নেপালের ইজতেমা: ফিরিয়ে দেয়া হলো বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিদের
বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর শর্তে নেপালে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে তাবলীগ জামাতের একটি ইজতেমা। নেপাল আর ভারতের নাগরিকদের এই ইজতেমায় আসার অনুমতি থাকলেও তাবলীগ জামাতের প্রধান মৌলানা মুহম্মদ সাদ আল কান্দলভি সেখানে হাজির হবেন, এটা জেনে পাকিস্তান আর বাংলাদেশ থেকেও অনেকে সেখানে চলে গিয়েছিলেন।
নেপাল সরকার তাই ইজতেমা বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। ভারত থেকে স্থল সীমান্ত দিয়ে ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীদের নেপালে যাওয়াও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। অবশেষে ইজতেমার আয়োজক এবং নেপালের মুসলিম কমিশন অনুমতিপত্রের শর্ত মেনে চলার অঙ্গীকার করেছে।
নেপালের সপ্তোরী জেলার একটি ছোট শহরে এই প্রথমবার বিরাট বড় আকারে ইজতেমার আয়োজন করা হয়েছিল শনিবার থেকে। কিন্তু ইজতেমা শুরুর আগে নেপাল সরকারের দেওয়া শর্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ আর পাকিস্তান থেকে সেখানে যাওয়া ব্যক্তিদের দেশে ফেরানো হয়েছে।
আয়োজকরা বলছেন তারা কাউকে নিমন্ত্রণ করেননি, তবে তাবলীগ জামাতের প্রধান মুহম্মদ সাদ আল কান্দলভি ইজতেমায় আসছেন এবং এটাই তার প্রথম নেপাল সফর - এই খবর পেয়েই চারদিক থেকে লাখ দুয়েক মানুষ চলে এসেছেন- যাদের মধ্যে বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের কিছু নাগরিকও ছিলেন।
ওই ইজতেমার প্রধান আয়োজক মুহম্মদ গোফ্ফুর বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, ‘সরকার আমাদের এই শর্তেই অনুমতি দিয়েছিল যে এখানে নেপাল আর ভারতের মানুষই শুধু আসবেন। কিন্তু মৌলানা মুহম্মদ সাদ আল কান্দলভি আসছেন জেনে বহু মানুষ জড়ো হয়ে যান। সরকার মনে করছিল, এত মানুষের ভীড়ের ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে না চলে যায় - কারণ তারাও এই প্রথমবার এত বড় ইজতেমা দেখছে।’
তিনি বলেন, ‘ভারতের সীমান্তও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তবে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসে আমরা মেনে নিয়েছি যে ভারত আর নেপাল ছাড়া অন্য দেশ থেকে যারা এসেছেন, তাদের ফেরত পাঠানো হবে।’
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ থেকে ৩০ জন আর পাকিস্তান থেকে ২৫ জন- মোট ৫৫ জনকে ফেরত চলে যেতে বলা হয়েছে। তার ভিত্তিতেই ইজতেমার অনুমতি পাওয়া গেছে। নেপালে প্রায় দশ লাখের মতো মুসলিম রয়েছে। কাঠমাণ্ডুর একটি মসজিদে ঈদের নামাজের আগে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন দুজন মুসলিম।
নেপালের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র কেদার নাথ শর্মা বিবিসির নেপালি বিভাগকে জানিয়েছেন, ‘জাতীয় মুসলিম কমিশন সরকারের স্বরাষ্ট দপ্তরকে অনুরোধ করেছিল, ইজতেমার সময়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে। ওই ইজতেমায় শুধুই নেপাল আর ভারত থেকে মানুষ আসবেন- এটাও বলা হয়েছিল। কিন্তু পরে আমরা জানতে পারি যে অন্যান্য দেশ থেকে মানুষ চলে এসেছেন। তাই দুদিন আগে ওই ইজতেমা বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।’
কিন্তু মুসলিম কমিশনের চেয়ারম্যান নিশ্চয়তা দিয়েছেন, এটি আন্তর্জাতিক জমায়েত নয়- শুধুই নেপাল আর ভারতের মানুষরা থাকবেন। তারপরেই ইজতেমার অনুমতি দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নেপালের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র কেদার নাথ শর্মা।
অনুমতি পাওয়ার আগে ভারত-নেপাল সীমান্তে অবস্থিত বিহারের সুপৌল চৌকি দিয়েই বেশিরভাগ মানুষ নেপালে গেছেন। কিন্তু অনুমতি স্থগিত করার সঙ্গে সঙ্গেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সব সীমান্ত চৌকিকেই এই মর্মে নির্দেশ পাঠায়, যাতে ইজতেমায় যোগ দিতে যাওয়া কাউকে নেপালে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়া হয়।
গত কদিন ধরে তাই সুপৌল চৌকি থেকেই ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে কয়েক হাজার মানুষকে। এদেরই একজন, বিহারের আরারিয়া জেলার বাসিন্দা মুহম্মদ তাজুদ্দিন সুপৌল সীমান্ত চৌকিতে দাঁড়িয়ে বিবিসিকে বলেন, ‘ইজতেমায় অংশ নেওয়ার জন্য নেপালে যেতে চেষ্টা করেছিলাম আমরা। কিন্তু নেপাল সরকার তাদের দিকের সীমান্ত থেকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। অনেক অনুরোধ করা স্বত্ত্বেও যেতে দেয়নি, তাই এখন আমাদের ফিরে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।’
নেপালের মুসলিম কমিশনের চেয়ারম্যান শামিম আনসারি নিজেই হাজির হয়েছেন সপ্তোরী জেলার ওই ইজতেমায়। সেখান থেকে টেলিফোনে তিনি বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন যে নেপাল আর ভারত ছাড়া অন্যান্য দেশ থেকে যারা এসেছিলেন, তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার পর শনিবার সকাল থেকে ইজতেমা শুরু হয়েছে, যা চলবে সোমবার পর্যন্ত।