আবরারের মুখে অন্তত একটু পানি দিতে পারতাম, বোনের চিঠি ভাইরাল

  © ফাইল ফটো

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তোলপাড় পড়ে যায় সারাদেশে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে হত্যাকারীদের প্রায় সবাইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুরু হয়েছে বিচার কার্যক্রম। বুয়েট থেকে ২৬ শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

তবে আবরার হত্যকাণ্ড নিয়ে আলোচনা থেমে নেই। তার ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি খোলা চিঠি শেয়ার করেছেন। একট স্ট্যাটাসে তিনি জানিয়েছেন, ‘বুয়েটের ভাইয়াদের উদ্দেশ্যে আমাদের বড় বোনের লেখা। বন্ধুদের মেনশন করতে বললেও বেয়াদবি হবে বলে করিনি।’

খোলা চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হল-

‘#বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নীচতলা আর দোতালার সব ছোট ভাইকে খোলা চিঠি -

#তোমাদের ওইখানে র‍্যাগিং আছে জানি। আবরারকে ডেকে নিয়ে যায় রাত ৮ঃ১৩ তে। কিন্তু যখন রাত ১২ টায়ও যখন ফিরে আসে নাই। আবার খুনিরা জামা কাপড় নিয়া যায় তখনও কি তোমরা কিছুই বুজতে পারো নাই? কোনো আওয়াজও কি তোমরা পাও নাই? তোমরা ভয়ে যাও নাই বুঝলাম, কারণ তোমাদেরকে হলেই থাকতে হবে মানলাম। কিন্তু তোমরা কি আমাদের কাউকে এক বারও ফোন করতে পারলা না?

আবরার ফাহাদ তোমাদের বন্ধু, রুমমেট কিন্তু সে আমাদের পরিবার। তোমরাতো জানতে ওর পরিবারের মানুষ ঢাকায় থাকে। তোমরা চেনো তাদের কয়েকজনকে। তাদেরকে তোমরা একটু জানাতেও পারতে না? তোমরা কি বুজতেছো আমাদের এখন প্রতিবার পানি খেতে কেমন লাগে? কেমন লাগে ওর কথা মনে হলে?

ওকে যখন সিঁড়িতে ফেলে রাখলো তখনও যদি একটু খবর দিতে আমাদেরকে, আমরা তার মুখে অন্তত একটু পানি দিতে পারতাম। আমাদের ছোট ভাইটা অন্তত পানি না খেয়ে মরতো না। আমরা ওকে হসপিটালে নিতে পারতাম। হয়তো লাভ হইতো না,কিন্তু চেষ্টা তো করতাম। শেষ সময় সিঁড়িতে পইড়া না থাইকা আমার ভাই আমার হাতটা ধরে রাখতো। আমার ভাইয়ের কাছে আমি থাকতাম।

ওকে বলতে পারতাম তোকে আর কোন দিনও কথা কম বলার জন্য বকবো না। তোমরা যদি আমাদেরকে ১২টার দিকেও বলতে, সে শেষ সময়ে অন্তত আমাদেরকে কাছে পাইতো। একা মারা যাইতো না।

কষ্ট টা কি জানো তোমরা? আমি রাত নয়টায় পলাসী মোড়ে ছিলাম। তখনও যদি জানতাম, একটু কেউ যদি বলতো আমাদের যে কাউকে।

বিচার হবে এক সময়, সবাই ভুলে যাবে তোমরা। কিন্তু আমরা প্রতিবার পানি খেতে গেলে, বুয়েট নামটা শুনলে, আমার বাচ্চার প্রতি জন্মদিনেও যে বেলুন দিয়ে ঘর সাজাইতো, কেক আনতে যাইতো, আমার বাচ্চার ‘দাব্বি মামা-কে আমরা কেমনে ভুলবো?

আমার বাচ্চা যখন জিজ্ঞেস করে, ‘মা,দাব্বি মামা সিঁড়িতে পড়ে যায়া মরে গেলো, তখন ডাক্তারের কাছে নিলা না কেন? তোমরা কি বলতে পারো আমি আমার বাচ্চা কে কি উত্তর দিবো? কেমনে ভুলবো রাব্বি কে একটু বলে দাও তোমরা।

রাব্বি মাফ করে দিস ভাই। কিছুই করতে পারি নাই।

ইতি
রাব্বি (আবরার) ও তোমাদের বড় বোন।’

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ২৬ শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করে বুয়েট প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে অন্য ছয় শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়। আবরার হত্যার ঘটনায় বুয়েটের করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বুয়েটের বোর্ড অব রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিন এ সিদ্ধান্ত নেয়। বহিষ্কৃত ২৬ জনের মধ্যে ২৫ জন পুলিশের অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি।

গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী।

এ ঘটনার পর থেকে প্রথমে ক্যাম্পাসে আন্দোলন ও পরে একাডেমিক অসহযোগে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এতে বুয়েট কার্যত অচল রয়েছে। ওই ঘটনায় আবরারের বাবার করা মামলায় ১৩ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ।


সর্বশেষ সংবাদ