করোনা: ভারতের নিউইয়র্ক হতে চলেছে মুম্বাই
ভারতের মুম্বাইয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। দেশটির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দলের অনুমান, আগামী মে মাসে মুম্বাইয়ের অবস্থা ভয়ঙ্কর হতে পারে। দেশের আর্থিক রাজধানীতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫২২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
শুধু মুম্বাইতেই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে চার হাজার ২৫ জন। করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে একসঙ্গে এতজন মুম্বাইতে আক্রান্ত হননি। শুধুমাত্র এই শহরেই মারা গিয়েছেন ১৬৭ জন। সবচেয়ে চিন্তার কথা, ধারাভির মতো অত্যন্ত ঘিঞ্জি বস্তি এলাকায় করোনা ভালোভাবেই ঢুকে পড়েছে। ধারাভিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২১৪।
দেশের সব চেয়ে বড় এই বস্তিতে আট লাখ লোক থাকেন। এখানে একটা বাড়ির ঘাড়ে অন্য বাড়ি। একেকটা ঘরে একসঙ্গে প্রচুর লোক থাকেন। পুরো এলাকাটা অস্বাস্থ্যকর। ফলে করোনার দ্রুত ছড়িয়ে যাওয়ার মতো ভরপুর পরিস্থিতি সেখানে আছে। ছড়াচ্ছেও।
ভারতের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দল সম্প্রতি মুম্বাই ঘুরে রিপোর্ট দিয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, ৩০ এপ্রিলের মধ্যে শুধু মুম্বাইতেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪২ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। তার ১৫ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ১৫ মে নাগাদ সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়াতে পারে সাড়ে ছয় লাখে। তখন সেখানে চার লাখ ৮৩ হাজার আইসোলেশন বেড লাগবে। ভেন্টিলেটার চাই প্রায় ১৪ হাজার।
আর আইসিইউ বেড লাগবে প্রায় ২৮ হাজার। যার কিছুই সরকারের হাতে নেই। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ইতিমধ্যে করোনা মহামারির রূপ নিয়েছে, সেখানে দুই লাখ ৬৮ হাজার লোক আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গিয়েছেন প্রায় ২১ হাজার। কেন্দ্রীয় দলের হিসাব সত্যি হলে মুম্বাইও তার কাছাকাছি চলে যেতে পারে।
মহারাষ্ট্র সরকারের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই হিসাব তাঁরা উড়িয়ে দিচ্ছেন না, আবার পুরোপুরি গ্রহণও করছেন না। এখন মুম্বাইতে চার দিনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে। রাজ্য সরকার মরিয়া হয়ে বেডের সংখ্যা বাড়াচ্ছে। ভেন্টিলেটার ও অক্সিজেনের ব্যবস্থা করছে। তাঁরা বস্তিতে করোনার প্রসার রুখতে ব্যবস্থা নিয়েছেন।
কিন্তু এত চেষ্টা পরেও মুম্বাইতে করোনা আটকানো যাচ্ছে না। এমনিতে মুম্বাই শহর ঘিঞ্জি। সমুদ্রের ধারের এই শহরের ছড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ কম। সে কারণেই মুম্বইতে ছোট ঘরে অনেক লোকের বাস। সামাজিক দূরত্বের নীতি মুম্বই এর একটা বড় অংশে সফল হচ্ছে না। বিশেষ করে গরিব, নিম্ন মধ্যবিত্ত এলাকায়।
মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে অনেক চেষ্টা করেও পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না। উদ্ধব জানিয়েছেন, তিনি দুইটি বিষয়ের ওপর জোর দিচ্ছেন। প্রথমত, যাঁরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের সারিয়ে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যাতে দশদিনে দ্বিগুণ হয়, তার চেষ্টা চলছে।
মুম্বাই এর পাশাপাশি দিল্লির অবস্থাও বেশ খারাপ। দিল্লিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজার ৩৭৬। জাহাঙ্গিরপুরির একটি সরকারি হাসপাতালে ১৪ জন চিকিৎসক ও নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। দিল্লিতে সিল করে দেওয়া এলাকার সংখ্যা এখন ৯২। সেখানে কাউকে ঢুকতে ও বেরতে দেওয়া হচ্ছে না। এলাকার লোকেদের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই সিল করে দেওয়া এলাকার সংখ্যা বাড়ছে।
গোটা দেশে ২৩ হাজার ৭৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গিযেছেন ৭১৮ জন। খবর: ডয়েচে ভেলে।