১৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:৩৪

অভিশংসনের মুখে পড়া ট্রাম্পের ভাগ্যে কী আছে?

  © বিবিসি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠ রায় দিয়েছে হাউজ। একটি অভিযোগ তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। আরেকটি হচ্ছে তিনি কংগ্রেসের কার্যক্রমে বাধ সেধেছেন।

দুটি অভিযোগের ক্ষেত্রেই অভিশংসনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট পড়েছে প্রতিনিধি পরিষদে। প্রথম অভিযোগের ক্ষেত্রে ২৩০ ভোট পড়েছে অভিশংসনের পক্ষে এবং ১৯৭ ভোট পড়েছে বিপক্ষে।

দ্বিতীয় অভিযোগের ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় ২১৬ ভোটের বেশি সংখ্যক ভোট পড়েছে। ঐ অভিযোগে অভিশংসনের পক্ষে পড়েছে ২২৯ ভোট ও বিপক্ষে ১৯৮ ভোট। ফলে তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিশংসিত হয়েছে ট্রাম্প।

এখন ইমপিচমেন্টের পরবর্তী ধাপ হচ্ছে সেনেটের শুনানি যেটা হবে আগামী জানুয়ারি মাসে। কিন্তু রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সেনেটে এই ইমপিচমেন্ট ধোপে টিকবে না বলেই ধারণা। ফলে প্রেসিডেন্ট পদও হয়তো হারাতে হবে না ট্রাম্পকে।

এই ভোটাভুটি যখন চলছিল তখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি প্রচারণা সভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন। মিশিগানের ব্যাটল ক্রিকের এই জনসভায় ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা যখন মিশিগানের জন্য লড়াই করছি, নতুন কর্মসংস্থান করছি, তখন কংগ্রেসের কট্টর বামপন্থীরা ঘৃণা ও বিদ্বেষে পূর্ণ হয়ে আছে, আপনার দেখতেই পাচ্ছেন কী ঘটছে সেখানে?’

হোয়াইট হাউজ একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলছে, সিনেট ট্রায়ালে অভিযোগ থেকে ‘পুরোপুরি অব্যাহতি পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত’ প্রেসিডেন্ট।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ছাড়া আর দুজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট এর আগে অভিশংসিত হয়েছেন। তারা হচ্ছেন অ্যান্ড্রু জনসন এবং বিল ক্লিনটন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে হাউজ অব রেপ্রেজেন্টেটিভে অভিশংসিত হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ইমপিচমেন্ট শুনানির আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে পক্ষে-বিপক্ষে
বিক্ষোভ করেন আমেরিকানরা

এখন তার প্রেসিডেন্ট থাকতে পারা না পারা নির্ভর করছে আসছে জানুয়ারিতে সিনেটে শুনানিতে। ডেমোক্রেটিক হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি একটি উদ্বোধনী ভাষণের মাধ্যমে বুধবারের শুনানি শুরু করেন।

তিনি বলেন, ‘শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আমেরিকানরা গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য লড়েছে এবং মরেছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের প্রতিষ্ঠাতার যে প্রজাতন্ত্রের দর্শন তা হোয়াইট হাউজের কর্মকাণ্ডে হুমকির মুখে পড়েছে।’

তিনি বলেন, আমরা যদি এখনই ব্যবস্থা না নেই তাহলে তা হবে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয়। এটা দুঃখজনক যে প্রেসিডেন্টের কাণ্ডজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড এই ইমপিচমেন্টকে জরুরি করে তুলেছে। তিনি আমাদের জন্য আর কোন সুযোগই রাখেননি।’

ডেমোক্রেটিক প্রতিনিধি জো কেনেডি, যিনি প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির একজন প্রপৌত্র, তিনি তার বক্তব্যে নিজের সন্তানদের সম্বোধন করে বলেন, ‘প্রিয় এলি এবং জেমস: এটা এমন একটা মুহূর্ত যেটাকে তোমরা তোমাদের ইতিহাসের বইতে পড়বে।’

ম্যাসাচুসেটসের এই কংগ্রেসম্যান প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ‘ক্ষমতাকে নিজের মানুষদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের’ অভিযোগ তোলেন। হাউজ জুডিশিয়ারি কমিটির শীর্ষ রিপাবলিকান ডগ কলিন্স অবশ্য ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে অবৈধ এবং পক্ষপাতমূলক তদন্ত চালানোর অভিযোগ তোলেন।

তিনি বলেন, ‘এই ইমপিচমেন্টের ভিত্তি হলো পূর্বানুমান।’

এই ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া চলার সময় ডেমোক্র্যাটদের যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য ধরে রাখার নির্দেশনা দিয়েছিলেন মিজ পেলোসি, এমনটি বলা হচ্ছে। বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তিনি এই প্রক্রিয়াটি নিয়ে ‘দুঃখ ভারাক্রান্ত’।

ইমপিচমেন্ট শুরু হওয়ার চব্বিশ ঘণ্টা আগে থেকেই এর পক্ষের আন্দোলনকারীরা রাস্তায় নেমে আসে। মঙ্গলবার রাতে নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে শত শত মানুষের জমায়েত হয়। তারা শ্লোগান দিচ্ছিলো, ‘আমাকে বলো, কে আইনের ঊর্ধ্বে? কেউ নয়, কেউ নয়’।

বুধবার (যুক্তরাষ্ট্র সময়) ভোটের আগের রাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি ছয় পাতার চিঠি লেখেন ন্যান্সি পেলোসিকে। যেখানে তিনি পেলোসিকে ‘আমেরিকান গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধ শুরু করবার’ জন্য অভিযুক্ত করেন।

হোয়াইট হাউজের প্রকাশ করা এই চিঠিতে প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, ‘এই ইমপিচমেন্ট কেলেঙ্কারির শুরু থেকেই তিনি মৌলিক সাংবিধানিক নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন’।

প্রকৃতপক্ষে হাউজ জুডিশিয়ারি কমিটির প্রধান তাকে প্রমাণ দেয়ার জন্য জনসমক্ষেই আহবান জানিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট এটাতে রাজি হলে তার আইনজীবীর দল সাক্ষীদের জেরা করারও সুযোগ পেতেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। খবর: বিবিসি।