পরকীয়ার শাস্তি, স্বামীকে কাঁধে তুলে গোটা গ্রাম ঘুরলেন স্ত্রী!

  © এইসময়

এক সপ্তাহ ধরে ‘নিখোঁজ’ ছিলেন। আসলে রাগ করে বাপের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। বউমা কোথায় গেল, শ্বশুরবাড়ির কেউ কিছুই জানতেন না। জানার যে চেষ্টা করেছিলেন, তাও নয়। মেয়ের বাপের বাড়িতে যে লোক পাঠিয়ে খোঁজ নেবেন, তাও কেউ করেননি।

কিছু না হোক, থানায় একটা মিসিং ডায়েরি করবেন, তাও না। মেয়ের রাগ পড়লে, মা-বাবাই সঙ্গে করে নিয়ে আসেন শ্বশুরবাড়ি। ঘরের চৌকাঠ তো দূর অস্ত, তার আগেই দু'হাত আগল তুলে দাঁড়িয়ে পড়েন শাশুড়ি। ঘরে তিনি কিছুতেই ঢুকতে দেবেন না। আগে বিচার হোক।

বিচার কীসের? কারণ শ্বশুরবাড়ির ধারণা, বউমা পরপুরুষে আসক্ত। অন্য সম্পর্কে জড়িয়েছেন বলেই না স্বামীর ঘর ছেড়ে এভাবে চলে গিয়েছেন। পাড়াগাঁয়ে যা হয়। গ্রামের মোড়ল ততক্ষণ হাজির। মোড়লের সঙ্গে সাঙ্গপাঙ্গ, বাকি মাতব্বরেরা।

গ্রামসভায় বিচার হচ্ছে, সে খবর কী আর চাপা থাকে! মজা দেখতে গোটা গ্রাম গুটিগুটি পায়ে ভেঙে পড়ে। একতরফা বিচারে স্বঘোষিত মাতব্বরেরা শাস্তি দেন, স্বামীকে কাঁধে চাপিয়ে ঘুরতে হবে গোটা গ্রাম। ‘পরকীয়া’র শাস্তি। আদতে পরকীয়া কি না, তাতে আর কী এল গেল। তাঁরা ধরেই নেন, মেয়েদের ঘরে না ফেরার একটাই অর্থ- বিবাববহির্ভূত সম্পর্ক।

মাতব্বরদের মুখের উপর না-বলে, স্পর্ধা কার! তাই স্বামীকে কাঁধে তুলে, গোটা গ্রামের রাস্তা ঘুরতে হয় ওই বধূকে। অতিউত্‍‌সাহীরা সেই ভিডিও তুলে, সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ারও করেছেন। ভারতের মধ্যপ্রদেশের ঝাবুয়া জেলার এই অমানবিক আচরণের ভিডিও ভাইরাল হলে, পুলিশেরও তা নজর এড়ায়নি। দায়ের হয় এফআইআর।

ভিডিও দেখে ঝাবুয়ার খেদা গ্রামকে চিহ্নিত করতে পুলিশকে বেগ পেতে হয়নি। কল্যাণপুরা থানার অন্তর্গত মধ্যপ্রদেশের ওই গ্রাম থেকে এই ঘটনায় ইতিমধ্যে চার জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

ঝাবুয়ার পুলিশ সুপার বিনীত জৈন জানান, ভিডিও দেখে আট জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তার মধ্যে চার জন ইতিমধ্যে গ্রেফতার। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে তিনি জানান।

২০২০ সালেও মধ্যপ্রদেশে এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়। ভিন্ন জাতে বিয়ে করায় গত বছরই এক যুগলকে একই রকম ভাবে শাস্তি দিয়েছিল গ্রামের মাতব্বরেরা। স্বামীকে স্ত্রীর কাঁধে চাপিয়ে গোটা গ্রাম ঘোরানো হয়েছিল। ভিডিও ভাইরাল হতে নিন্দার ঝড় বয়েছিল। এমনকী নির্বাচনেও বিজেপি এটাকে ইস্যু করেছিল।

সেই ভিডিওতেও দেখা গিয়েছিল, তীব্র গরমে চড়া রোদে স্বামীকে কাঁধে তুলে হাঁটছেন বছর কুড়ির স্ত্রী। বাইরে থেকে দেখে মনে হতে পারে, অসুস্থ স্বামীকে কাঁধে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন স্ত্রী। কিন্তু পারিপার্শ্বিক চিত্র দেখলে ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়। স্বামীকে কোলে তুলে নিতে যথেষ্ট কষ্ট হচ্ছে তরুণীর। কিন্তু তিনি থামতে পারছেন না।

ভাঙা ভাঙা পায়ে স্বামীকে কোলে তুলে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। থেমে গেলেই গালিগালাজ ও হুমকি ভেসে আসছে চারপাশ থেকে। কিন্তু কেউ-ই তরুণীর কষ্ট বুঝছেন না। উলটে উপভোগ করছেন সকলে। খবর: এইসময়।


সর্বশেষ সংবাদ