২৩ জুন ২০২০, ১৩:০৬

করোনায় মৃত মুসলিমদের লাশ পুড়িয়ে ফেলছে শ্রীলংকা, তোলপাড়!

প্রতীকী

শ্রীলংকার কোন মুসলিম করোনাভাইরাসে মারা গেল তার মৃতদেহ কবর দিতে দেয়া হচ্ছে না। শ্রীলংকার সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় বলছে, করোনার সুযোগ নিয়ে সে দেশের কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। মুসলিম কেউ মারা গেলে তার মৃতদেহ আগুনে পোড়াতে বাধ্য করা হচ্ছে। যা ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ।

গত মে মাসের ৪ তারিখে হাসপাতালে ভর্তি হন ৪৪ বছর বয়স্ক মুসলিম মহিলা ফাতিমা রিনোজা। তিনি কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল। ফাতিমা শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বোর বাসিন্দা। তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন বলে তার করোনাভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ সন্দেহ করে।

ফাতিমার স্বামী মোহামেদ শফিকের অভিযোগ, যেদিন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সেদিন থেকেই কর্তৃপক্ষ তাদের পরিবারের ওপর ‘চড়াও হয়‌’। পুলিশ এবং সামরিক বাহিনী কর্মকর্তাদের নিয়ে আমাদের বাড়ির দরজায় এসে হাজির হয়।

এর মধ্যেই খবর আসে যে ফাতিমা মারা গেছেন। তিনি একাই হাসপাতালে ছিলেন। ফাতিমার প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেকে বলা হলো হাসপাতালে গিয়ে তার মায়ের মৃতদেহ শনাক্ত করতে। তাকে বলা হলো, যেহেতু কোভিড-১৯এ ফাতিমার মৃত্যু হয়েছে তাই তার মৃতদেহ পরিবারের কাছে ফেরত দেয়া হবে না।

ফাতিমার ছেলে জানান, তার মায়ের মৃতদেহ দাহ করার অনুমতিসূচক কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে তাকে বাধ্য করা হয়– যদিও মুসলিম আইনে মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলাকে মানবদেহের অবমাননা বলে মনে করা হয়।

ফাতিমার স্বামী মোহামেদ শফিক বলেন, আমার ছেলেকে বলা হয়, আরো কিছু পরীক্ষা করার জন্য ফাতিমার দেহের কিছু অংশ কেটে নিতে হবে। তার যদি করোনাই হয়ে থাকে তাহলে তার শরীরের অংশ কেটে নেয়ার দরকার কী? আসলে কী ঘটেছিল তা তার পরিবারকে পুরোপুরি জানানো হয়নি।

শ্রীলংকায় ফাতিমার পরিবারসহ আরো কিছু মুসলিম পরিবার মিলে তাদের বিরুদ্ধে মহামারিকে ব্যবহার করে বৈষম্যমূলক আচরণ করার জন্য সরকারের সমালোচনা করেছে। মুসলিম পরিবারগুলো অভিযোগ, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনায় কোভিড-১৯ এ মারা যাওয়া লোকদের কবর দেয়া যাবে বলে বলা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ তাদের মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলতে বাধ্য করছে।

তারা বলছেন, দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলী জনগোষ্ঠী যেরকম ধারাবাহিকভাবে হয়রানি এবং ভীতি সৃষ্টি করছে– এটি তার সবশেষ উদাহরণ।

সরকারের প্রধান সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ড. সুগত সামারাবীরা জানিয়েছেন, সরকারের নীতি হচ্ছে কোভিড-১৯এ আক্রান্ত বা আক্রান্ত সন্দেহে যারাই মারা যাবে– তাদের মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা হবে। কারণ কবর দেয়া হলে তা ভূগর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তরকে দূষিত করতে পারে।-বিবিসি বাংলা অবলম্বনে