নিউইয়র্কে করোনা চিকিৎসক লোরনা আত্মহত্যা করলেন যে কারণে
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সামনের সারিতে থেকে লড়া শীর্ষ একজন মার্কিন চিকিৎসক আত্মহত্যা করেছেন। ডা. লোরনা ব্রিন ম্যানহাটনের নিউইয়র্ক-প্রেসবিটারিয়ান অ্যালেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের মৃত্যু এবং ভোগান্তির সাক্ষী হয়ে মানসিক চাপের কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। পুলিশ বলছে শরীরে নিজের করা জখমের কারণে রোববার তার মৃত্যু হয়।
৪৯ বছর বয়েসী ওই চিকিৎসকের বাবা ডা. ফিলিপ ব্রিন নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, দায়িত্ব পালনের চাপ থেকে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন তার মেয়ে। যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৫৬ হাজার মানুষ মারা গেছেন, এর মধ্যে সাড়ে ১৭ হাজারই নিউইয়র্কের বাসিন্দা।
ডা. ফিলিপ ব্রিন জানিয়েছেন, তার মেয়ের কোন মানসিক অসুস্থতা ছিল না। লোরনা ভার্জিনিয়ার শার্লটসভিলে মারা গেছেন, সেখানে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তিনি। দায়িত্ব পালনকালে লোরনা ব্রিন নিজেও করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে পড়েন এবং সুস্থ হবার দেড় সপ্তাহ পর তিনি আবার কাজে ফেরেন বলে জানিয়েছেন তার বাবা।
এরপর তার পরিবার নিজেদের উদ্বেগ জানানোর আগেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লোরনাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। শেষবার যখন মেয়ের সঙ্গে তার কথা হয়, তখন মেয়েকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন মনে হয়েছে, এবং তিনি বাবাকে বলছিলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত মানুষেরা কিভাবে মারা যাচ্ছেন সেখানে, কখনো কখনো অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামানোর আগেই।
করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে ২০০-শয্যার হাসপাতালটিতে গত কয়েকদিনে ডজনখানেক মানুষ মারা গেছেন। জরুরি বিভাগে কাজ করার কারণে তার মেয়ে একেবারে ফ্রন্টলাইনে কাজ করতেন বলে লোরনাকে বেশ মানসিক ধকল সহ্য করতে হয়েছে।
ফিলিপ ব্রিন নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, ‘আমার মেয়ের মৃত্যু করোনাভাইরাসের সার্বিক ক্ষয়ক্ষতিরই অংশ, আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন তাদের মতই মর্মান্তিক এই মৃত্যু।’
নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, লোরনা ব্রিন স্কি এবং সালসা নাচ করতে ভালোবাসতেন। একটি বৃদ্ধাশ্রমে সপ্তাহে একদিন করে স্বেচ্ছাশ্রম দিতেন। এক বিবৃতিতে নিউইয়র্ক-প্রেসবিটারিয়ান অ্যালেন হাসপাতাল জানিয়েছে, ‘ডা. ব্রিন এই সময়ের একজন হিরো, যিনি জরুরি বিভাগে একেবারে সামনের সারিতে থেকে মানুষকে সেবা দিয়েছেন।’
ডা. লোরনা ব্রিনের মৃত্যু নিশ্চিত করে শার্লটসভিলের পুলিশ যে বিবৃতি দিয়েছে, সেখানেও তাকে ‘হিরো’ হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ বিভাগ জানিয়েছে, সাহায্যের জন্য ২৬ এপ্রিল পুলিশ যখন ফোন পায়, তার পর তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল, সেখানেই তিনি পরে মারা যান।
পুলিশ চিফ রাশাল ব্র্যার্কনি বলেছেন, ‘এই মহামারিতে মানুষের যে শারীরিক ও মানসিক ঝুঁকি, সামনের সারির স্বাস্থ্যকর্মী এবং জরুরি বিভাগের কর্মীরা তার বাইরে নন। এমনিতেই রোজ তারা ভয়াবহ মানসিক চাপের মুখে থাকেন, করোনাভাইরাসের কারণে সেই চাপ আরো বেড়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের এক তৃতীয়াংশই নিউইয়র্কে, প্রায় দশ লাখের মত মানুষ সেখানে কোভিড-১৯ আক্রান্ত। সোমবার নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো বলেছেন, র্যান্ডম অ্যান্টিবডি টেস্ট করে দেখা গেছে নিউইয়র্ক শহরের এক চতুর্থাংশ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। খবর: বিবিসি বাংলা।