পড়াশোনা বন্ধ হতে চলেছিল শিশুটির, একমাত্র যাত্রী নিয়ে ৩ বছর চলল ট্রেন
ট্রেনে করেই স্কুলে যেতে হতো কানা হারাদা নামের এক স্কুল ছাত্রীর। ওই ছাত্রী ছাড়া আর কোনো যাত্রী না থাকায় ট্রেন চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। এ খবর শুনার পর ট্রেন কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করা হলে শুধুমাত্র ওই ছাত্রীর জন্য তিন বছর চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জানা গেছে, ঘটনাটি জাপানের হোক্কাইডো দ্বীপের প্রত্যন্ত গ্রাম কিউ-শিরাটাকির, গ্রামটিকে স্থানীয়রা ‘মরা’ গ্রাম নামে ডাকত। কারণ, সেখানকার জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৪০ জন।
২০১৩ সালের দিকে যাত্রীর সংখ্যা কমে যাওয়া ও লোকসানের ফলে জাপান রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ওই গ্রামের স্টেশনটি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ছিল সেই ছোট্ট ট্রেনটি। স্টেশন বন্ধ হলে স্কুলে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে একমাত্র শিক্ষার্থী কানা হারাদার। পরে ‘আমার পড়াশোনা যেন বন্ধ না হয়’ এ কথা উল্লেখ করে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে একটি আবেদন করে ওই ছাত্রী।
এরপরই আবেদনটি বিবেচনায় নিয়ে ওই গ্রামের রেল স্টেশনটি চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই ছাত্রীর স্কুলের পড়াশোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন চলবে বলে জানায় ঊর্ধ্বতনরা। এতে টানা তিন বছর সকাল ও বিকাল ওই শিক্ষার্থীকে স্কুলে পৌঁছে দিতে ‘মরা গ্রামের’ কিউ-শিরাটাকি স্টেশনের ওই রুটে চলত ট্রেনটি। প্রতিদিনই একাই ওই ছাত্রী ট্রেনটি ব্যবহার করত বলে জানা গেছে।
এদিকে ২০১৬ সালের মার্চ মাসে কানা হারাদা তার স্কুলজীবন শেষ করে। সেই একই মাসে কিউ-শিরাটাকি স্টেশনটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয় জাপান রেলওয়ে। যেন হারদার রেলের অধ্যায়টিও শেষ হয়ে যায়।
জাপানের রেল মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র সেই সময় বলেছিলেন, ‘our decision was simple, education comes before economics. If one student wants to study, we cannot be the reason she stops.’ (আমাদের সিদ্ধান্ত সহজ ছিল, শিক্ষা সব সময় অর্থনীতির আগে। যদি একজন শিক্ষার্থীও পড়তে চায়, আমরা যেন তার পথে বাধা না হই।)
সংবাদ মাধ্যমে স্থানীয় এক বাসিন্দা ইচিরো তাকামুরা বলেছিলেন, স্টেশনটা বন্ধ হয়ে গেলেও, আমরা জানি, এর গল্প চিরকাল বেঁচে থাকবে। এই স্টেশন আমাদের শেখায়, একজন মানুষের জন্যও যদি কিছু করা যায়, সেটাই আসল উন্নতি।