১০ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২২

শান্তিতে নোবেলের জন্য ট্রাম্পকে যেসকল রাষ্ট্র সুপারিশ করেছে

ট্রাম্প  © সংগৃহীত

নরওয়ের রাজধানী অসলোতে আজ বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করবে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি। বরাররই শান্তিতে নোবেল পুরস্কার নিয়ে ট্রাম্পের প্রবল আগ্রহ দেখা গেছে। ট্রাম্প নিজ থেকে অনেকবার শান্তিতে নোবেলের দাবি করেছেন। বিশ্বজুরে ৭টি সংঘাত বন্ধের দাবি করে এ পুরস্কারের সবচেয়ে বড় দাবিদার হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন তিনি। শুধু ট্রাম্প নিজেই নয় বিশ্বের বেশকিছু দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, রাজনীতিবিদ ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল দেওয়ার জন্য মনোনীত করেছেন।

ইসরায়েল

শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম সুপারিশ করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। জনশ্রুতি আছে, ট্রাম্পেরও দীর্ঘদিনের ইচ্ছে শান্তিতে নোবেল পাওয়া। সম্প্রতি এক বৈঠকে নোবেল পুরস্কার কমিটিকে পাঠানো চিঠির একটি কপি ট্রাম্পকে উপহার দেওয়ার সময় নেতানিয়াহু বলেন, ‘তিনি (প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প) একের পর এক দেশে, একের পর এক অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করছেন’।

ইউক্রেন

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি চুক্তি করতে সহায়তা করলে ইউক্রেন ট্রাম্পকে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করবে। এক বিবৃতিতে জেলেনস্কি বলেন, ‘যদি ট্রাম্প বিশ্বকে বিশেষ করে ইউক্রেনের জনগণকে — এমন এক যুদ্ধবিরতির সুযোগ দেন, তাহলে হ্যাঁ, তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা উচিত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি আজ শুক্রবার নোবেল শান্তি পুরস্কার না জেতেন, তাহলে ইউক্রেনের সমর্থনে তিনি আগামী বছর আরেকটি সুযোগ পেতে পারেন। আমরা ইউক্রেনের পক্ষ থেকে তাকে মনোনীত করব।’

তাইওয়ান

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-টে মঙ্গলবার বলেছেন, যদি ট্রাম্প চীনকে দ্বীপটির বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ থেকে বিরত রাখতে রাজি করাতে পারেন, তবে তিনি এই সম্মানের যোগ্য

পাকিস্তান

পাকিস্তানও গত জুনে ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবলে দেওয়ার জন্য সুপারিশের কথা জানায়। কারণ হিসেবে দেশটি জানায়, এর আগে মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় সহায়তা করেছিলেন ট্রাম্প। পাকিস্তান ২০ জুন ঘোষণা করেছিল যে তারা ট্রাম্পকে মনোনয়ন দেবে। গত মে মাসের ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের সময় তার কূটনৈতিক পদক্ষেপের পর পাকিস্তান এ ঘোষণা দেয়। পাকিস্তান সরকার ট্রাম্পকে 'নির্ধারক কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ ও গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের জন্য' সম্মান জানায়।

কম্বোডিয়া

কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেট  ৭ আগস্ট ঘোষণা করেন যে তিনি ট্রাম্পকে মনোনয়ন দিয়েছেন। জুলাইয়ে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে পাঁচদিনব্যাপী সীমান্ত সংঘাতের পর স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি এ ঘোষণা দিয়েছেন। এই সংঘাতে উভয় পক্ষের ৪০ জনের বেশি নিহত হন এবং প্রায় তিন লাখ মানুষ তাদের বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। 

মানেট বলেন, '[ট্রাম্পের] কূটনীতির মাধ্যমে শান্তির ধারাবাহিক প্রচেষ্টা আলফ্রেড নোবেলের দর্শনের সঙ্গে পুরোপুরি সংগতিপূর্ণ। তাদের মতো যারা আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃত্ব ও শান্তির উন্নয়নে অসাধারণ অবদান রেখেছেন এ পুরস্কার তাদের সম্মান জানায়।'

আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান

আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানও ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়নের পক্ষে সমর্থন প্রকাশ করেছে। ৮ আগস্ট হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত এক শীর্ষ বৈঠকের পর আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাসিনিয়ান এবং আজারবাইজানের রাষ্ট্রপতি ইলহাম আলিয়েভ এক যৌথ চুক্তিতে পৌঁছান। উভয় নেতা মার্কিন পরিচালিত ফ্রেমওয়ার্কের প্রশংসা করেন এবং বলেন যে তারা ট্রাম্পের মনোনয়নের পক্ষে সমর্থন দেবেন।

রুয়ান্ডা

রুয়ান্ডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অলিভিয়ার নডুহুংগিরেহ এবং গ্যাবনের রাষ্ট্রপতি ব্রাইস ওলিগুই নগুয়েমা উভয়ই প্রকাশ্যে ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। এটি মূলত রুয়ান্ডা ও কঙ্গোর প্রজাতন্ত্রের মধ্যে দশক ধরে চলা সংঘাত সমাধানে ট্রাম্পের অবদানের জন্য।

ব্রেইটবার্ট নিউজের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে নডুহুংগিরেহ বলেন, 'যে কেউ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পসহ, এই সংঘাতকে গুরুত্বপূর্ণভাবে সমাপ্ত করতে সাহায্য করবে, সে নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য। একেবারেই।'

জর্জিয়া

জর্জিয়ার রিপাবলিকান প্রতিনিধি বাডি কার্টার একটি চিঠি জমা দিয়েছেন, যাতে ট্রাম্পকে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে জুন মাসের যুদ্ধবিরতি ফ্রেমওয়ার্ক সম্পর্কিত কার্যক্রমের জন্য মনোনয়নের সুপারিশ করা হয়েছে।

যে সকল রাজনীতিবিদ মনোনয়ন দিয়েছেন

ইয়ার লাপিদ

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি করায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইসরায়েলের বিরোধী দলনেতা ইয়ার লাপিদ। ট্রাম্পকে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে অন্য যে কারও চেয়ে ট্রাম্প নোবেল পুরস্কার সবচেয়ে বেশি প্রাপ্য। ইসরায়েলিদের উচিত, তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।

নিউইয়র্কের রিপাবলিকান প্রতিনিধি ক্লাউডিয়া টেননি এই বছর ট্রাম্পকে দুইবার মনোনয়ন করেছেন এবং বলেছেন, তিনি ট্রাম্প পুরস্কার না পাওয়া পর্যন্ত এটি চালিয়ে যাবেন। তিনি এক্স-এ লিখেছেন, 'তিনি আধুনিক কোনো নেতার চেয়ে বিশ্ব শান্তির জন্য বেশি কাজ করেছেন।'

রিপাবলিকান সিনেটর বার্নি মোরেনো (ওহাইও) এবং মার্শা ব্ল্যাকবার্ন (টেনেসি) ও প্রকাশ্যে ট্রাম্পকে মনোনয়নের পক্ষে আহ্বান জানিয়েছেন।

নরওয়ের আইন বিষয়ক প্রফেসর অ্যান্টা আলন-বেক ফেব্রুয়ারির শুরুতে ট্রাম্পকে মনোনয়ন দিয়েছেন, গাজার যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি মুক্তি চুক্তি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টার জন্য।