১৫ অক্টোবর ২০২০, ১১:১৬

থাইল্যান্ডের রাস্তায় হাজার হাজার শিক্ষার্থী, জরুরি অবস্থা জারি

প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও রাজার ক্ষমতা কমানোর দাবিতে থাইল্যান্ডে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা  © ডয়েচে ভেলে

থাইল্যান্ডে ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ থামাতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। ফলে দেশটির কোথায় পাঁচ জনের বেশি জমায়েত বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি খবরেও সেন্সরশিপ চালু করা হয়েছে। এর আগে থাইল্যান্ডে সরকার ও রাজপরিবারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের বিক্ষোভে অচল হয়ে যায় ব্যাংকক। বুধবার রানীর গাড়ির সামনেও বিক্ষোভ দেখায় ছাত্ররা।

এসময় দাঙ্গা-বিরোধী পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দিলে ছাত্ররা তিন আঙুলের স্যালুট জানাতে থাকেন রানীকে। ছাত্রবিক্ষোভের অন্যতম প্রতীক হয়ে উঠেছে হাতের মাঝের তিন আঙুল দিয়ে প্রতিবাদী স্যালুট। প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সামনেও বিক্ষোভ চলছিল। ছাত্রদের দাবি, প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে এবং রাজপরিবারের ক্ষমতা কমাতে হবে।

এরমধ্যেই আজ বৃহস্পতিবার ভোরে প্রধানমন্ত্রী জরুরি অবস্থা জারির সিদ্ধান্তে সই করেন বলে ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। তারপর পুলিশ টিভিতে জানিয়ে দেয়, জরুরি অবস্থা জারির ফলে বড় জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তারপরই প্রধানমন্ত্রীর অফিস ও অন্য জায়গা থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়া হয়।

ছাত্ররা অবরোধ তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সফল হননি। থাই লইয়ার্স ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, তিন জন ছাত্রনেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জরুরি অবস্থা জারির ফলে পাঁচ জনের বেশি জমায়েত নিষিদ্ধ হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের বিষয়ে বলা হয়েছে, মিডিয়া এমন কোনো খবর দেখাতে বা ছাপতে পারবে না, যার ফলে মানুষ ভয় পায়, শান্তি ভঙ্গ হয় বা গোলমাল দেখা দেয় অথবা জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। এর ফলে বিক্ষোভ সংক্রান্ত খবর দেখানো বা ছাপা কার্যত অসম্ভব হয়ে গেল।

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যংককে গত কিছুদিন ধরে ছাত্র আন্দোলন চলছে। গত ১৯ আগস্ট কিং মংকুট’স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে তারা। এ সময় তিন আঙুলের স্যালুট প্রদর্শন করেন তারা। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচা ক্ষমতা দখলের পর গণতন্ত্রের দাবিতে বিক্ষোভের প্রতীক হয়ে উঠে এই স্যালুট।

জরুরি অবস্থা জারির পেছনে সরকারের যুক্তি, বিক্ষোভের ফলে দেশের স্থায়িত্ব ও সংহতি নষ্ট হচ্ছিল। শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষা করতে ও পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে কিছু জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন ছিল।

থাইল্যান্ডে ছাত্রদের বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল ফেব্রুয়ারিতে। ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টি নিয়ে আদালতের রায়ের পর। তারপর তা স্তিমিত হয়ে যায়। পরে জুন মাস থেকে তা আবার শুরু হয়। জুনে কম্বোডিয়ায় নির্বাসিত গণতন্ত্রপন্থী এক নেতা উধাও হয়ে যান। ছাত্রদের অভিযোগ, এর পিছনে থাই সরকার ও পুলিশের হাত আছে। তারাই ওই নেতাকে অপহরণ করেছে। সরকার এই দাবি মানেনি। কিন্তু ছাত্ররা বিক্ষোভ দেখাতে থাকে।

সপ্তাহান্তের বিক্ষোভে হাজার হাজার ছাত্র যোগ দেন। এত বড় বিক্ষোভ সাম্প্রতিককালে হয়নি। থাইল্যান্ডে সেনাবাহিনী খুবই শক্তিশালী। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আগে সেনা প্রধান ছিলেন। গণতন্ত্রপন্থী ছাত্ররা সেনা-প্রভাবিত সরকারের বিরুদ্ধে। তারা রাজপরিবারের ক্ষমতাও ছাঁটাই করতে চায় বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।