১২ এপ্রিল ২০২০, ২১:৩৫

এক কক্ষে করোনায় মৃত স্বামীর লাশ, পাশের কক্ষে স্ত্রী-সন্তান

  © ফাইল ফটো

করোনায় আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর মিছিলে প্রতিদিন যোগ হচ্ছে বাংলাদেশিদের নাম। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১১ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছেন আরও ১০ জন বাংলাদেশি। শোক গ্রাস করছে পুরো পরিবার, পুরো কমিউনিটিকে। মৃত্যুর মিছিলে নতুন গল্প যোগ হয়েছে স্বামী রতন চৌধুরী ও স্ত্রী সুজাতার পরিবারকে কেন্দ্র করে।

ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে স্বামী রতন চৌধুরী ও স্ত্রী সুজাতা চৌধুরী সন্তানসহ এসেছিলেন স্বপ্নের দেশ আমেরিকায়। ভালোই চলছিল তাঁদের সংসার। স্বামী-স্ত্রী কাজ করেন, দুই সন্তান স্কুলে যায়। করোনার বিপদসংকেত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বামী ছুটি নিয়ে বাড়ি ঢুকলেন। সন্তানরাও বাড়িতে। সুজাতা চৌধুরী নিজের অজান্তেই ভাইরাস বাড়ি এলেন কর্মস্থল থেকে। স্ত্রী মারাত্মক অসুস্থ হওয়ার আগে স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়লেন। দুই সন্তানও আক্রান্ত হলো ভাইরাসে।

হাসপাতালে জায়গা না পাওয়ায় বাড়িতেই চিকিৎসা চলছিল। ডাক্তারের নির্দেশনায় তিন বেডরুমের বাড়িতে স্বামী-সন্তানদের আলাদা রুমগুলো ছেড়ে দিয়ে সুজাতা নিজে জায়গা করে নিলেন ড্রইং রুমে। মধ্যরাতে রুমে রুমে গিয়ে চেক করেন, কে কেমন আছে। ১১ এপ্রিল ভোরে স্বামীর রুমে ওষুধ দেওয়ার জন্য ঢুকে কোনো সাড়া পেলেন না স্ত্রী। যা বোঝার বুঝে নিলেন তিনি। বাইরে থেকে রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে সন্তানদের ডেকে তুললেন। সন্তানদের বললেন সবকিছু।

সুজাতা নিজেই ৯১১ নম্বরে কল করলেন। উত্তর পেলেন তাদের আসতে দেরি হবে। সারা দিন তিনজন অসুস্থ মানুষ বসে রইলেন তাঁদের অতি প্রিয়জনের মৃতদেহ নিয়ে। বিকেল চারটায় তিনজন স্যোসাল ওয়ার্কার এলেন। সঙ্গে এল না মর্গের গাড়ি বা কোনো সরঞ্জাম। তাঁরা জানালেন, তাঁদের অসহায়ত্বের কথা। সরঞ্জামের ঘাটতি আছে। মর্গ বা অস্থায়ী ট্রেলারের মর্গে আছে জায়গার অভাব। কিছু মৃতদেহ মাটিচাপা দেওয়ার পর মর্গ কিছুটা খালি হলে তাঁরা নিয়ে যাবে মৃতদেহ।

প্লাস্টিকের ডাবল বডি ব্যাগে রতন চৌধুরীর দেহ ভরা হলো। স্ট্রেচারে বেঁধে স্প্রে করে রুমেই রেখে বন্ধ দরজায় ‘নো এন্ট্রি’ সাইন ঝুলিয়ে চলে গেলেন তিনি স্যোসাল ওয়ার্কার। এক রুমে প্রিয় স্বামীর মৃতদেহ, আর অন্য রুমে একই রোগে আক্রান্ত তিনজন মানুষ বসে আছেন।

এদিকে ২৪ ঘণ্টায় আমেরিকায় ১ হাজার ৭১৯ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনা। ফলে এই ভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৫৭৭ জন।

প্রথমবারের মতো কোনো দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়াল। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে আরও ২৬ হাজার ৪৬৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩২ হাজার ৮৭৯ জন।