নিরাপত্তার জন্য মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়েছে শ্রীলংকায়!
শ্রীলংকায় ইস্টার সানডেতে গির্জা ও বিলাসবহুল হোটেলে আত্মঘাতী হামলার ঘটনায় নিহত হয়েছেন প্রায় আড়াইশ মানুষ। আর এ হামলার জন্য দায়ী করা হয় একটি মুসলিম মৌলবাদী গোষ্ঠীকে। ‘ইস্টার হামলার পর অমুসলিমরা আমাদের সবাইকে সন্ত্রাসী হিসেবে দেখতে শুরু করেছে’, বলছিলেন এমএইচএম আকবর খান।
এরপর পুরো রোজার মাস জুড়ে মুসলিমরা যখন রোজা পালন করছিলো, তখন উগ্রবাদীদের কাছ থেকে দূরে থাকার জন্য শ্রীলংকার মুসলিমদের ছোট একটি গ্রুপ নিয়েছে একটি ভিন্ন পদক্ষেপ। তারা একটি মসজিদ ধ্বংস করেছে।
আকবর খান মাদাতুগামার প্রধান মসজিদের একজন ট্রাস্টি। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, কেন এমনটি করলো সেখানকার মুসলিমরা। আকবর খান বলেন, ইস্টার হামলার পর পুলিশ কয়েক দফা তল্লাশি করেছে মসজিদটিতে। এতে মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। মুসলিমদের সাথে অন্য সম্প্রদায়গুলোর অবিশ্বাসও বেড়ে যায়।
যে মসজিদটি ধ্বংস করা হয় সেটিতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ন্যাশনাল তাওহীদ জামাত বা এনটিজে সদস্যরা বেশি যাতায়াত করতো বলে মনে করা হয়। পরে এনটিজে পরিচালিত ওই মসজিদটি সিলগালা করে বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। মাদাতুগামার ওই মসজিদটি ঐতিহাসিক, ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক-কোন কারণেই খুব বেশি উল্লেখযোগ্য নয়।
তিনি বলেন, ‘আমাদের শহরে অন্য যে মসজিদ আছে সেটি মুসলিম পরিবারগুলোর জন্য যথেষ্ট। কয়েক বছর আগে অন্য একটি গোষ্ঠী প্রশ্নবিদ্ধ মসজিদটি নির্মাণ করে।’
পরে মে মাসে পুরনো মসজিদের সদস্যরা একটি সভায় মিলিত হয়ে সর্বসম্মত হয়ে বিতর্কিত মসজিদটি ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে স্থানীয়রা সেটি ধ্বংস করে। তিনি বলেন, ‘মিনার, নামাজ কক্ষ ধ্বংস করে ভবনটি পুরনো মালিকের হাতে দিয়ে দেয়া হয়েছে।’
শ্রীলংকায় ৭০ ভাগ মানুষ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। আর মুসলিম আছে দশ ভাগের মতো। মসজিদ ধ্বংস করে ফেলার সিদ্ধান্ত সবাই ভালোভাবে নেয়নি। শ্রীলংকায় মুসলিমদের সর্বোচ্চ তাত্ত্বিক কর্তৃপক্ষ অল সিলন জামিয়াতুল উলামা বলছে, প্রার্থনার জায়গার ক্ষতি করা উচিত নয়। ‘মসজিদ আল্লাহর ঘর। এর ধ্বংস বা ক্ষতি করা ইসলামী চেতনার পরিপন্থী’, সংস্থাটি বলেছে এক বিবৃতিতে।
শ্রীলংকা সরকার বলছে, দেশটিতে প্রায় দুই হাজার ৫৯৬টি রেজিস্টার্ড মসজিদ আছে। শ্রীলংকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড: আ রামিজ বলছেন, মসজিদ ধ্বংসের পন্থা বেছে নিলে এমন শত শত মসজিদ ধ্বংস করতে হবে।
তার ধারণা, দশ থেকে পনের শতাংশ মসজিদ উগ্রবাদী গোষ্ঠী গুলো চালায়। কারণ গত দু’দশকে বেশ কিছু গোষ্ঠী ওয়াহাবী মতাদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে। তিনি বলছেন, অনেকদিন ধরেই শ্রীলংকার মুসলিমরা উগ্রবাদীদের সহ্য করে আসছিলো। কিন্তু তারা চুপ থাকায় উগ্রবাদীরা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
প্রচণ্ড গরমেও মুসলিম নারীরা এখন বেশি করে শরীর ও মুখমণ্ডল সম্পূর্ণ ঢেকে চলাফেরা করছে।তবে বোমা হামলার ঘটনার পর মুখ ঢেকে রাখায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। ওই হামলার পর দেশটিতে এখনো জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে, যার অবসান হবে আগামী ২২শে জুন। কিন্তু দেশটির মুসলিমরা সবদিক থেকেই বেশ চাপের মধ্যে আছে।
ওই ঘটনার পর বহু জায়গায় মুসলিমদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হয়েছে। ড: রামিজ বলছেন, তিনি নিজেও হেনস্থার শিকার হয়েছেন।
ওদিকে রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু সরকার থেকে মুসলিম মন্ত্রীদের সরিয়ে নেয়ার দাবিতে অনশনের ডাক দিয়েছে। তবে মাদাতুগামায় কিছু পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
‘মসজিদটি ধ্বংসের পর আমাদের কম ক্ষোভের শিকার হতে হচ্ছে। সিংহলিজ ও তামিলরা আমাদের প্রতিবেশী হিসেবে সম্পৃক্ত করছে ফলে উত্তেজনাও কমছে।’ তারা বলেন। খবর: বিবিসি বাংলা।