১৮ আগস্ট ২০২০, ০৯:১৫

অভিবাসী শিশুদের আটকে রাখছে বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা

  © ফাইল ফটো

আমেরিকায় অভিবাসী শিশু ও তাদের পরিবারকে আটকে রাখার জন্য বড় হোটেল চেইনগুলোকে ব্যবহার করছে। এসব শিশুদের দেখাশোনার দায়িত্ব আবার বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের ওপর দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এটি কোন নিয়মের মধ্যে পড়ে না বরং অভিনব এক ছায়াব্যবস্থার জন্ম দিচ্ছে।

অবৈধ অভিবাসনের কারণে আটকে রাখা এসব শিশুদের সুরক্ষার বিষয়টি অনুসৃত নীতি তার কোনো তোয়াক্কা করছে না ট্রাম্প প্রশাসন। এ–সম্পর্কিত সরকারি বিভিন্ন নথি ও আদালতের নথির বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন হোটেলে অভিবাসীদের আটক রাখার কাজটি সম্পন্ন হচ্ছে এমভিএম ইনকরপোরেশন নামের একটি বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সীমান্ত বন্ধের যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তারই ধারাবাহিকতায় গত কয়েক মাসে আমেরিকায় অভিবাসী আটকের ঘটনা ব্যাপক হারে বেড়েছে।

করোনা পরিস্থিতির পর থেকে এখন পর্যন্ত শিশুসহ এক লাখের বেশি অভিবাসীকে আটক করেছে দেশটি। কিন্তু এই পদক্ষেপের মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসন কমেনি। বরং সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে অভিবাসন প্রত্যাশীদের প্রবেশ বেড়েছে। বৈধ পথ সংকুচিত হওয়াটা এর অন্যতম কারণ। এই অবৈধ অভিবাসনের হার বেড়ে যাওয়ায় সরকারি আটক কেন্দ্রগুলোয় আর বন্দীদের রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় বিভিন্ন হোটেলে বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে আটক অভিবাসীদের রাখা শুরু হয়।

এমভিএম ইনকরপোরেশন ২০০৮ সাল থেকেই ফেডারেল বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে এখন পর্যন্ত মার্কিন ফেডারেল বিভিন্ন সংস্থার হওয়া চুক্তির আর্থিক মূল্য ১৯০ কোটি ডলারের সমান।

আইসের ডিটেনশন প্ল্যানিং অ্যান্ড পলিসি বিভাগের সাবেক উপসহকারী পরিচালক ক্লেয়ার ট্রিকলার-ম্যাকনাল্টি নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি অনেক দিন ধরে কাজ করছে। তাদের নির্দেশ দিলেই, তারা কাজ সম্পন্ন করে দেয়। তারা পারে না এমন কোনো কাজ নেই।

করোনাকালীন সময়ের আগে প্রতিষ্ঠানটি শুধু সীমান্ত এলাকা থেকে আটক অভিবাসীদের বিভিন্ন আটক কেন্দ্রে আনা-নেওয়ার কাজ করত। বর্তমান পরিস্থিতিতে আটকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায়, তাদের কাজের পরিমাণও যায় বেড়ে। তারা এখন শুধু বন্দীদের পরিবহনও নয়, আটক রাখার কাজটিও করছে। আর তাদের তত্ত্বাবধানে আটক বন্দীদের অধিকাংশই শিশু, যা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বিগ্ন করছে সবাইকে।

এদিকে হোটেলে অভিবাসীদের আটকে রাখার ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়েছে প্রশাসন। এরই মধ্যে এ ধরনের চর্চা বন্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে বিভিন্ন আইনজীবী গোষ্ঠী। তারা বলছে, এটি শিশুদের এক অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে, যেখানে সুরক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত সীমিত। এটি একই সঙ্গে মার্কিন আশ্রয়ণ আইনেরও লঙ্ঘন, যা আশ্রয়প্রার্থীদের উল্টো প্রাণসংশয়ের ঝুঁকিতে ফেলছে।

নিউইয়র্ক টাইমস–এর প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক সময় খুবই অল্প বয়সের কিছু শিশু সীমান্ত এলাকায় আসে। তাদের সঙ্গে এমনকি তাদের মা-বাবাও থাকেন না। এই শিশুদেরও আটক করে হোটেলে রাখা হচ্ছে এমন বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে, যাদের শিশুদের দেখভাল করার কোনো প্রশিক্ষণ বা সনদ নেই।

আমেরিকার ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) কর্মকর্তারা বলছেন, হোটেলে আটক থাকা শিশুদের যথাযথ যত্ন নেওয়া হচ্ছে। দেশকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য এ ধরনের পদক্ষেপ জরুরি ছিল।

গত মাসে প্রথম হোটেলে অভিবাসীদের আটক রাখার বিষয়টি সামনে আসে। সে সময় নিউইয়র্ক টাইমস–এর প্রতিবেদনে জানানো হয়, সান দিয়েগোর কোয়ালিটি সুইটস, ফোনিক্সের হ্যাম্পটন ইনস, এল পাসোর ম্যাকঅ্যালেন, মায়ামির কমফোর্ট সুইটস হোটেল, লস অ্যাঞ্জেলেসের বেস্ট ওয়েস্টার্ন ও সিয়াটলের ইকোনো লজে অন্তত ৮৬০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে আটক রাখা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন হোটেলে প্রায় ৯০০ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে আটক রাখা হয়, যেখানে ফেডারেল আটক কেন্দ্রের তুলনায় স্বাস্থ্যসুরক্ষা ও নিরাপত্তাব্যবস্থা খুবই সীমিত।

এ বিষয়ে সাবেক এক অভিবাসন কর্মকর্তা বলেন, আটককৃত এসব অভিবাসীদের একটি বড় অংশই শিশু। এই শিশুদের অধিকাংশই আবার সীমান্ত অতিক্রম করেছে সরাসরি অভিভাবক ছাড়া। মা-বাবারা সাধারণত তাঁদের সন্তানদের একাই মার্কিন সীমান্তে আশ্রয় প্রার্থনার জন্য পাঠাতে চান। কারণ, কোনো অভিভাবক সঙ্গে না থাকলে শিশুদের পক্ষে আশ্রয় পাওয়াটা তুলনামূলক সহজ।