কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যুক্তরাষ্ট্রে করোনার তৃতীয় ঝড়!
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কলেজ প্রশাসক ও সরকারি কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফেরার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তারা যদি নিজেদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন তবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত করেই বলা যায় যে এখন তারা ভাইরাল সংক্রমণের বিস্তৃতিতে নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন। আগামী থ্যাংকসগিভিংয়ের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করেই যার নতুন সূচনা হতে পারে।
দেশটিতে কভিড-১৯ সংক্রমণ এখন ছাত্রছাত্রীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ এখনও খুব বেশি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী কিংবা মৃত্যুর মুখোমুখি হয়নি। যেসব কলেজ ব্যক্তিগতভাবে ক্লাস নেয়ার চেষ্টা করেছে তাদের শিক্ষার্থীদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে হয়েছে।
গত সপ্তাহে নিউ জার্সি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ডরমিটরির পানির বর্জ্যে ভাইরাস পাওয়ার পর একাই ৩০০ জনকে কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়েছিল। একইভাবে সংক্রমণ বাড়ার পর ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিনও শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দিয়েছিল আলাদা থাকার জন্য। এদিকে ফ্লোরিডার স্টেট ইউনিভার্সিটির ফুটবল কোচ ঘোষণা দেন যে তিনি টেস্টে পজিটিভ এসেছেন।
স্কুলগুলো ছুটিতে তাদের সেমিস্টার শেষ করার পরিকল্পনা করছিল। ফলে শিক্ষার্থীরা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং তাদের কেউ কেউ সঙ্গে করে রোগ নিয়ে আসে। ফিজিশিয়ান গাভিন ইয়ামে বলেন, এটা আমাদের বাজে দুঃস্বপ্নের চেয়েও বেশি কিছু। এটি খুবই হতাশাজনক এবং জাতীয় দুর্যোগ। কোনো কোনো দিক থেকে আপনি একে তৃতীয় ঝড় হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন। এই তৃতীয় ঝড় হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় খোলার ঝড়। এটি নিজেদের স্ব-প্রণোদিত হয়ে সৃষ্টি করা একটি জাতীয় ক্ষত।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যখন শিক্ষার্থীদের ফল সেমিস্টারে ফিরে আসতে বলে সেটি রক্তপাতের বিনিময়ে অর্থ আদায়ের মতো সিদ্ধান্ত ছিল। ভিড় টেনে আনার সম্ভাবনা সত্ত্বেও কেউ কেউ লাভজনক ফুটবল প্রোগ্রাম নিয়ে এগিয়ে এসেছিল। শিক্ষার্থীরা ফিরে আসে এবং সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করে। অনেক স্কুলের এখন যারা টেস্টে পজিটিভ এসেছে তাদের রাখার জায়গা নেই। প্রশাসকরা সংক্রমণকে সীমিত করতে হিমশিম খাচ্ছেন, যেখানে শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের বাইরে কফি খেতে কিংবা সময় কাটাতে বারে ও পার্টিতে চলে যাচ্ছে।
এখন সংক্রমিতরা যদি বাসায় ফিরে যায়, তবে এ ঝুঁকি থাকে যে প্রাদুর্ভাব গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। এমন একটি প্রাদুর্ভাব যা কিনা বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় খোলার সঙ্গে জড়িত।
জরুরি ব্যবস্থা
মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি (এমএসইউ) সব ভার্চুয়াল ক্লাসের সব শিডিউল মধ্য আগস্টে বদলে দেয়, এটি তারা করে শিক্ষার্থীদের বাড়ি যাওয়া ঠেকাতে। কিন্তু ক্যাম্পাসের বাইরের আবাসনে যারা থাকে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এমএসইউর ঘরোয়া রাজ্য ইনগাম গত সপ্তাহে ক্যাম্পাসের বাইরের শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের নির্দেশ দেয়।
এদিকে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কলোরাডোতে শিক্ষার্থীদের দুই সপ্তাহের কোয়ারেন্টিনে থাকার কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়। এখানে সংক্রমিত হওয়া বেশির ভাগেরই বয়স হচ্ছে ১৮ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে।
নীরব বাহক
কাইজার ফ্যামিলি ফাউন্ডেশনের গ্লোবাল হেলথ পলিসির অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর জস মিচাউড বলেন, কলেজ শিক্ষার্থীদের মাঝে যারা আক্রান্ত, তাদের খুব অল্প জনকেই হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় কিংবা মৃত্যুবরণ করেন। কারণ তরুণরা সাধারণত মৃদু উপসর্গযুক্ত হয়ে থাকেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা কেবলই কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলগুলো খোলার প্রভাব দেখতে শুরু করেছি। এটা বিস্তৃতভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে দেবে কিনা তা আমরা এখনো জানি না।
তিনটি কলেজ শহরে সংক্রমণের বাড়তি রূপ দেখা গেছে, যার ফলে সম্প্রতি সপ্তাহগুলোতে মাথাপিছু হিসেবে তারা দেশের সর্বাধিক সংক্রমিত এলাকায় পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, যদিও শহরগুলোতে আশপাশের কমিউনিটিতে সংক্রমণের বিস্তৃতি দেখা যায়নি। ভার্জিনিয়া স্বাস্থ্য বিভাগের মুখপাত্র বলেন, এটা রোধ করার জন্য আমরা প্রতিদিন কাজ করছি।