ড্রোন বানাতে ইসরায়েলকে যন্ত্রাংশ দিচ্ছে ফরাসি প্রতিষ্ঠান
ইসরায়েলি অস্ত্র কোম্পানি এলবিট সিস্টেমসকে ড্রোন তৈরির যন্ত্রাংশ পাঠাচ্ছে ফরাসি প্রতিষ্ঠান সারমাট। এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। জানা গেছে, ফ্রান্সের বিমান ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সারমাট ইসরায়েলি অস্ত্র নির্মাতা এলবিট সিস্টেমসের কাছে ড্রোনের যন্ত্রাংশ রপ্তানি করছে।
আগামী ২০ অক্টোবর ফ্রান্স থেকে এক চালান ইসরায়েলে পাঠানো হবে, যেখানে এলবিটের যুদ্ধবিমান ড্রোনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ থাকবে। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এটি ফরাসি কোনো কোম্পানির মাধ্যমে ইসরায়েলি অস্ত্র শিল্পে উপাদান সরবরাহের চতুর্থ ঘটনা বলে জানা গেছে।
গেল বুধবার প্যারিসের শার্ল দ্য গল বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক পার্সেল পরিবহন কোম্পানি ইউপিএস আটটি প্যাকেজ গ্রহণ করে। ওই প্যাকেজগুলোতে ছিল সারমাট নির্মিত অল্টারনেটর, যা মূলত এয়ারোস্পেস, প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ খাতে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক মোটর যন্ত্রাংশ।
যে ধরনের অল্টারনেটর ইসরায়েলে পাঠানো হচ্ছে তা হারমেস ৯০০ ও হারমেস ৪৫০ ড্রোনে ব্যবহার করা হয়। এই দুই মডেলই গাজায় ইসরায়েলি হামলায় বহুবার ব্যবহৃত হয়েছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দুই বছরে সারমাট এলবিট সিস্টেমসকে ২৯টি অল্টারনেটর ও ১৭১টি অ্যাকচুয়েটর সরবরাহ করেছে। অ্যাকচুয়েটর হলো বৈদ্যুতিক মোটরচালিত ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ, যা ড্রোনের স্থিতিশীলতা ও লক্ষ্যনির্ভুল নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ফরাসি সরকার কি ২০ অক্টোবরের এই নতুন চালান ও আগের সরবরাহ সম্পর্কে অবগত কিনা, এ বিষয়ে ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অর্থনীতি মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাওয়া হলেও তারা কোনো মন্তব্য করেনি।
ফরাসি কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরেই সারমাটের তৈরি অ্যাকচুয়েটরকে “সামরিক বা দ্বৈত-ব্যবহারের পণ্য” হিসেবে তালিকাভুক্ত করেনি। ফলে এসব উপাদান রপ্তানির জন্য কোনো বিশেষ অনুমোদন বা এক্সপোর্ট লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়নি।
প্রসঙ্গত, ফ্রান্স থেকে ২০২৪ সালে ইসরায়েলে ৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি করা হয়েছে। পাশাপাশি “দ্বৈত-ব্যবহারের” পণ্যের বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ৮৬ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তির স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে ফ্রান্স নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের ঝুঁকি থাকা দেশগুলোতে অস্ত্র বিক্রির সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক অব্যাহত রেখেছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, ইসরায়েলি সামরিক ড্রোন—বিশেষ করে হারমেস সিরিজ—গাজায় বেসামরিক জনগণের ওপর হামলায় বারবার ব্যবহৃত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ফরাসি কোম্পানির সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ওই ড্রোনের যন্ত্রাংশ সরবরাহ করা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের সম্ভাবনা তৈরি করছে।
প্যারিসভিত্তিক কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন ইতোমধ্যেই সারমাট ও অন্যান্য ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানিয়েছে। তাদের মতে, ফরাসি সরকারের অনুমোদন বা নীরবতা—দুটিই ইঙ্গিত দেয় যে ইউরোপীয় দেশগুলো এখনো ইসরায়েলের সামরিক কর্মকাণ্ড থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে।