২৭ জুলাই ২০২০, ১২:০২

ভারতের ড্রোন ধ্বংস করে দিল পাকিস্তান

  © ডয়েচে ভেলে

চীনের সঙ্গে সংঘাত মিটতে না মিটতেই পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন বিতর্কে জড়ালো ভারত। সোমবার পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বিবৃতি জারি করে দাবি করেছে, ভারতের একটি ড্রোন পাকিস্তান ভূখণ্ডে ঢুকেছিল। সেটিকে গুলি করে ধ্বংস করা হয়েছে।

সীমান্ত পেরিয়ে ভারতীয় ড্রোনটি পাকিস্তানে ঢুকে ছবি তুলছিল বলে পাক সেনার দাবি। তবে ভারত এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও জবাব দেয়নি। লাইন অফ কন্ট্রোলের পাণ্ডু সেক্টরে ড্রোনটি দেখা গিয়েছিল বলে জানিয়েছে পাক সেনা। গুলি করার পর তার ধ্বংসবশেষ পাকিস্তান সীমান্তে পড়েছে বলে জানানো হয়েছে।

সীমান্ত পেরিয়ে প্রায় ২০০ মিটার ঢুকে পড়েছিল ড্রোনটি। পাক সেনার দাবি, এ নিয়ে এ বছর ১০টি ভারতীয় ড্রোনকে গুলি করে ধ্বংস করা হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে জম্মু-কাশ্মীর সেক্টরে ভারত-পাক সীমান্তে লাগাতার গোলাগুলি চলছে। দুই দেশেরই অভিযোগ, অন্য দেশ অনাক্রমণ চুক্তি লঙ্ঘন করে গোলা বর্ষণ করছে। তারই মধ্যে কাশ্মীরে একাধিক সংঘর্ষ হয়েছে।

সেনাবাহিনীর সঙ্গে হিজবুল-সহ একাধিক গোষ্ঠীর সংঘর্ষ হয়েছে। তাতে দুই পক্ষেরই প্রাণহানি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পাক সেনা বাহিনীর এই বিবৃতি সীমান্তে উত্তেজনা আরও বাড়াবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এমনিতেই গত কয়েক মাস ধরে সীমান্ত নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে আছে ভারত। লাদাখ সীমান্তে চীনের সঙ্গে সংঘাত হয়েছে।

কূটনৈতিক মহলে আলোচনা চললেও লাদাখ বিতর্কের অবসান হয়নি। দুই পক্ষ গালওয়ান অঞ্চল থেকে সেনা সরালেও প্যাংগং থেকে সৈন্য সরায়নি। চীন এখনও প্যাংগংয়ের ফিঙ্গার পয়েন্ট পাঁচ থেকে আটে সৈন্য মজুত রেখেছে।

সেনা সূত্রের খবর, দুই পক্ষই প্রায় ৪০ হাজার সেনা মজুত রেখেছে সীমান্তের কাছাকাছি অঞ্চলে। ডেপাসং অঞ্চল থেকেও চীন সেনা সরায়নি বলে ভারতীয় সেনা সূত্র জানাচ্ছে। তারই মধ্যে শনিবার ভারতীয় উপগ্রহ কৌটিল্য অরুণাচল এবং চীনের সীমান্ত থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছবি সংগ্রহ করেছে বলে সেনা সূত্র জানিয়েছে। সেই ছবিতে অরুণাচল এবং তিব্বতের সীমান্তে চীনা সেনার তৎপরতা লক্ষ্য করা গিয়েছে।

রোববারও ভারত এবং চীনের সেনা অফিসাররা বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানে প্যাংগং, ডেপসং নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কোনও সমাধান সূত্র মেলেনি। কূটনৈতিক স্তরেও দুই দেশের মধ্যে লাগাতার আলোচনা চলছে। তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, আগামী শীতে ভারতের সীমান্ত ধরে বড় সড় সংঘাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পাকিস্তান এবং চীন একসঙ্গে ভারতের বিরুদ্ধে সংঘাতে নামতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

সে ক্ষেত্রে ভারতকে এক দিকে উত্তর পূর্বে অরুণাচল এবং সিকিমে চীনের বিরদ্ধে লড়াই করতে হবে। অন্য দিকে লাদাখ এবং হিমাচলে চীনকে আটকাতে হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত চালাতে হবে কাশ্মীর, পাঞ্জাব এবং রাজস্থান সেক্টরে। অর্থাৎ, দীর্ঘ সীমান্ত অঞ্চলে ভারতকে সেনা প্রস্তুত রাখতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সে কারণেই সীমান্তের বিভিন্ন সেক্টরে প্রতিবেশী দেশের সেনার শক্তি বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করছে ভারত। বালাকোটের ঘটনা এবং তারপর কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ তুলে দেওয়ার পরে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। সেই সুযোগই চীন ব্যবহার করছে বলে বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য।

বস্তুত, গত এক বছরে পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক চোখে পড়ার মতো ভালো হয়েছে। ফলে শীতকালে দুই পক্ষ একসঙ্গে ভারতের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। খবর: ডয়েচে ভেলে।