আইসিসি প্রধান হচ্ছেন সৌরভ? জল্পনা তুঙ্গে
লকডাউনে ঘরে আটকে থাকা অবস্থাতেই আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এসপার-ওসপার সিদ্ধান্ত নিতে হবে সৌরভ গাঙ্গুলী, জয় শাহদের। ভারতীয় বোর্ডকে ঠিক করতে হবে, বিশ্ব ক্রিকেটে অনেকের ইচ্ছায় সাড়া দিয়ে আইসিসির সর্বোচ্চ পদের জন্য তাঁরা লড়বেন কি না।
ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থার বিদায়ী চেয়ারম্যানও একজন ভারতীয়— শশাঙ্ক মনোহর। যদিও তাঁর সঙ্গে ভারতীয় বোর্ডের সম্পর্ক একেবারেই বন্ধুত্বপূর্ণ নয়। ভারতীয় বোর্ড কর্তারা মনে করেন, আইসিসিতে তাঁদের ক্ষমতা খর্ব করেছেন মনোহরই। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ফের ভারত থেকে চেয়ারম্যান হওয়া নিয়ে কোনও অসুবিধা নেই।
দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী ক্রিকেট দেশ চাইছে, করোনাভাইরাস নিয়ে এমন সঙ্কটের সময়ে শক্ত হাতে কেউ এসে হাল ধরুন। কারও কারও সরাসরি প্রস্তাব, সৌরভই আসুন নতুন আইসিসি প্রধান হিসেবে। গ্রায়েম স্মিথ এই দাবি তুলেছেন। ডেভিড গাওয়ার বলেছেন, সৌরভ যোগ্যতম ব্যক্তি।
জুলাইয়ের মধ্যেই পরবর্তী চেয়ারম্যান নির্বাচনের প্রক্রিয়া সেরে ফেলতে চায় আইসিসি। তার মানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বোর্ড কর্তাদের হাতে সময় থাকছে ১৫ দিন। বোর্ডের অন্দরমহলে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এমনও শোনা যাচ্ছে, সৌরভের মনোনয়ন নিয়ে অন্যান্য দেশের বোর্ডকে বাজিয়েও দেখা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য সাড়া পাওয়া গিয়েছে বলেই খবর। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।
আইসিসি চেয়ারম্যানের দৌড় থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন পাকিস্তানের এহসান মানি। সিঙ্গাপুরের ইমরান খাজার নাম শোনা যাচ্ছিল। এখন তাঁর দাবিও তেমন জোরালো নয়। ইংল্যান্ডের কলিন গ্রেভস খুবই আগ্রহী। কিন্তু সর্বশেষ খবর, তাঁর দিকেও যথেষ্ট সমর্থন নেই।
অন্যান্য কয়েকটি বোর্ডের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে মনে হচ্ছে, ‘ডার্ক হর্স’ হিসেবে উঠে আসতে পারেন নিউজ়িল্যান্ডের গ্রেগ বার্কলে। ২০১২ থেকে হ্যাডলির দেশের বোর্ডে ডিরেক্টর। এখন আইসিসি-তে তিনিই নিউজ়িল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করেন।
ক্রিকেট বিশ্বের চোখ যদিও ভারতের দিকে। দেশের নানা প্রান্তে ওয়াকিবহাল মহলে কথা বলে জানা গেছে, সৌরভের আইসিসি যাওয়া, না-যাওয়া একাধিক বিষয়ের উপর নির্ভর করছে। প্রথমত, ভারতীয় বোর্ড ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে প্রেসিডেন্ট সৌরভ এবং সচিব জয় শাহের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করেছে। সুপ্রিম কোর্ট এখনও শুনানির দিন জানায়নি।
হিসাব মতো, সেপ্টেম্বরে পদে বসা সৌরভ-জয়ের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা জুলাইয়ে। আবার রাজনৈতিক মাঠে আবির্ভাব ঘটিয়ে সৌরভ বিজেপির মুখ হয়ে উঠবেন কি না, সেই কৌতূহলও রয়েছে। তবে ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এই মুহূর্তে রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য ক্রিকেট পদে লড়াই করা আটকে নেই।
লোঢা কমিটির সুপারিশকে উল্টে দিয়ে সৌরভদের যদি মেয়াদ বাড়ে, আইসিসি চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ের চিত্রও পাল্টে যেতে পারে। তখন সৌরভের ভারতীয় বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। একে তো তিনি নিজে ভারতীয় বোর্ড নিয়ে যতটা আগ্রহী, ততটা আইসিসি প্রধানের পদ নিয়ে নন। তার উপরে, বোর্ডের শীর্ষ কর্তাদের মধ্যেও একটা অনুভূতি রয়েছে যে, সৌরভ চলে যাওয়া মানে সফলতম অধিনায়ককে মুখ করে চার বছর পরে তৈরি হওয়া বোর্ডের ভাবমূর্তি ফের ধাক্কা খেতে পারে।
রাজধানীর ক্রিকেট মহলে আইসিসি চেয়ারম্যানের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আর একটি নাম শোনা যাচ্ছে— অনুরাগ ঠাকুর। তবে করোনাভাইরাস উদ্বেগজনক পরিস্থিতি এবং সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি নিয়ে চরম সঙ্কটের মধ্যে অর্থ-প্রতিমন্ত্রী অনুরাগকে এখন ক্রিকেট খেলার প্রশাসনিক পদের জন্য পার্টি হাইকম্যান্ড ছাড়বে কি না, সেই তর্ক জোরালোভাবে রয়েছে।
অনুরাগ আইসিসি চেয়ারম্যানের যোগ্যতামানে আটকাচ্ছেন কি না, তা নিয়েও বিবাদ রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের নিয়ামক সংস্থার পদাধিকারী হওয়া নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। আবার অনুরাগ সমর্থকদের পাল্টা প্রশ্ন, ‘শারদ পওয়ার তো আইসিসি প্রধান হয়েছিলেন!’ তবে পাওয়ারের পরে নিয়মেও অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
তৃতীয় যে নামটি ঘুরছে, তা বাতিল হওয়ার দিকেই পাল্লা ভারী— এন শ্রীনিবাসন। একে তো তাঁর বয়স সত্তরের উপরে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, ভারতীয় বোর্ডের প্রতিনিধি হতে পারবেন না। তার উপরে জামাই গুরুনাথ মাইয়াপ্পানের ক্রিকেট জুয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার সেই ঘটনাতেও আটকে যেতে পারেন।
আগামী কয়েক দিনে করোনা আতঙ্ক চলার মাঝেই উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে আইসিসি মসনদ নিয়ে আলোচনা। কেউ কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সৌরভীয় ইতিহাস বলছে, তিনি সঙ্কটের মুহূর্তে ব্যাট ধরতে পছন্দ করেন। ম্যাচ গড়াপেটা-পরবর্তী কঠিন অধ্যায়ে অধিনায়ক হয়ে ভারতীয় ক্রিকেটে আগ্রাসী, হার-না-মানা মনোভাব আমদানি করা।
দীর্ঘ চার বছরের নির্বাসন কাটিয়ে ফেরা বোর্ডের নতুন প্রেসিডেন্ট। এখন করোনার সময়ে ঘোর সঙ্কটে থাকা আইসিসি এবং বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট বোর্ডকে নেতৃত্ব দেওয়ার ডাক। ভারতীয় বোর্ড তাঁর প্রথম পছন্দ হলেও পরিস্থিতি ঘুরতে কত ক্ষণ? লর্ডসে সেই জামা খুলে ওড়ানোর মতো ক্রিকেট প্রশাসনের ‘দাদা’ হয়ে উঠতে চাইবেন না, কে বলতে পারে! খবর: আনন্দবাজার।