আইসিসির শর্ত মানলে শাস্তি কমবে সাকিবের
জুয়াড়ির প্রস্তাবের তথ্য না জানানোয় আইসিসি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিশ্বসেরা অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে। ফলে এক বছর ক্রিকেটের বাইরে থাকতে হচ্ছে তাকে। এতে টি-২০ বিশ্বকাপের দুটিসহ বাংলাদেশের হয়ে ৩৬টি ম্যাচ খেলা হবে না সাকিবের।
তবে আইসিসির শর্ত মানলে শাস্তি কমতে পারে সাকিবের। আইসিসির শর্ত অনুযায়ী দুর্নীতি দমন কার্যক্রমগুলোতে নিয়মিত অংশ নিতে হবে সাকিবকে। এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ক্রিকেক নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সন্তুষ্ট করতে পারলে শাস্তির মেয়াদ কিছুটা কমে আসতে পারে।
অতীতেও এমন উদাহরণ আছে। পাকিস্তানের ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ আমিরের ক্ষেত্রে হয়েছে। ২০১০ সালে ইংল্যান্ড সফরে স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন আমির, সালমান বাট ও মোহাম্মদ আসিফ। তবে শাস্তির মেয়াদ কমায় নির্ধারিত সময়ের ছয় মাস আগেই ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরতে পেরেছিলেন আমির।
নিষেধাজ্ঞার কারণে বড় ধরণের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে সাকিবকে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে খেলতে পারবেন না, এটিই তার সবচেয়ে বড় ক্ষতি। পড়ছেন ভাবমূর্তি সংকটেও। সবার আগে শঙ্কায় পড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সঙ্গে তাঁর কেন্দ্রীয় চুক্তি।
বাঁ হাতি অলরাউন্ডার কেন্দ্রীয় চুক্তির সর্বোচ্চ ক্যাটাগরিতে মাসে বেতন পেতেন চার লাখ টাকা। এ চুক্তি থেকে সাকিবকে বাদ দেওয়ার শঙ্কাই বেশি। সাকিবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাইছে তাঁর অনেক পৃষ্ঠপোষক। সাকিবের সঙ্গে কোনো প্রতিষ্ঠানের চুক্তি সাময়িক। কোনোটি আবার বার্ষিক। সাকিবের সঙ্গে চুক্তি আছে উবার, ইউনিলিভারের। এছাড়া চুক্তি রয়েছে পাঁচ তারকা হোটেলের সঙ্গে।
শুভেচ্ছাদূত হিসেবে আছেন শিশু তহবিল প্রতিষ্ঠান ইউনিসেফের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন থাকবে কি থাকবে না তা নিশ্চিত নয়। তবে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে আপাতত চুক্তির ইতি টানতে যাচ্ছে উবার।
সাকিব সবচেয়ে বড় অঙ্কের চুক্তি করেছিলেন মোবাইল ফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের সঙ্গে। বিসিবি দাবি করছে, সাকিব নিয়ম ভেঙে এই চুক্তি করেছেন। ফলে এ চুক্তির বৈধতা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। এখন সাকিবের সম্পর্ক সুতোয় ঝুলছে প্রতিষ্ঠানটির।
বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো চুক্তি অব্যাহত রাখবে কিনা, সেটি কদিনের মধ্যে জানা যাবে। গত বছর স্টিভ স্মিথ-ডেভিড ওয়ার্নার নিষিদ্ধ হওয়ার পর স্পনসররা সরে গিয়েছিল। সাকিবের ক্ষেত্রেও সেটি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাকিব দুর্দান্তভাবে ফিরে এলে আবার হয়তো আগের মতো কোটি কোটি টাকার প্রস্তাব নিয়ে তাঁর দিকে হাত বাড়িয়ে দেবে এসব প্রতিষ্ঠান। তবে আপাতত বড় আর্থিক ক্ষতির মধ্য দিয়ে যেতে হবে সাকবিকে।
ভারতের সম্মতিতে আইসিসি’র তদন্ত
সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে আইসিসির তদন্তে তাদের কোনও ভূমিকা ছিল না বলে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) আজ দাবি করেছে। তবে বিবিসির কাছে বিসিসিআই এ কথাও জানিয়েছে, আইসিসিকে তারা এই তদন্ত চালানোর ‘সম্মতি’ দিয়েছিলেন।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের দুর্নীতি দমন ইউনিটের (এসিইউ) প্রধান অজিত সিং শেখাওয়াত বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এখানে (সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে তদন্তে) আমরা কিছুই করিনি। বস্তুত আইসিসি-ই একটি ব্যাপার নিয়ে তদন্ত করছিল, যাতে কিছু আন্তর্জাতিক ইস্যু জড়িত ছিল - আর সেখানে আইপিএলের নামও এসেছিল।’
‘সুতরাং (আইপিএলের আয়োজক সংস্থা হিসেবে) বিসিসিআই এই তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আইসিসিকে সায় দিয়েছিল, এটুকুই শুধু বলতে পারি।’
সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে আইসিসির দীর্ঘ রায়ে আইপিএলের যে ম্যাচটির প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি খেলা হয়েছিল ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল। ওই ম্যাচটিতে সাকিবের টিম সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে ১৩ রানে জেতে।
ভারতীয় বোর্ড সূত্রে আরও বলা হচ্ছে, সেই আইপিএল মৌশুমে দুর্নীতি-দমন সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় তদারকির দায়িত্বে ছিল আইসিসি নিজেই। সুতরাং সেখানে বিসিসিআইয়ের প্রত্যক্ষ কোনও ভূমিকা থাকার কথাও নয়।
ওই আইপিএল মৌশুম চলাকালীনই অজিত সিং শেখাওয়াত ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে দুর্নীতি দমন ইউনিটের দায়িত্ব নেন। তবে তার কথা থেকে এটা স্পষ্ট, নির্দিষ্ট অভিযোগে সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার পরই আইসিসি বিষয়টি ভারতীয় বোর্ডকে জানিয়েছিল এবং আইপিএলের একটি ম্যাচকে কেন্দ্র করে সাকিবের বিরুদ্ধে যে তদন্ত চলছে - বিসিসিআই সে বিষয়ে অবহিত ছিল।