মুসলিমদের থেকে সবজি কিনতে নিষেধ করলেন বিজেপির বিধায়ক!
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২০, ০৭:০৮ PM , আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২০, ০৭:০৮ PM
‘মুসলমান সবজি বিক্রেতাদের থেকে সবজি কিনবেন না!’ করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া আটকাতে এমনই অসংবেদনশীল সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করেছেন বিজেপির এক বিধায়ক! ভারতের উত্তর প্রদেশের রাজধানী লখনউ থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পূর্ব উত্তর প্রদেশের দেওরিয়া জেলার বিজেপি বিধায়ক এমন মন্তব্য করেছেন।
দেশব্যাপী লকডাউনের মধ্যেই মুসলিম বিক্রেতাদের কাছ থেকে শাকসবজি কেনার বিষয়ে তাঁরই নির্বাচনী এলাকার লোকদের সতর্ক করতে দেখা গিয়েছে একটি ভিডিওতে। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে অবশ্য দেওরিয়ার বারহাজ আসনের বিধায়ক সুরেশ তিওয়ারি বলেছেন, ‘কেন এটাকে বড় ইস্যু করে তুলছেন?’
এনডিটিভির এক খবরে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত সপ্তাহেই এই মহামারীকে সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে রাখার কথা বলেছিলেন। আর তার কিছুদিন পরেই বিজেপিরই নেতার এই মন্তব্য প্রকাশ্যে এসেছে। একটি ১৪সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হচ্ছে।
ওই ভিডিওতে ৭৪ বছর বয়সী এক বিজেপি নেতাকে মুসলিম সম্প্রদায়ের সবজি বিক্রেতাদের লক্ষ্যবস্তু করে হিন্দিতে বলতে শোনা গেছে, ‘একটা বিষয় মাথায় রাখুন। আমি সবাইকে খোলাখুলি বলছি ‘মিঞাদের (মুসলিম) থেকে সবজি কেনার দরকার নেই।’
তাঁর মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে সুরেশ তিওয়ারি ঘটনাটি স্বীকার করে বলেন, ‘আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় ছিলাম এবং আমি ১০-১২ জনের একটি দলের সঙ্গে কথা বলছিলাম। আমরা লকডাউন নিয়েই কথাবার্তা বলছিলাম। তারা আমাকে বলেন যে, সব মুসলিম বিক্রেতারা তাদের দিকে থুতু ছেটাচ্ছেন।’
‘তাই আমি তাদের বলি যে, আমি কিছু করতে পারব না তবে যাতে করোনাভাইরাস না ছড়ায় তার জন্য ওই মুসলিম বিক্রেতাদের থেকে জিনিসপত্র কেনা এড়িয়ে চলাই উচিত। মানুষ যখন জিজ্ঞাসা করছেন কী করা উচিত.... বিধায়ক তখন কী বলবেন? আমি কি কিছু ভুল বলেছি? কেন এটাকে বড় ইস্যু করে তুলছেন?’ প্রশ্ন করেন বিজেপির ওই বিধায়ক।
‘এআইএমআইএম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি হিন্দুদের সম্পর্কে আপত্তিকর কথা বলেছেন। তাতে কারও কিছু এসে যাচ্ছে না! একজন বিধায়ক তার নির্বাচনী এলাকার লোকদের কেবল তাদের সুবিধার জন্য কিছু কথা বলেছে তাতেই এত শোরগোল!’ দেওরিয়ার বাড়িতে বসে সাংবাদিকদের একথা বলেন সুরেশ তিওয়ারি।
সুরেশ তিওয়ারি এমন সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করে স্বাভাবিকভাবেই সমালোচিত হয়েছেন। তাঁর মন্তব্যের জন্য বিজেপি নেতার তীব্র নিন্দা করেছেন অভিনেতা-রাজনীতিবিদ এবং কংগ্রেস নেতা নাগমা। উত্তর প্রদেশে, গুজবে বিশ্বাস না করার জন্য রাজ্য সরকার ও পুলিশের বারবার আবেদন সত্ত্বেও মুসলিম বিক্রেতাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে এমন বেশ কয়েকটি ঘটনার খবর পাওয়া গিয়েছে।
সোমবার লখিমপুর শহরে একজন মুসলিম ফল বিক্রেতাকে স্থানীয় কয়েকজন লোক ঘিরে ধরে বলে খবর। অভিযোগ বিক্রি করার আগে তরমুজে থুথু ছিটিয়ে দিয়েছিলেন ওই মুসলিম বিক্রেতা! একটি ভিডিওতে ওই ব্যক্তিকে কাঁদতে কাঁদতে হাত জোড় করে বলতে শোনা যায় যে, তিনি কোনও অন্যায় করেননি এবং তাকে ছেড়ে দেওয়া উচিত।
উত্তরপ্রদেশের পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে। পরে পুলিশ বিবৃতিও জারি করে জানায় যে, বিক্রেতার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে।
কিছু দিন আগে মাহোবা জেলার সবজি বিক্রেতারা জেলা প্রশাসনের কাছে লেখা একটি চিঠিতে অভিযোগ করেছিলেন যে, তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে এবং শাকসবজি বিক্রি বন্ধ করতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসন যদিও তদন্ত করে জানায়, বিক্রেতাদের করা অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
গত সপ্তাহেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, কোভিড-১৯ মহামারী সবাইকে সমানভাবে প্রভাবিত করে। ‘কোভিড-১৯ আক্রমণের আগে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, ভাষা বা সীমান্ত দেখে না। সুতরাং আমাদের প্রতিক্রিয়া ও আচরণে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধকেই জাগিয়ে তুলতে হবে। আমরা এতে একসঙ্গেই রয়েছি,’ বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।