২৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:৩০

ব্রিটেনে শিশুদের যৌন নির্যাতনের দায়ে বাংলাদেশি হাফেজের ১২ বছরের কারাদণ্ড

হাফেজ আশরাফ উদ্দিন  © সংগৃহীত

ব্রিটেনে দীর্ঘ সময় ধরে শিশু শিক্ষার্থীদের যৌন নির্যাতনের দায়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ধর্মীয় শিক্ষক হাফেজ আশরাফ উদ্দিনকে (৭১) ১২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন সেখানের আদালত। খবর বিবিসি।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে বার্কিংয়ের উইভেনহো রোডের বাসিন্দা আশরাফ উদ্দিন তার তত্ত্বাবধানে থাকা ছয়জন ছাত্রীর ওপর ধারাবাহিকভাবে যৌন নিপীড়ন চালাতেন। সে সময় ভুক্তভোগীদের বয়স ছিল ৭ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। 

স্থানীয় কমিউনিটিতে হাফেজ ও ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে আশরাফ উদ্দিনের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা ছিল। প্রসিকিউশনের বক্তব্য, সামাজিক মর্যাদাকেই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তিনি প্রায় দেড় দশক ধরে অপকর্ম চালিয়ে যান এবং ভুক্তভোগীদের মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য করেন।

এ বছরের শুরুতে ইপসুইচ ক্রাউন কোর্টে তার বিচার শুরু হয়। সাতজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে মোট ২২টি যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। এর মধ্যে চারটি অভিযোগে একাধিকবার অপরাধ করার প্রমাণ পাওয়া যায়, ফলে মোট ঘটনাসংখ্যা দাঁড়ায় অন্তত ২৯টি।

চার সপ্তাহব্যাপী বিচার শেষে গত জুনে জুরি বোর্ড ছয়জন ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে ১৩টি ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করে। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি ‘অত্যন্ত গুরুতর’ অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়।

সাজার রায়ে বিচারক তাকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেন এবং আজীবনের জন্য ‘সেক্স অফেন্ডারস রেজিস্টার’-এ অন্তর্ভুক্তির নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেন কোনো শিশুর ক্ষতি করতে না পারেন—সে জন্য তার ওপর অনির্দিষ্টকালের ‘সেক্সুয়াল হার্ম প্রিভেনশন অর্ডার’ জারি করা হয়েছে।

সাজার সময় বিচারক বলেন, ‘পরিবারগুলো ধর্মীয় শিক্ষার জন্য গভীর বিশ্বাস নিয়ে তাদের কন্যাসন্তানদের আপনার কাছে পাঠিয়েছিল। আপনি সেই পবিত্র বিশ্বাসের জঘন্য অপব্যবহার করেছেন।’

সাউথ সেফগার্ডিং ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের ডিটেকটিভ ইন্সপেক্টর ডোনা হপার ভুক্তভোগী নারীদের সাহসিকতার প্রশংসা করে বলেন, ‘সামাজিক লজ্জা ও অপরাধীর প্রভাবশালী অবস্থানের কারণে তারা বহু বছর মুখ খোলার সাহস পাননি। দীর্ঘ সময় পরও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব—এই রায় তার প্রমাণ।’

পুলিশ জানায়, আশরাফ উদ্দিন হয়তো ভেবেছিলেন বহু বছর পেরিয়ে যাওয়া এবং নিজের বয়সের কারণে তিনি শাস্তি এড়াতে পারবেন; কিন্তু ভুক্তভোগীদের দৃঢ়তার কারণে শেষ বয়সে তাকে কারাগারেই যেতে হচ্ছে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি