০৫ মে ২০২০, ১৭:১৬

বৃদ্ধের সৎকারে নেই আপনজন, মরদেহ বহন করলেন মুসলমানরা

  © আনন্দবাজার

করোনা নয়। বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছিল ব্রেন টিউমারে। অথচ, করোনা-আতঙ্কের কারণে সেই মৃতদেহ সৎকারের অনুমতি দিচ্ছিলেন না ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উলুবেড়িয়া পুরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডের শ্মশান কর্তৃপক্ষ। বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন মৃতের ছেলে।

লকডাউনে আত্মীয়রাও আসতে পারছিলেন না। তিনি পাশে পেয়ে যান পড়শি মুসলমান সম্প্রদায়ের কয়েকজনকে। তাঁরাই শেষ পর্যন্ত বয়ে নিয়ে গেলেন মৃতদেহ।

হাওড়ার উলুবেড়িয়া পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাঠ ব্যবসায়ী রবীন্দ্রনাথ পাল (৬২) আদতে বাগনানের বাসিন্দা। ব্যবসার সূত্রেই তিনি স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে উলুবেড়িয়ার সিজবেড়িয়ায় থাকতেন। দীর্ঘদিন ধরে ব্রেন টিউমারে ভুগছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

শনিবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর তার ছেলে তন্ময় আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁরা জানান, এই পরিস্থিতিতে তাঁদের পক্ষে আসা সম্ভব নয়। তারা যে এলাকায় থাকেন, সেখানে সংখ্যালঘু মানুষেরই বাস বেশি। বাবার মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর পাশে দাঁড়ান সেই মানুষেরাই।

বিপত্তি বাধে অন্যত্র। উলুবেড়িয়ার দু’টি শ্মশানে দাহ করার জন্য দেহ নিয়ে যাওয়া হলে ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তন্ময়। যোগাযোগ করা হয় উলুবেড়িয়ার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাশ্বতী সাঁতরার সঙ্গে।

তিনি জানান, প্রথমে শতমুখী শ্মশানও সৎকারে রাজি হচ্ছিল না। তবে অনুরোধের পর অনুমতি মেলে। আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন। লকডাউন পরিস্থিতিতেও কোনও এলাকাতেই মৃত্যুর শংসাপত্র দেখালে দেহ সৎকারে শ্মশান বাধা দিতে পারে না বলেই প্রশাসনের বক্তব্য।

করোনা-আক্রান্তের মৃত্যু হলে সেই দেহ সৎকারের পৃথক স্থান ও নিয়ম রয়েছে। তা হলে রবিবার বাবার মৃতদেহ নিয়ে কেন হয়রানির শিকার হলেন তন্ময়? তবে এই সময়ে মানবধর্মের এক নতুন দিক দেখেছেন তন্ময়। হিন্দু রীতি মেনে মুসলমান সঙ্গীদের পাশে নিয়ে রবিবার বাবার সৎকার করেছেন তিনি। খবর: আনন্দবাজার।

তন্ময় বলেন, ‘দুর্দিনে মানুষ চেনা যায়। ছোটবেলায় পড়েছিলাম, শেষ দিনে যে সঙ্গী হয়, সেই বন্ধু। এঁরা হয়তো আমার আত্মীয় নন। তবে নিজের আত্মীয়দের থেকে অনেক কাছের হয়ে গেলেন। এঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’

এত প্রশংসার কোনও কারণ দেখছেন না তন্ময়ের শ্মশান-সঙ্গী সিজবেড়িয়ার শেখ ইলিয়াস, শেখ ইউনিস আলিরা। তাঁরা বলেন, ‘এঁরা আমাদের পাড়ার লোক। এই পরিস্থিতিতে নিজের লোকেরা আসতে পারেননি। আমরা ছাড়া আর পাশে কাকে পাবেন ওঁরা। এখানে সম্প্রদায় কোনও বিষয় নয়। মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাই বড় কথা।’