কাশ্মীর ইস্যুতে মোদির চতুর্মুখী ফাঁদ
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অভূতপূর্ব নিরাপত্তা জোরদারের মাধ্যমে সেখানকার মানুষকে একপ্রকার বন্দি করে রেখেছে দেশটির সরকার। পুরো উপত্যকায় এখন অদ্ভুতুড়ে এক পরিস্থিতি বিদ্যমান। মোবাইলসহ সব টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এরই মধ্যে সাংবিধানিক মর্যাদা বাতিলের পর কাশ্মীরের বিক্ষোভ দমনে চতুর্মুখী কৌশল গ্রহণ করেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার।
ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভি সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে মোদি সরকারের দীর্ঘমেয়াদি এই চতুর্মুখী কৌশলের খবর জানিয়েছে। কাশ্মীর এমনিতেই বিশ্বের অন্যতম সামরিকায়িত এলাকা। গত ৫ আগস্ট রাজ্যটির বিশেষ মর্যাদা বাতিলের আগে সেখানে নতুন করে আরও ৩০ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়।
এনডিটিভি বলছে, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর সেখানে যাতে কোনো বিক্ষোভ দানা বাঁধতে না পারে; সেজন্য সেখানকার বিক্ষোভের ধারা বিশ্লেষণ করে তা দমনে চারটি কৌশল গ্রহণ করে মোদি সরকার। বিশেষ মর্যাদা বাতিল হওয়ায় কাশ্মীর এখন আর কোনো প্রদেশ নয়। কেননা প্রদেশটি ভেঙে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ নামে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের প্রস্তাব দেশটির রাজ্যসভায় পাস হয়েছে।
কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি, ওমর আব্দুল্লাহসহ প্রথম সারির অনেক রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেফতারের পর বন্দি করে রাখা হয়েছে। ফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন, কারফিউ জারির পাশাপাশি বেশকিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এই উপত্যকায়। কাশ্মীরিদের ক্ষোভ ঠেকাতে বিক্ষোভকারীদের চারটি দলে ভাগ করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে নতুন কৌশল নির্ধারণ করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার।
প্রথম দলে রয়েছেন, সরকারি কর্মচারী কিংবা এ জাতীয় কর্মজীবী মানুষ; যারা কাশ্মীরের ক্ষতি করতে পারেন বলে মনে করা হয় না। এই শ্রেণির কাশ্মীরিরা বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে চলাফেরা ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করেন। কিন্তু আড়ালে সহিংসতা উসকে দেয়ার ক্ষেত্রেও বিক্ষুব্ধ মানুষকে প্ররোচনা দেন তারা। মোদি সরকারের চোখে বিশেষ শ্রেণির এমন কাশ্মীরিরা স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনৈতিক দল হুরিয়াত কিংবা মূলধারার কোনো রাজনীতিবিদও হতে পারেন। সরকারি কৌশল অনুযায়ী, উপত্যকাকে শান্ত রাখতে তাদের আটক করা হবে। তবে যদি তাদের দ্বারা বিশৃঙ্খলা তৈরির কোনো শঙ্কা না থাকে তাহলে মুক্ত করে দেয়া হতে পারে।
অন্যদিকে কাশ্মীরের রাজনীতিক ও বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের গৃহবন্দি করে রাখার ব্যাপারটি চলমান থাকবে।
দ্বিতীয় দলে নিরাপত্তাকর্মীদের লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে মারা কাশ্মীরিরা রয়েছেন। এই শ্রেণিতে যারা পড়েছেন, তাদের বেশিরভাগই কম বয়সী, তরুণ। তাদের জন্য সরকার একটি কৌশল অবলম্বন করেছে। যার নাম দেয়া হয়েছে কমিউনিটি বন্ড। যেখানে ২০টি পরিবার যুক্ত থাকবে। তাদের মধ্যে পরিচিত একজন একটি বন্ডে স্বাক্ষর করবেন। সেখানে আর কখনো পাথর ছোড়া হবে না মর্মে নিশ্চয়তা দেবেন এই পরিবারের সদস্যরা।
তৃতীয় দলে ফেলা হয়েছে সন্ত্রাসীদের। প্রশাসন মনে করছে যে, সীমান্ত এবং লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) দেখভালের বিষয়টি নিশ্চিত করবে সেনাবাহিনী। যেসব সন্ত্রাসী পাকিস্তান থেকে কাশ্মীরে প্রবেশ করে হামলা চালায় তাদের প্রতিরোধের কাজ করবে তারা। এছাড়া সরকার পাঞ্জাব এবং জম্মুর সীমান্ত নিরাপত্তার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে।
চতুর্থ দলে রয়েছে সমাজে অন্য মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা রয়েছেন এমন মানুষ, বিশেষ করে ধর্মীয় নেতারা। সূত্র বলছে, সরকার ধর্মীয় এসব নেতাকে চিহ্নিত করে নজরদারি করবে। সরকার মনে করছে এসব নেতা সহিংসতা এবং অস্থিরতা উসকে দেন। কর্তৃপক্ষ যদি কাউকে সন্দেহ করে তাহলে দ্রুত তাদের গ্রেফতার করা হবে।
গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশ্মীরে চরম অস্থিরতা চলছে। সেখানকার মানুষ খাবার পাচ্ছে না, রাস্তায় বের হতে পারছে না। গত ৫ আগস্টের পর চার শতাধিক আঞ্চলিক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ, ওমর আবদুল্লাহ এবং মেহবুবা মুফতি গৃহবন্দি রয়েছেন।
তবে দীর্ঘ দুই সপ্তাহ পর কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছে। শনিবার প্রাথমিকভাবে ৫০ হাজার মোবাইল ও টেলিফোন সংযোগ পুনরায় প্রদান করা হয়েছে। তবে অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ও নজরদারি ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে। ধীরে ধীরে নিষেধাজ্ঞা তোলা হবে বলে জানিয়েছে সরকার।