দিল্লীতে গর্ভবতীকে লাথি, জন্ম হল শিশুর
ভারতের রাজধানী দিল্লীতে ভয়াবহ দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত ৪০ জনের বেশি মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সাম্প্রদায়িক এই হানাহানির ঘটনায় ভয়াবহ সব কাহিনী প্রকাশিত হচ্ছে সংবাদমাধ্যমে।
শাবানা পারভীনের সন্তান জন্মের ঘটনা জানলে যে কেউ শিউরে উঠবে। ৩০ বছর বয়সী গর্ভবতী এই নারীর পক্ষে দাঙ্গা উপদ্রুত এলকা ছেড়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। কয়েক দিনের মধ্যেই হয়ত তার সন্তান ভূমিষ্ঠ হবে। তাই শ্বশুরবাড়িই থেকে গিয়েছেন তিনি। কিন্তু কে জানত, সোমবারের রাত তার কাছে বিভীষিকা হয়ে দাঁড়াবে!
পারভিনের শাশুড়ি নাসিমা বলেন, ‘রাতে হঠাৎ দুষ্কৃতীরা আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। তখন আমরা ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। অতর্কিত হামলায় পালিয়ে যেতে পারিনি। পারভিনের ওই অবস্থায় কীভাবেই বা পালিয়ে যাই! দুষ্কৃতীরা ধর্ম তুলে গালিগালাজ করে। আমার ছেলেকে মারধর করে। পারভিন বাধা দিতে গেল, তার উপরও হামলা চালানো হয়। ওর পেটে লাথি মারে দুষ্কৃতীরা। এরপরই পারভিনের শুরু হয়ে যায় প্রসব যন্ত্রণা।’
তখন উন্মত্ত জনতা দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল দিল্লীর বুকে। দোকানের পর দোকান জ্বলছে। রাস্তায় ইট-পাটকেল, কাচের টুকরো, লোহার রড এদিক-ওদিক ছড়িয়ে। বাতাসে গুমোট আতঙ্ক। জাফরাবাদ, মৌজপুর-সহ উত্তর-পূর্ব দিল্লীর বিভিন্ন এলাকার ছবি কার্যত একই ছিল। ওই অবস্থায় প্রসব যন্ত্রণায় কাতর স্ত্রীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তার স্বামী। প্রথমে কাছের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ভর্তি নিতে অস্বীকার করে ওই হাসপাতাল। বাড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। মাথা গোঁজার ঠিকানা নেই। কিন্তু কোনোভাবেই পারভিনকে হারাতে চান না তার স্বামী। ছুটে যান অল-হিন্দ হাসপাতালে।
সেই হাসপাতালেই গত বুধবার পরভিন জন্ম দেন পুত্র সন্তানের। মা ও সন্তান দুজনেই সুস্থ আছেন। যে সঙ্কটজনক অবস্থায় পরভিন ছিলেন, তাতে সদ্যোজাত যে সুস্থ, তা দেখে অবাক চিকিৎসকেরা।
তারা বলছেন, পরভিন ‘মিরাক্যাল বেবি’ জন্ম দিয়েছেন। স্বভাবতই খুশি পরভীন স্বামী ও শাশুড়ি। ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই দুষ্কৃতীর পাঞ্জা থেকে পালাতে পারে, সে শিশু মিরাক্যালই। কিন্তু সদ্যোজাতকে নিয়ে এখন যাবে কোথায় পরভিন? বাড়ি তো ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।