সন্তানের সামনেই কৃষ্ণাঙ্গ বাবাকে সাতটি গুলি পুলিশের!
যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিসের পরে এ বার উইসকনসিন প্রদেশের কেনোশা শহর। ফের পুলিশি বর্বরতার শিকার হলেন কৃষ্ণাঙ্গ যুবক। মিনিয়াপোলিসের প্রকাশ্য রাস্তায় জর্জ ফ্লয়েডের ঘাড়ে পা দিয়ে চেপে ধরে তাঁকে মেরেই ফেলেছিল এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার।
আর রবিবার কেনোশায় জেকব ব্লেক নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবককে পিছন থেকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে পর পর সাতটা গুলি চালানোর অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। অস্ত্রোপচারের পরে ছেলের অবস্থা এখন স্থিতিশীল বলে ফেসবুকে জানিয়েছেন জেকবের বাবা।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ বিক্ষোভে ফের উত্তাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ফলে চাপ বাড়ল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও।
ওই ঘটনার পরপরই পুলিশকে লক্ষ্য করে স্থানীয়েরা লাগাতার ইট ও বোতল-বোমা ছুড়তে শুরু করেন। রাতে বেশ কয়েকটি গাড়িও জ্বালিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। শহর জুড়ে কার্ফু জারি করে পুলিশ। সেখানে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে ঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের।
এদিকে পুলিশের কাছে ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট চেয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। পুলিশের দাবি, গুলিতে জখম ওই যুবককে তারাই নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করায়। কিন্তু একজন নিরস্ত্রকে কেন এভাবে পিছন থেকে গুলি করতে হল, তার ব্যাখ্যা দেয়নি কেনোশা পুলিশ।
পুলিশের দাবি, দুই পরিবারের মধ্যে গোলমালের খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে আসেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ফোনের ফুটেজে দেখা গেছে নিরস্ত্র জেকবকে পুলিশের সেই গুলি করার দৃশ্য। মাথা নিচু করে রাস্তায় পার্ক করা নিজের এসইউভির দিকে হেঁটে আসছিলেন তিনি। পরনে সাদা হাতকাটা গেঞ্জি আর কালো হাফ প্যান্ট। পিছন-পিছন দুই পুলিশ অফিসার। হাতে পিস্তল।
এক সময় জেকবের গেঞ্জি ধরে টানতে শুরু করল এক অফিসার। কোনও বাধা দেওয়া চেষ্টা করেননি জেকব। তারপর তিনি ড্রাইভিং সিটের দিকে গাড়ির দরজা খুলতেই শুরু হল গুলিবৃষ্টি। ভিডিওতে অন্তত সাতটি গুলির শব্দ পাওয়া গিয়েছে।
তবে গুলি এক জনই চালিয়েছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়। ঘটনার প্রতিবাদে মুহূর্তে জড়ো হয়ে যাওয়া ভিড় মারমুখী হয়ে ওঠে। তাঁদের ছোড়া ইট ও বোতল-বোমায় এক পুলিশ সদস্য আহত হন।
ওই ভিডিও সামনে আসতেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে নেট-দুনিয়ায়। টুইটারে জর্জ ফ্লয়েডের পারিবারিক আইনজীবী বেল ক্রাম্পের দাবি, ঘটনার সময়ে গাড়ির মধ্যেই বসেছিল জেকবের তিন ছেলে। তাঁর প্রশ্ন, ‘চোখের সামনে পুলিশের এই নির্মম অত্যাচার দেখে বাচ্চাগুলোর কী অবস্থা হল, কেউ ভেবে দেখেছেন? আমাদের সন্তানরা বোধ হয় আরও ভাল জীবন প্রত্যাশা করে।’
পুলিশকে কাঠগড়ায় তুলে যথাযোগ্য বিচারের দাবি তুলেছেন উইসকনসিনের গভর্নর টনি এভার্সও। ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করে দিয়েছে প্রদেশের বিচারবিভাগ। দোষীদের শাস্তি চাইলেও শান্তি বজায় রাখার আহবান জানিয়েছেন জেকবের মা। খবর: আনন্দবাজার।