১৭ জুলাই ২০২০, ০৮:৩১

বাংলাদেশে ভুয়া করোনা সনদ বিক্রির রমরমা ব্যবসা: নিউইয়র্ক টাইমস

  © সংগৃহীত

সাম্প্রতি বাংলাদেশের ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট বিক্রির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল ইতালির গণমাধ্যমে। দেশটির জনপ্রিয় গণমাধ্যমের প্রধান শিরোনামে ছিল বাংলাদেশ। এবার হাসপাতালে ভুয়া করোনা নেগেটিভ সনদ বিক্রি নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বিশদ প্রতিবেদন করেছে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘নিউইয়র্ক টাইমস’।

এতে বলা হয়েছে, গত বুধবার বোরকা পরে নারী সেজে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সীমান্ত থেকে গ্রেফতার হয়েছেন ‘পুরোনো অপরাধী’ মোহাম্মদ সাহেদ। তার রিজেন্ট হাসপাতাল থেকে মাত্র পাঁচ হাজার টাকার (৫৯ মার্কিন ডলার) বিনিময়ে পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া করোনা নেগেটিভ সনদ দেয়া হতো।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, বাংলাদেশে বিদেশগামী শ্রমিকদের মধ্যে এ ধরনের ভুয়া করোনা নেগেটিভ সনদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ ধরনের প্রবাসীরা সাধারণত ইউরোপের বিভিন্ন মুদি দোকান, রেস্টুরেন্ট কিংবা রাস্তায় পানি বিক্রি করেন বলে উল্লেখ করেছে পত্রিকাটি।

বাংলাদেশ সরকারের সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট সরবরাহের বিষয়টি নজরে এলে বাংলাদেশের পুলিশ রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদকে গ্রেফতারে তৎপর হয়ে ওঠে। কিন্তু টের পেয়ে তিনি গা ঢাকা দেন বলে কর্তৃপক্ষ জানায়। পরে ৯ দিনের অনুসন্ধান শেষে বুধবার দেশটির সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

সাহেদের এ অপকর্ম প্রসঙ্গে দেশটির অন্যতম জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এটি ব্যাপকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। তিনি জানিয়েছেন, দেশে বেশ কয়েকটি অপরাধী চক্র বিদেশগামী শ্রমিকদের করোনা নেগেটিভ সনদ সরবরাহ করছে এবং এর মাধ্যমে বহু মানুষের জীবন বিপন্ন করছে।

বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুধু রিজেন্ট হাসপাতাল থেকেই ১০ হাজারের বেশি করোনা সনদ ছাড়া হয়েছে, যার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরীক্ষা করা হয়নি।

কেবল সাহেদই নয়, হাজার হাজার জাল করোনা সার্টিফিকেট দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে সম্প্রতি ঢাকার আরও একটি ল্যাবরেটরির দুই চিকিৎসককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ধরনের প্রতারণা করা অন্যদের ধরতেও আইনপ্রয়োগকারী বিশেষ বাহিনী তৎপর রয়েছে বলে দেশটি জানিয়েছে।

বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ দেশটির করোনা পরিস্থিতি মূলত অস্পষ্ট। ১৬ কোটিরও বেশি অধিবাসীর বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ লাখের মতো মানুষের। যদিও দক্ষিণ এশিয়ায় বর্তমানে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সেই তুলনায় বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষার হার তুলনামূলক কম। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারি হিসাব যা দেখাচ্ছে, দেশটিতে প্রকৃত করোনা আক্রান্ত এর চেয়ে অনেক বেশি।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সম্প্রতি দেশটি থেকে যে ১ হাজার ৬০০ বাংলাদেশি ইতালি গেছেন, তাদের কেউই ভুয়া করোনা সনদ ব্যবহার করেননি। তবে, ইতালি যাওয়া কিছু বাংলাদেশি বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন নীতি মানেননি, ফলে তাদের কয়েকজন ভাইরাস বহন করতে পারেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।