১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৫২

বাংলাদেশের সমাজ নষ্ট হয়েছে বুদ্ধিজীবীদের কারণে: তসলিমা নাসরিন

  © ফাইল ফটো

সম্প্রতি সমালোচিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মেয়েদের বোরকা পড়ার বিরুদ্ধে লেখালেখি করলেও এবার একটু অন্য মন্তব্য করেন তিনি। তার দেয়া ফেসবুকের স্টেটাস নিচে দেয়া হল।

বোরকার বিরুদ্ধে সাতের দশক থেকে বলছি, ঘরে বাইরে আন্দোলন করছি। বোরকার সমালোচনা আটের দশক থেকে করছি। ২০১০ সালে বোরকা নিয়ে আমার একটি লেখার কারণে মুসলমান মৌলবাদিরা দাঙ্গা বাঁধিয়েছে কর্ণাটকে। আগুনে পুড়িয়েছে বাস ট্রাক দোকানপাট, ভাংচুর করেছে পত্রিকা অফিস, দু'জনের মৃত্যুও হয়েছে। বোরকার নিন্দে করলে কী ভয়ানক কাণ্ড ঘটে যেতে পারে, তা প্রত্যক্ষ করেছি। বোরকা সম্পর্কে আমার অগুনতি রচনা পড়ে কারও কারও চক্ষু খুলেছে। কিন্তু সে তো হাতে গোনা। অগুনতি মেয়ে আজকাল বোরকায় শরীর মুড়িয়েছে।

আজ আমি বোরকা নিয়ে মন্তব্য করার বদলে প্রশ্ন করতে চাই বাংলাদেশের মেয়েরা কেন বোরকা পরছে, দোষ কার? বাংলাদেশে হাট মাঠ ঘাট দখল করে নিয়েছে ধর্ম ব্যবসায়ীরা, দোষ কার? বাংলাদেশের ইস্কুল কলেজ অফিস আদালত দখল করে নিয়েছে কূপমণ্ডূক ধার্মিকেরা, দোষ কার? বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল, প্রচারমাধ্যম, সংগঠন সংস্থা দখল করে নিয়েছে মৌলবাদিরা, দোষ কার? দোষ কি ধর্মের? ধর্ম একটা আইডিওলজি। আইডিওলজির কোনও দোষ নেই, একে না মানলেই এ মরে যায়। সরকারের দোষ? সরকার যেদিকে হাওয়া সেদিকে যায়। সরকারেরও দোষ ততটা নয়। দোষ তাহলে কার?

আমি মনে করি দোষ বুদ্ধিজীবীদের। কারণ বুদ্ধিজীবীরা জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন। ছেড়ে দিয়েছে্ন বলেই হাট মাঠ ঘাট দখল করেছে সমাজের শত্রুরা। যেখানে বুদ্ধিজীবী এবং শিল্পী সাহিত্যিকদের নাটক থিয়েটার নৃত্য আবৃত্তি সঙ্গীত পালাগান করার কথা, মুক্তবুদ্ধি আর মানবাধিকার বিষয়ে যুবসমাজকে উদবুদ্ধ করার কথা, মানুষকে সভ্য শিক্ষিত সচেতন করার কথা, সেখানে আজ ধর্ম ব্যবসায়ীরা নারী-বিরোধী ওয়াজ করে মানুষের মগজ ধোলাই করে। বুদ্ধিজীবীদের যেখানে ইস্কুল কলেজ অফিস আদালতকে ধর্ম থেকে দূরে রাখার কথা, সেখানে ধর্ম ব্যবসায়ীরা মসজিদ মাদ্রাসা খুলে ছেলেমেয়েদের মগজ ধোলাই করে।

কী করেছেন বুদ্ধিজীবীরা এতকাল? কী আর করেছেন? ক্ষমতাসীনদের পেছনে দৌড়েছেন, এই পুরস্কার ওই সুবিধে বাগিয়েছেন আর আখের গুছিয়েছেন। সমাজ উচ্ছন্নে গেলে তাঁদের কিচ্ছু যায় আসেনা। এই যে দল সংগঠনগুলো নিরবধি ধর্ম জপছে, কেন? বুদ্ধিজীবীরা মুখ বুজে থেকে এই সর্বনাশটি হতে দিয়েছেন। আমি আগেও বলেছি, আজও বলছি, মৌলবাদিরা ধর্মের ব্যবসা করে আসছে , করবে। এটাই তাদের পেশা। সরকারও স্বার্থান্ধ। নিতান্তই চোর গুণ্ডার সমষ্টি। চিরকাল। এরা নষ্টই, এরা নষ্ট হলে সমাজ নষ্ট হয় না। কিন্তু বুদ্ধিজীবীরা নষ্ট হলে সমাজ নষ্ট হয়। বাংলাদেশের সমাজ আজ নষ্ট সমাজ। সম্পূর্ণই বুদ্ধিজীবীদের কারণে।