ভূতের নাম রয়েছে’। তার প্রকৃত নাম অরুণাভ মজুমদার। মুম্বাইয়ের আইআইটির প্রাক্তনীর পরিচিত ‘অরুণ’ মজুমদার হিসেবেই। আইআইটি থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিয়ারিংয়ে ব্যাচেলার্স ডিগ্রি পাওয়ার পর অরুণ চলে যান আমেরিকায়।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলেতে গবেষণা করেন। বর্তমানে তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেটিরিয়াল সায়েন্সের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয়ের জে প্রিকোর্ট প্রোভোস্টিয়াল চেয়ার প্রফেসরও তিনি। সঙ্গে প্রিকোর্ট ইনস্টিটিউট অব এনার্জির সহ-অধিকর্তা হিসেবেও কাজ করছেন।

আনন্দবাজার জানিয়েছে, ২০০৯ সালে সিনেটের অনুমোদন নিয়ে তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁকে অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রোজেক্ট এজেন্সি-এনার্জি (এআরপিএ-ই)-র প্রতিষ্ঠাতা অধিকর্তা মনোনীত করেন। স্ট্যানফোর্ডের আগে তিনি অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়ায় শিক্ষকতা করেছেন। আমেরিকার ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স-সহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও তিনি যুক্ত।

সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘গোটা বিশ্বের নানা প্রান্তরে বাঙালিরা ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছেন। বিশ্বজুড়ে বাঙালিরা পরিচিত তাঁদের বুদ্ধিবৃত্তির জন্য। এর আগে আমরা ব্রিটেনেও দেখেছি শামি চক্রবর্তীকে। লেবার পার্টি জিততে পারলে তিনি হয়তো মন্ত্রী হতেন। তাই অরুণ মজুমদার যদি সচিব (আমেরিকায় মন্ত্রিপদের নাম ‘সচিব’) হন, তা হলে আমি অন্তত অবাক হব না। গোটা বিশ্বের নানা দেশে বাঙালিরা যে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকবেন তাঁদের বিদ্যা এবং বুদ্ধির জন্য, সেটাই তো স্বাভাবিক।’

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক শিবাজিপ্রতিম বসুর কথায়, ‘বাইডেন-হ্যারিস শক্তিসচিব হিসাবে যাঁর কথা ভেবেছেন বলে আমেরিকার দু’টি প্রথমসারির দৈনিকের খবর, সেই অরুণ মজুমদার সত্যিই ওই পদে এলে বলতে হবে বাঙালি হিসেবে গর্ব হয়।’ একটু থেমে যোগ করেন, ‘এর সঙ্গে আরও দু’টো বিষয় বোঝা যায়। প্রথমটা হল, আমেরিকায় ভারতীয় বা সাউথ এশিয়ান কমিউনিটির গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে। কমলা হ্যারিসকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ করার সিদ্ধান্তেও সেই যুক্তি স্পষ্ট। এর অন্যতম কারণ, সেই জনগোষ্ঠী এ বার ঝুলি ভরে ডেমোক্র্যাটদের ভোট দিয়েছে। ফলে তাঁদের প্রতি একটা দায়বন্ধতা বাইডেনের থাকবে। শুধু বাঙালি বলে তো অরুণের নাম বিবেচিত হয়নি। হয়েছে সাউথ এশিয়ান, বিশেষত এশিয়ান কমিউনিটির একজন প্রতিনিধি হিসেবে। ঘটনাচক্রে তিনি বাঙালি। ফলে তা গর্বের বিষয়।’

শিবাজি আরও বলেন, ‘সত্যিই অরুণকে বাইডেন সচিব হিসাবে নিয়োগ করলে বলতে হবে ভারতের সঙ্গে আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রাখার পক্ষে তা ইতিবাচক। বারাক ওবামার সময় থেকে সম্পর্কের যে নয়া অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল, ট্রাম্প জমানাতেও তা বজায় ছিল। অরুণ তো খুবই কৃতবিদ্য শিক্ষক। তাঁর প্রচুর কাজকর্মও রয়েছে। ফলে এটা একজন মেধাবী বাঙালিকেও সম্মান জানানো। উজ্জ্বল মনীষার যে ধারা দেশ এবং বিদেশের নানা প্রান্তে ধরে রেখেছেন বাঙালিরা, তাকেও তো কুর্নিশ জানানো হল এর মধ্য দিয়ে।’


সর্বশেষ সংবাদ