‘ওই রকম মেয়েদের দেহ বাজরাখেতেই মেলে’— বিজেপি নেতার মন্তব্য!

বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিজেপি নেতা রঞ্জিতবাহাদুর শ্রীবাস্তব
বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিজেপি নেতা রঞ্জিতবাহাদুর শ্রীবাস্তব  © আনন্দবাজার

ভারতে হাথরসের নির্যাতিতা দলিত তরুণীর ন্যায়বিচারের দাবিতে সোচ্চার গোটা দেশ। গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তদন্ত নিয়ে কাঠগড়ায় যোগী প্রশাসন। সেই আবহেই উত্তরপ্রদেশের একের পর এক বিজেপি নেতা ছুড়ে দিচ্ছেন লিঙ্গ বৈষম্যমূলক মন্তব্য। বিজেপি বিধায়ক সুরেন্দ্রনারায়ণ সিংহের পর এ বার বিতর্কিত মন্তব্য করলেন বারাবঁকির বিজেপি নেতা রঞ্জিতবাহাদুর শ্রীবাস্তব। অভিযুক্তদের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি প্রশ্ন তুললেন, অত্যাচারের জেরে মৃত দলিত তরুণীর চরিত্র নিয়ে।

বিজেপি নেতা রঞ্জিতের মতে, হাথরস কাণ্ডের অভিযুক্তরা ‘নির্দোষ’ এবং নির্যাতিতা তরুণী ‘আওয়ারা’। তাঁর দাবি, অভিযুক্তের সঙ্গে ১৯ বছরের দলিত তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তিনি বলেছেন, ‘১৪ সেপ্টেম্বর নির্যাতিতা অভিযুক্তকে খেতে আসার জন্য বলেছিল। কারণ তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এই খবর সংবাদ মাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়াতে ইতিমধ্যেই বেরিয়েছে।’ খবর: আনন্দবাজার।

এখানেই ক্ষান্ত হননি বারাবঁকির ওই নেতা। এক ধাপ উপরে উঠে, ‘এ ধরনের মেয়েদের’ দেহ সাধারণত কোথায় পাওয়া যায় তা নিয়েও নিজের মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, ‘এই ধরনের মেয়েদের দেহ আখ, ভুট্টা, বাজরা খেত বা ঝোপজঙ্গলেই পাওয়া যায়। কেন এদের দেহ ধান বা গম খেতে মেলে না?’ রঞ্জিতের ধারণা, হাথরসের তরুণীর মৃত্যুর ঘটনা ‘অনার কিলিং’।

হাথরসে অভিযুক্ত উচ্চবর্ণের চার অভিযুক্ত যুবকদের ব্যাপারে যথেষ্ট সংবেদনশীল বিজেপির ওই নেতা। অভিযুক্তদের পক্ষে তাঁর প্রশ্ন, ‘আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি ছেলেগুলো নির্দোষ।’ সিবিআই চার্জশিট না দেওয়া পর্যন্ত অভিযুক্তদের জেলে না রাখারও দাবি করেছেন তিনি। কারণ, ‘প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্তদের জেলে রাখলে তাঁদের মানসিক নির্যাতন হবে। এর ক্ষতিপূরণ কি সরকার দেবে? তাঁদের হারানো যৌবন কে ফিরিয়ে দেবে?’

রঞ্জিতের এই মন্তব্য কানে গিয়েছে জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রধান রেখা শর্মার। তিনি বলেছেন, ‘উনি কোনও দলেরই নেতা হওয়ার যোগ্য নন। নিজের আদিম ও অসুস্থ মানসিকতা দেখিয়ে দিচ্ছেন তিনি। আমি শীঘ্রই তাকে নোটিস পাঠাবো।’

এই প্রথম নয়। এর আগেও একাধিকবার নারীবিদ্বেষী ও সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করেছেন বারাবঁকীর ওই বিজেপি নেতা। সীতাপুর, লখনউসহ বেশ উত্তরপ্রদেশের বেশ কয়েকটি জেলার তাঁর বিরুদ্ধে মোট ৪৪টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এর আগে বালিয়ার বিজেপি বিধায়ক সুরেন্দ্র নারায়ন সিংহ ধর্ষণ রুখতে ছোটবেলা থেকে মেয়েদের নীতিশিক্ষার কথা বলে বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, ‘ধর্ষণ রোখা যেমন সরকারের ধর্ম, তেমনই পরিবারের উপরও এই দায় বর্তায়। সরকার তো নিরাপত্তা দেবেই, কিন্তু মেয়েকে ভাল শিক্ষা দেওয়া, ছোট থেকে তার মনে নীতিবোধ ঢুকিয়ে দেওয়া পরিবারেরই কর্তব্য। সব বাবা-মায়ের উচিত, ছোট্ট থেকে মেয়েদের নীতিশিক্ষা দেওয়া, সংস্কার শেখানো।’

হাথরস গণধর্ষণে অভিযুক্তদের পক্ষে দাঁড়িয়ে সওয়াল রঞ্জিত প্রথম করলেন না। সারা দেশ যখন দলিত নির্যাতিতার জন্য ন্যায়বিচারের দাবিতে সোচ্চার। তখন স্থানীয় পঞ্চায়েত ‘উচ্চবর্ণের লোকেদের ফাঁসানো হচ্ছে’ বলে অভিযুক্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। উন্নাও ধর্ষণ ও কাঠুয়া কাণ্ডেও অভিযুক্তদের সমর্থনে ক্ষমতাসীন দলের গলা চড়ানো সামনে এনেছিল ভারতীয় সমাজের বৈষম্যের ছবি।

ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন


সর্বশেষ সংবাদ