১৯ মার্চ ২০২০, ০৯:২৪

করোনাভাইরাস বাতাসে টেকে তিন ঘন্টা, নিরাপদ থাকতে করণীয়

  © ইন্টারনেট

চীন থেকে ছড়ানো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এ পর্যন্ত মারা গেছেন আট হাজারের বেশি মানুষ। আক্রান্ত দুই লাখের বেশি। এ অবস্থায় ভাইরাসটি মানবদেহের বাইরে কতক্ষণ টিকে থাকে তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। সে অনুযায়ী করোনাভাইরাস বাতাসে অন্তত তিন ঘণ্টা টিকে থাকতে পারে বলে নতুন এক গবেষণার তথ্যে জানানো হয়েছে।

চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম চিকিৎসক সংঘ ম্যাসাচুসেটস মেডিকেল সোসাইটি ওই সাময়িকীটি প্রকাশ করে। দেশটির সরকারের অর্থায়নে গবেষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি), ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস ও প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।

গবেষণায় তারা দেখেছেন, সার্স ও করোনাভাইরাস মানবদেহের বাইরে যতক্ষণ টেকে, নতুন ধরণের করোনাভাইরাসটিও ততক্ষণই টিকে থাকতে পারে। তাঁদের মতে, এই গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, উপসর্গ দেখা যাওয়ার আগেই ছড়িয়ে পড়ে নতুন করোনাভাইরাস। এটি বৈশ্বিক মহামারিতে পরিণত একটি কারণ।

গবেষণায় বলা হয়, করোনায় সংক্রমিত রোগীর হাঁচি বা কাশি থেকে ভাইরাসটি ধরতে নেবুলাইজার ব্যবহার করা হয়। পরীক্ষায় দেখা গেছে, ভাইরাসটি মুখ বা নাক নিঃসৃত তরলকণার মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায়। এরপর প্রায় তিন ঘণ্টা পর্যন্ত টিকে থাকে।

এছাড়া তামার ওপর টিকে থাকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত। প্লাস্টিক ও স্টেইনলেস স্টিলের ওপর টেকে দুই থেকে তিন দিন। আর কার্ডবোর্ডের ওপর টিকতে পারে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত।

নতুন গবেষণা নিবন্ধ অনুযায়ী, নতুন করোনাভাইরাস  ছড়িয়ে পড়ার কারণ হতে পারে উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হওয়া। নিবন্ধে সবার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলা, নাক–মুখ–চোখ স্পর্শ না করা, হাঁচি–কাশির সময় মুখ ঢাকা এবং হাতের পাশাপাশি ব্যবহার্য বস্তু ও তল  জীবাণুমুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

চীনের কয়েকজন গবেষক উহানের একটি হাসপাতালে রোগীদের ব্যবহৃত শৌচাগার থেকে ভাইরাসটি শনাক্ত করেছেন। তাঁরা বলছেন, ভাইরাসটি বাতাসে টিকে থাকতে ধুলিকণার মতো সূক্ষ্ম কণায় রূপান্তরিত হয়ে শৌচাগারে টিকে ছিল।

এ ছাড়া মলের ওপরও ভাইরাসটি পাওয়া যায়। তারা বলেছেন, ২০০৩ সালে হংকংয়ের একটি আবাসিক এলাকায় পয়োনিষ্কাশন লাইন ফুটো হওয়ার পর সার্স–করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয় শতাধিক মানুষ। চীনের ওই গবেষণা নিবন্ধটিও প্রকাশ হওয়ার অপেক্ষায় আছে।

অবশ্য বিজ্ঞানীদের একটি মহল নতুন গবেষণাটির ফলাফলের বিরোধিতা করেছেন। তাঁদের দাবি, নতুন গবেষণায় ভাইরাসটির টিকে থাকা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা হয়েছে। হাঁচি–কাশির মাধ্যমে বের হওয়া ভাইরাসটি মাত্র কয়েক সেকেন্ড টিকতে পারে। তারা নেবুলাইজারের মাধ্যমে রোগীর হাঁচি বা কাশির সময় ড্রপলেট ধারণ করার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষক দলও একই ধরনের পরীক্ষা চালিয়ে নতুন করোনাভাইরাস ও সার্স–করোনাভাইরাসের মধ্যে তুলনা করেছে। তাতে দেখা যায়, দুই ভাইরাস একই আচরণ করে। কিন্তু নতুন ভাইরাসটি কীভাবে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ল, তার জবাব পাওয়া যায়নি গবেষণায়। সার্স–করোনাভাইরাসের প্রায় আট হাজার মানুষ সংক্রমিত হয়, মারা যায় প্রায় ৮০০ জন। এএফপি।