২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১১:৩৪

বছরে ১০ মিলিয়ন কপি কোরআন বিতরণ করে যে প্রিন্টিং প্রেস

  © সংগৃহীত

হজ্ব কিংবা উমরাহ পালনের জন্য বাংলাদেশ থেকে অসংখ্য লোক সৌদি আরবে গমন করে থাকেন। এছাড়া কাজের জন্যও অনেকে সেখানে অবস্থান করেন। সেখানকার মসজিদগুলোতে দেখবেন একটি বিশেষ ধরনের কোরআন পড়া হচ্ছে। বিশেষ ধরনের বললাম এ জন্য যে, এর মলাট, হরফের ফন্ট একইরকম এবং উপমহাদেশ থেকে একটু আলাদা। সম্পূর্ণ সরকারি ব্যাবস্থাপনায় এর মুদ্রণ, বাঁধাই আর পরিবেশন করা হয়। এটাকে তারা বলে ‘নোবেল কোরআন প্রিন্টিং’, অর্থাত্ একইরকম সাধারণ বিশেষত্বওয়ালা কোরআন। এ রকম একটি প্রিন্টিং প্রেস দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল মদিনা শহরে।

বাংলাদেশ থেকে যারা মক্কা বা মদিনা শহরে অবস্থান করেন, হজ্ব এজেন্সি তাদের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনে (জিয়ারা) নিয়ে যান। মদিনায় এমনকিছু স্থান বেশ জনপ্রিয়। কুবা মসজিদ, কিবলাতাইন মসজিদ, উহুদের প্রান্তর, পরিখা যুদ্ধের প্রান্তর এর মধ্যে অন্যতম। এমনকি অত্যন্ত শক্তিশালী চুম্বক ক্ষেত্রের জন্য একটি পাহাড়, যার কোনো ধর্মীয় গুরুত্ব, কোনো হাদিস বা ইসলামি বিশেষজ্ঞের কথায় উল্লেখ নেই, তথাকথিত এই জিন পাহাড়েও অনেকেই যাচ্ছেন। অথচ এ রকম সুন্দর, শিক্ষণীয় এই প্রিন্টিং প্রেস বাংলাদেশি হজ্ব যাত্রীদের কাছে তেমন কোনো প্রচারও নেই, তাই জনপ্রিয়তাও নেই। অথচ এর ধর্মীয় গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই।

মদিনার মসজিদের নববী থেকে ট্যাক্সিতে করে যেতে পারেন এই কমপ্লেক্সে। ভাড়া যাওয়ার সময় পড়বে ১৫-২০ রিয়েল। আসার সময় গাড়ি পেতে কষ্ট হতে পারে, ভাড়াও পড়তে পারে দ্বিগুণ। সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য এটা উন্মুক্ত থাকে। আসার পর দেখবেন একশ’ থেকে ২শ’ লোকের লাইন রাস্তা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। উপমহাদেশের বাইরের মুসলিমদের কাছে এই জায়গা বেশ জনপ্রিয়। কমপ্লেক্সের ভেতরে দ্বিতল মূল ভবন, মসজিদ, দাপ্তরিক অফিস আর খুবই আকর্ষণীয় ফুলের বাগান দেখতে পাবেন। লাইন আপনাকে নিয়ে যাবে প্রিন্টিং প্রেসের দোতলায়। ওপর থেকে দেখতে পাবেন কোরআন মুদ্রণ, বাঁধাই, প্যাকেটিং হচ্ছে। এরপর ফেরত আসার সময় আপনাকে ফ্রি কোরআন, বাচ্চা থাকলে তার জন্য আরবি ব্যাকরণের বই উপহার দেওয়া হবে। কিন্তু আমার পরামর্শ হচ্ছে আপনি কোরআন না নিয়ে কোরআনের বাংলা তাফসির চাইবেন। এই তাফসির সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য, অমূল্য আর অনুসরণীয়।

কিং ফাহদ কমপ্লেক্স ফর দ্য প্রিন্টিং অফ দ্য হলি কোরআন নামের এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সৌদি সরকারের অর্থায়নে এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধায়নে এটি পরিচালিত হয়। বছরে ৩৯টি বিভিন্ন ভাষার অনুবাদসহ ১০ মিলিয়ন কপি কোরআন এখান থেকে বিতরণ করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন অডিও টেপ, ধর্মীয় বই এবং হাদিস গ্রন্থও এরা প্রকাশ করে থাকে।

উসমান তাহা নামের একজন ব্যক্তির নাম এই কোরআন প্রেসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এই বিশেষ নোবেল কোরআনে যে সুদৃশ্য ক্যালিগ্রাফি আর যে বিশেষ হরফ আছে, তা এই সিরিয়া অধিবাসী অঙ্কন শিল্পীর অবদান।

পবিত্র মদিনা শহর মুসলিমদের কাছে ধর্মীয় কারণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যারা এখানে যান তারা অন্তত একটি বার হলেও ঘুরে আসতে পারেন এই সুদৃশ্য কমপ্লেক্স ভবনটি থেকে। আর সংগ্রহে রাখতে পারেন আমাদের মাতৃভাষায় লেখা কোরআন তাফসির।

সুত্র: জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক, প্রতিবেদক আহাদ আদনান