শুধু বাইক চালানো ছবি দেখে আমার চরিত্রের সনদ দিয়ে দিলেন?

নাম ফারহানা আফরোজ, বাড়ি যশোর শহরে। গত ১৩ আগস্ট নিজের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে বাইক চেপে ব্যতিক্রমী গায়ে হলুদের আয়োজন করেন তিনি। যেখানে দেখা যায়, গায়ে হলুদের সাজে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন তিনি। তার পেছনে একদল যুবক, মোটরসাইকেলে করে শোভাযাত্রা করা তাদের গায়েও একই রঙের পাঞ্জাবি। এমন ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

মূলত সে বিষয়টি নিয়েই সামাজিক যোগাযোগামধ্যমে ইতিবাচক-নেতিবাচক নানা মন্তব্য এসেছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন সেই ছাত্রী।

‘নতুন কিছু দেখলে সবাই হুমড়ে পড়বে। ভাল খারাপ সবই বলবে’ শিরোনামে ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, আমি ফারহানা আফরোজ; বর্তমান ফেসবুকে খুব ভাইরাল হচ্ছে আমাকে নিয়ে। কিন্তু আমি কি বলেছি আমাকে ভাইরাল করো। আমি নিজে বাইক চালাই। ঢাকাতে থাকি, অহ রহ ছেলেরা হলুদে বাইক নিয়ে এন্ট্রি দিচ্ছে। আমি মেয়ে হয়ে বাইক চালাতে পারি। তাই ভাবলাম বাইক চালিয়েই এন্ট্রি দেই।

এখন করোনাকালীন সময়ে বিয়ের প্রোগ্রাম করতে থানা থেকে অনুমতি প্রয়োজন হয়। আমার ক্ষেত্রেও তার ভিন্ন ছিল না। সকল অনুমতি নিয়েই আমার হলুদ ও বিয়ের প্রগাম। সবই ঠিক থাকত। মেকাপ, ড্রেস, সাজ। এত কথাও হত না, যদি বাইক নিয়ে পার্লার থেকে প্রোগ্রামে না যেতাম।

কথা হলো। ভাল খারাপ সব হলো। আমার ছবি আমার থেকে অনুমতি না নিয়ে গ্রুপে পেজে বাজে পোস্ট। একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি টিপু ভাই sk media নিউজ করল কেন? আজ মেয়ে হয়ে বাইক চালিয়ে এন্ট্রি তাই? কত মেয়ে বাইকার আজ বাংলাদেশ। তাহলে আমি যদি হলুদে-তে বাইক চালিয়ে ঢুকি, কিছু মানুষের এত সমস্যা যে গ্রুপে বাজে পোস্ট তো বটেই। কিন্তু ইউটিউবে ট্রোল। এগুলো কি মেনে নেওয়া যায়? উনি খুব বড় ইউটিউবার। তার থেকে অন্তত এটা আশা রাখি না।

আমার সাথে এটা হয়েছে; আমি চাই না এমন হ্যারাজমেন্ট আর কোন মেয়ে বা লেডি বাইকারের সাথে হোক। এমনিতেই সমাজে আমারা যারা বাইক চালাই. তাদের অনেকের কথার সাথে লড়াই করতে হয়। ধীরে ধীরে এগুলো কমবে তা না; বেড়েই চলেছে। আর কতদিন দেখব আমাদের সাথে এই অত্যাচার জানি না।

যেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী মেয়ে, স্পিকার মেয়ে, দেশ মেয়েরা চালাই; সেখানে একটা মেয়ে যে বাইক জানে তার বাইক চালনো কেন সমাজ ভালোভাবে নিচ্ছে না? নিচ্ছে না মানলাম কিন্তু তার চরিত্র নিয়ে কথা আজে-বাজে। এগুলো কিভাবে সহ্য হয়? আমারও পরিবার আছে। বর আছে শশুরবাড়ি আছে। আমার বর শশুরবাড়ি না হয় আমার পক্ষে আছে। আমার কোন সমস্যা নাই। কিন্তু সমস্যা না থাকলেই কি এভাবে একটা মেয়ের চরিত্র নিয়ে কথা বলতে হবে? শুধু বাইক চালানো ছবি দেখে সবাই আমার চরিত্র সনদ দিয়ে দিল? এগুলোর বিচার কি হবে?

ফারহানার বাড়ি যশোর শহরের সার্কিট হাউসের সামনে। ২০১১ সালে যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। পরে ২০১৩ সালে আব্দুর রাজ্জাক কলেজ থেকে পাস করেন এইচএসসি। এখন ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি থেকে এইচআর-এ এমবিএ পড়াশোনা করছেন।

ফারহানা জানান, ২০০৭ সাল থেকে বাইক চালান তিনি। বিয়ের অনুষ্ঠানকে ব্যতিক্রমী করার ভাবনা থেকেই এমন আয়োজন করেছেন।

পড়ুন: ভাইরাল বাইকে করে গায়ে হলুদের ভিডিও


সর্বশেষ সংবাদ