ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্র দেওবন্দ ‘সন্ত্রাসবাদের গঙ্গোত্রী’: ভারতের মন্ত্রী
ইসলামি শিক্ষার অন্যতম পীঠস্থান বলে সারাবিশ্বে পরিচিত যে দেওবন্দ, তাকে সন্ত্রাসবাদের গঙ্গোত্রী, অর্থাৎ উৎসস্থল বলে বর্ণনা করেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় পশুপালন ও মৎস দপ্তরের মন্ত্রী গিরিরাজ সিং। বুধবার দেওবন্দে একটি সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
এর আগেও তিনি বলেছিলেন, এই শহরটি কোনও এক কারণে মুম্বাই হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী হাফিজ সৈয়দ বা আইএস প্রধান বাগদাদির মতো মানুষ তৈরি করে। সিং বিতর্কিত মন্তব্য মাঝে মাঝেই করে থাকেন। কিন্তু সুবিখ্যাত এই ইসলামি প্রতিষ্ঠান সন্ত্রাসবাদীদের জন্ম দেয় বলায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মন্তব্যের নিন্দা করছেন দেওবন্দ দারুল উলুমের প্রাক্তন ছাত্র থেকে বুদ্ধিজীবি - অনেকেই।
উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দ শহরে বুধবার একটি সভায় যোগ দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং বলেন, ‘এই দেওবন্দ সন্ত্রাসবাদের গঙ্গোত্রী। সারা বিশ্বে যত বড় বড় সন্ত্রাসবাদী জন্ম নিয়েছে - যেমন হাফিজ সৈয়দ - এই সব লোক এখান থেকেই বেরয়।’
নাম না করলেও তিনি যে ইসলামি শিক্ষার জন্য সারাবিশ্বে পরিচিত দেওবন্দের দার-উল-উলুমের কথাই বলছেন সন্ত্রাসবাদের গঙ্গোত্রী - অর্থাৎ উৎসস্থল হিসাবে, সেটাই মনে করছেন অনেকে। দারুল উলুমের প্রাক্তন ছাত্র এবং এখনও ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী।
তিনি গিরিরাজ সিংয়ের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলছিলেন, ‘দেওবন্দকে যদি সন্ত্রাসবাদী বলা হয়, আমি বলব মোদীর বন্ধু, সৌদি আরবের রাজা সালমান, সেখানকার ইমামদেরকে একথাটা গিয়ে বলুন না একবার। সেখানকার ইমামরা যা শিক্ষা দেন, দেওবন্দও সেই শিক্ষা দেয়। তাহলে সৌদির ইমামরাও সন্ত্রাসবাদী! বুকের পাটা থাকলে একবার সৌদি আরবে গিয়ে বা মক্কা শরিফে গিয়ে বলুন না এই কথাটা!’
সিদ্দিকুল্লা মনে করিয়ে দিলেন, যে প্রতিষ্ঠানকে সন্ত্রাসবাদের উৎস বলা হচ্ছে, সেখানে ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ গিয়েছিলেন- কারণ দারুল উলুমের তৎকালীন প্রধান সইফুল ইসলাম হুসেইন আহমেদ মাদানী রাজেন্দ্র প্রসাদের সঙ্গে একই জেলে বন্দী ছিলেন স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে।
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী থেকে শুরু করে সুভাষ চন্দ্র বসু - সকলের সঙ্গেই দেওবন্দের সখ্যতা সুবিদিত। কলকাতায় শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহার বলছিলেন গঙ্গোত্রী শব্দটা সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে এখানে এবং তা সুপরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে সারা দেশের মানুষের কাছে মুসলমানদের শত্রু প্রতিপন্ন করে তোলার জন্য।
‘ঙ্গোত্রীর মতো একটা শব্দ সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জুড়ে দেওয়াটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। গঙ্গোত্রীর সঙ্গে কোনও খারাপ কাজের সম্পর্ক থাকতে পারে বলেই মনে করি না। তবে এসব কথা কিন্তু মোটেই আলটপকা বলা হচ্ছে না। খুব ভেবে চিন্তেই বলছেন ওঁরা এসব। উদ্দেশ্য একটাই - যাতে সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে দেশের মানুষের মন বিষিয়ে দেওয়া যায়,’ বলছিলেন অধ্যাপিকা মীরাতুন নাহার।
বিতর্কিত মন্তব্য করার জন্য গিরিরাজ সিং বহুল চর্চিত। তিনি মাঝে মাঝেই বলে থাকেন যে দেশের উন্নয়ন ঘটাতে হলে সব ধর্মের মানুষদের জন্যই জন্ম নিয়ন্ত্রনের কড়া নিয়ম চালু করা উচিত। ইঙ্গিতটা স্পষ্টতই মুসলমানদের দিকে। এছাড়াও গত বছরের লোকসভা নির্বাচনের আগে তিনি মন্তব্য করেছিলেন যে চামড়ার রঙ ফর্সা না হলে কংগ্রেস দল কখনই সোনিয়া গান্ধীকে দলের সভানেত্রী পদে মেনে নিত না।
এই মন্তব্যের জন্য বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে তিনি তিরষ্কৃত হন, যদিও ভোটের পরে তাঁর কার্যত পদোন্নতি ঘটিয়ে ক্যাবিনেট মন্ত্রী করা হয় গিরিরাজ সিংকে। খবর: বিবিসি বাংলা।