টিকা তৈরির গবেষণার তথ্য চুরির জন্য ঘুরছে সাইবার গুপ্তচরেরা
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে ব্যস্থ পুরো বিশ্বের গবেষকরা। তবে এর মধ্যেই টিকা তৈরির গবেষণার তথ্য চুরির জন্য বিদেশি গুপ্তচর সংস্থাগুলো খোঁজ-খবর করছে বলে যুক্তরাষ্ট্র জানতে পেরেছে।
একজন ঊর্ধ্বতন মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, এই ঝুঁকি সম্পর্কে মার্কিন সরকার গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করেছে। তবে ইতোমধ্যেই কোন তথ্য চুরি হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে মার্কিন ন্যাশনাল কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি সেন্টারের পরিচালক বিল এভানিনা কোন মন্তব্য করতে চাননি।
গবেষক, কোম্পানি এবং সরকার - সবাই এর সাথে জড়িত। তাদের এই প্রচেষ্টা সম্পর্কে বিদেশি গুপ্তচর সংস্থাগুলো যেমন গোপনে জানার চেষ্টা করছে তেমনি দেশীয় গুপ্তচর সংস্থাগুলোও তাদের ঠেকিয়ে রাখতে চাইছে।
এভানিনার প্রতিষ্ঠান মার্কিন সরকার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাবিদদের বিদেশি গোয়েন্দা তৎপরতা প্রতিরোধে পরামর্শ দিয়ে থাকে।
তিনি বলছেন, আমাদের সাথে সম্পর্কিত সকল প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের সাথে আমরা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি যাতে এসব গবেষণা এবং মূল্যবান তথ্য-উপাত্ত রক্ষা করা যায়। আমরা মনে করছি চীনা কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিদেশি গুপ্তচর সংস্থাগুলো চেষ্টা করবে আমাদের গবেষণাগুলো হস্তগত করার জন্য।
করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির গবেষণায় মার্কিন সরকার যে প্রকল্পে সহায়তা দিচ্ছে তার নাম 'অপারেশন ওয়ার্প স্পিড'। যে দেশ প্রথম কার্যকর এবং নিরাপদ টিকা তৈরি করতে পারবে, তা দিয়ে তারা প্রথমেই নিজেদের নাগরিকদের সুরক্ষা দেয়ার চেষ্টা করবে।
এভানিনা বলেন, এই গবেষণার সাথে জড়িত প্রত্যেকটি মেডিকেল গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে আমরা বলেছি এব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকতে।
এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, কোভিড-১৯ গবেষণায় জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোতে কিছু অনুপ্রবেশের ঘটনা।
এফবিআইয়ের উপসহকারি পরিচালক টনিয়া উগোরেৎজ বলেন, সাইবার গুপ্তচরদের দীর্ঘদিনের 'প্রধান লক্ষ্য' বায়োমেডিক্যাল তথ্য চুরি করা এবং এসব গবেষণার সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো এখন এদের 'লক্ষ্যবস্তু'।
এর কিছুদিন পর মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক সহকারি এটর্নি জেনারেল জন ডেমারস্ মন্তব্য করেন, চীন এসব তথ্য সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হবে না এটা মনে করা উদ্ভটের চেয়েও বেশি। করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির গবেষণা সম্পর্কে বিদেশি গুপ্তচর সংস্থাগুলো খোঁজখবর করছে বলে যুক্তরাষ্ট্র জানতে পেরেছে।
ব্রিটিশ নিরাপত্তা সূত্রগুলো বলছে, তারাও একই ধরনের তৎপরতা লক্ষ্য করেছে।
ক্যানাডার সেন্টার ফর সাইবার সিকিউরিটি গত মার্চ মাসেই সতর্ক করেছে যে আধুনিক প্রতিপক্ষ কোভিড-১৯ গবেষণার সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে মেধা-সম্পত্তি চুরি করার চেষ্টা করতে পারে।
তবে মার্কিন এবং পশ্চিম বিশ্বের গুপ্তচর সংস্থাগুলোও জানতে চাইবে চীনের ভেতরে কী ঘটছে, সেখানে মৃত্যুর হার নিয়ে কোন গোঁজামিল রয়েছে কিনা, কিংবা করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির গবেষণায় কোন অগ্রগতি হয়েছে কিনা।
এদিকে হাসপাতালগুলোর ওপর সাইবার হামলা নিয়ে এখন বেশ উদ্বেগ রয়েছে। এসব হামলার ফলে মহামারি ঠেকানোর প্রচেষ্টা ব্যাহত হতে পারে।
এপ্রিল মাসে চেক প্রজাতন্ত্রের দুটি হাসপাতালে সাইবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। এরপর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক অদ্ভুত বিবৃতি দিয়েছেন।
এতে তিনি বলেছেন, যারাই এসব কাজ করছে তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান হবে চেক প্রজাতন্ত্রের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কিংবা অন্যত্র যেন এধরনের সাইবার তৎপরতা চালানো না হয়।